কক্সবাজার জেলার দর্শনীয় স্থান গুলো কি কি? প্রতিটি স্থানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

কক্সবাজার জেলার দর্শনীয় স্থান গুলো কি কি? প্রতিটি স্থানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ আপনি বাংলাদেশের যেখানেই যান না কেন আপনি সবুজে ঘেরা দিগন্ত দেখতে পাবেন তা হোক না কেন ছোট একটি গ্রাম বা পাহাড়ে চড়া সেই আলোকে সবুজ বর্ণ আমাদের পতাকা দেবতার স্থান পেয়েছে তবে সবুজের সাথে যে বাংলাদেশ আর কিছু নেই তা বলাটা ভুল হবে বাংলাদেশে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত পৃথিবী থেকে হাজারো দর্শক প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ।

শুধু প্রবাসী নয় অনেক বাঙালির পছন্দের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করে কক্সবাজার বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ মানুষের কাছে সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাওয়া ভ্রমণের গন্তব্য স্থল হচ্ছে কক্সবাজার আসুন কক্সবাজারে টুরিস্ট স্পট গুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

ইনানী বিচ বা ইনানী সমুদ্র সৈকত

ইনানী বিচ অনেক বিখ্যাত একটি সমুদ্র সৈকত| কক্সবাজার থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইনানী বীচ। ইনানী সমুদ্র সৈকত এর প্রধান আকর্ষণ হলো এখানকার প্রবলতট। এখানে ভ্রমণ করতে আসা মানুষের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে সমুদ্র সৈকতের প্রবাল গুলোর বৈচিত্র। অনেক মানুষ এখানে এসে মনে করেন যে তারা সেন্টমার্টিন্সে চলে এসেছেন কারণ এখানকার প্রবালগুলো অনেকটা সেন্টমার্টিনস এর প্রবাল এর মত। সাগরের ঢেউ যখন প্রবল গুলোর উপর আছড়ে পড়ে তখন মনে হয় দর্শকেরা সমুদ্রের নিম্নতম স্তর দেখতে পাচ্ছে কারণ এখানকার পানি ভীষণ স্বচ্ছ।

এর সাথে জীব-বৈচিত্র ও কম যায় না। বিচ এর আশেপাশে হাজার হাজার লাল কাঁকড়া অথবা রেড ক্র্যাব এর উপস্থিতি। তারা সমুদ্রের সাদা বালির উপর চারো দিকে দৌড়ে বেড়ায়। সমুদ্রের চারপাশের এলাকা পাহাড় বেষ্টিত। এমনকি ইনানী বিচের পৌঁছানোর রাস্তাটিও পাহাড় ঘেরা। সমুদ্র এবং পাহাড়ের এই অপূর্ব মিল আপনার চোখকে শীতলতা দিতে সক্ষম। যারা খোলা আবহাওয়ায় ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এখানে রয়েছে খোলা জিপ। এগুলো আপনি খুব কম টাকায় ভাড়া পাবেন। প্রকৃতি উপভোগ করার জন্য এটি সেরার মাধ্যম বলা চলে।

পর্যটকদের জন্য একটি তথ্য দেওয়া যায় যেটা আপনার পরবর্তীতে উপকারে আসতে পারে তা হচ্ছে জোয়ারের সময় ইনানী বিচে না আসা। কারণ উচ্চ জোয়ারের পানির কারণে আপনি হয়তো প্রবালতট দেখতে পাবেন না। এর জন্য সবচাইতে ভালো ভ্রমণের সময় হচ্ছে ভাটার সময় কারন এই সময় পানীয় যেমন স্বচ্ছ থাকে ঠিক তেমনি আপনি সমুদ্রের সব সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এমন কি আপনি মাছদের সাঁতার কাটাও দেখতে পারবেন। এটি শুটিং লোকেশন হিসেবেও বেশ পরিচিত। আপনি যদি ছবি তুলতে ভালোবাসেন সে ক্ষেত্রে এটি একটি উপযোগী স্থান। কক্সবাজারের দৃষ্টিনন্দন স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

হিমছড়ি জলপ্রপাত

হিমছড়ি জলপ্রপাত হলো বাংলাদেশের একমাত্র ঠান্ডা জলের জলপ্রপাত যা কক্সবাজার-এর হিমছড়ি নামক শহরে অবস্থিত। এই স্থানটি কক্সবাজারের কেন্দ্র হতে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে বেরাতে আসেন। এখানকার একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হচ্ছে মেরিন ড্রাইভ; এর একপাশে সমুদ্র এবং অন্য পাশে পাহাড়। আপনি যদি কক্সবাজার বেড়াতে আসেন এবং হিমছড়ি জলপ্রপাত না দেখে চলে যান তাহলে আপনি হয়তো অনেক বড় একটি সুযোগ হাতছাড়া করবেন। কারণ এই জলপ্রপাত সত্যিকারভাবে মনমুগ্ধকর। হিমছড়ির সমুদ্র সৈকত বিখ্যাত খুব নীরব একটি স্থান। শান্ততা, শীতলতা এবং নীরবতা এই সৈকত এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।

এখানে রয়েছে একটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণাগার এবং একটি জাতীয় উদ্যান যা 580 হেক্টর আয়তন জুড়ে বিস্তৃত। প্রাণীবৈচিত্র্য দিয়ে ঠাসা এই পার্কে রয়েছে বৈচিত্র্যময় পরিবেশ এবং ঠিক পাশে আপনি পেয়ে যাবেন বেশকিছু রেস্ট হাউস। এই রেস্ট হাউসগুলো পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। হাউজগুলো থেকে সমুদ্রসৈকতে পুরোপুরি দেখা যায়। সাথে রয়েছে সামুদ্রিক খাবারের বৈচিত্র। হিমছড়ি জলপ্রপাত সবচাইতে সুন্দর বর্ষাকালে। তাই কেউ যদি জলপ্রপাত এর প্রকৃত সৌন্দর্য সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করতে চান তাহলে আপনার ভ্রমণের সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। বর্ষাকালে জলপ্রপাতটিকে মনে হয় জীবিত। রিসোর্ট গুলো থেকে সামুদ্রিক দৃশ্য দর্শকদের স্বর্গীয় অনুভূতি এনে দিতে পারে।

ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক

ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক কক্সবাজার থেকে এক ঘন্টার পথ। এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাঝামাঝি অবস্থিত। এই সাফারি পার্কে দেখতে পাবেন বৃহৎ প্রাণীবৈচিত্র্য। পার্কের বৃহৎ এলাকা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, বাঘ, ভাল্লুক, হনুমান, বন্য শূকর, বহু প্রজাতির প্রাখী, জলহস্তী, হাতি, মাছ ধরা বিড়াল, চিতাবাঘ ইত্যাদি। পার্কের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।

পর্যবেক্ষণ টাওয়ার গুলো থেকে আপনি চারদিকের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন এবং প্রাণীদের বিচরণ সহজে লক্ষ্য করতে পারবেন। শিশু-কিশোরদের জন্য এটি এক বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা কারণ চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের অসার গতিবিধির চাইতে প্রাকৃতিক পরিবেশের তাদের জীবনযাত্রা অনেকটাই আলাদা; যা তাদের প্রানীগুলোর সম্পর্কে নতুন বাস্তবতা তুলে ধরে।

বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় গাছ, ঔষধি গাছ এবং বিরল প্রজাতির বৃক্ষ সমূহ। এই পার্কের আয়তন প্রায় ৯০০ হেক্টর। কিছু ভয়ঙ্কর প্রাণী খাঁচায় বন্দি রাখা হলেও, বেশিরভাগ প্রাণী বনে বিচরণরত। পার্কে ভ্রমণের জন্য অনেক খোলা জায়গা রয়েছে এবং পাশাপাশি একটি বিশ্রামাগার ও ডরমেটরি রয়েছে। এ সাফারি পার্কটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম ইকো ট্যুরিজম স্পট হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে।

এই পার্কের প্রধান ফটকে পাবেন পার্কের মানচিত্র এবং বিভিন্ন স্থানের বর্ণনা। অনেকেই পার্কে বনভোজনের আয়োজন করে এবং পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত পার্টি খোলা থাকে। প্রতিদিন সকাল 9 টা থেকে সন্ধ্যা 6 টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য এটি উন্মুক্ত। পার্কে প্রবেশের জন্য প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকেট মূল্য হচ্ছে 10 টাকা এবং শিশুদের জন্য 5 টাকা। আপনার যদি অতিরিক্ত কোনো তথ্যের দরকার পড়ে তাহলে অনুগ্রহ করে 031-684 420, এই নম্বরে কল করতে পারেন এবং জেনে নিতে পারেন আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য।

লাবনী সমুদ্র সৈকত

লাবনী সমুদ্র সৈকত হচ্ছে কক্সবাজারে সবচাইতে জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। কক্সবাজারের সবগুলো সমুদ্র সৈকত এর মধ্যে সবচাইতে আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে এটি; দেশ-বিদেশের হাজার- হাজার মানুষ এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। এটিকে কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত বলা হয়। সৈকতের পাশে পাবেন বিভিন্ন ধরনের মাছের এবং ঝিনুকের বাজার। এখানে রয়েছে ঝিনুকের বৈচিত্র যা খুবই কম দামে আপনি কিনতে পারবেন এবং একই সাথে এ বাজারে পাবেন মায়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে আসা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে গঠিত বৈচিত্র্যময় বাজার। এ বাজার মনোহারী দ্রব্যের বৈচিত্র দিয়ে ঠাসা।

সবচাইতে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে প্রতিদিনের সূর্যাস্ত। সমুদ্র সৈকত ধরে হেঁটে পূর্বদিকে হিমছড়ি পর্যন্ত যাওয়া যায় আপনি যতই যেতে থাকুন না কেন মনে হবে এই সৈকত যেন আর শেষ হবে না বছরের যেকোনো মৌসুম যেমন শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা বসন্ত প্রতিটি ঋতুতেই এই সৈকতে রুপ যেন অপূর্ব যুগ যুগ ধরে এটি বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যটনকেন্দ্র পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক রিসোর্ট, হোটে্‌ মোটেল এবং আবাসিক বাসভবন যা আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভাড়া নিতে পারেন। এছাড়াও রয়েছে আরও অন্যান্য অনেক সুবিধা যেমন খাবার, আপ্যায়ন, উল্লাস এবং বিলাসীতার বস্তুসমূহ।

আপনি ভ্রমণ স্থলে যাবার পূর্বে আগে থেকেই আপনার অবস্থানের জন্য হোটেল হোটেল ভাড়া করতে পারেন। এই জন্য কিছু ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারেন। নিচে কিছু ওয়েবসাইটের লিংক আছে যেসব থেকে আপনি তুলনামূলকভাবে কম মূল্যে আপনার হোটেল বুক করতে পারেন।

সেন্ট মার্টিন

সেন্ট-মার্টিন পৃথিবীর একটি বিখ্যাত প্রবাল দ্বীপ। এই দ্বীপটি তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণরূপে প্রবাল দিয়ে। এই দ্বীপে পৌঁছানোর জন্য কক্সবাজার থেকে আপনি জাহাজ এর সাহায্য নিতে পারেন অথবা ছোট নৌকো বা ট্রলার ভাড়া করতে পারেন। খুব সীমিত মূল্যের বিনিময়ে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন সেন্টমার্টিন্সে। সেন্টমার্টিন্সে বড় বড় হোটেল না থাকলেও আপনার থাকার জন্য রয়েছে কিছু আবাসিক বাসভবন, যেখানে আপনি আপনার মত করে প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকতে পারবেন।

এই দ্বীপটিকে নারিকেল জিঞ্জিরা হিসেবে অনেকে চেনে কারণ এই দ্বীপটি নারিকেল গাছ দিয়ে ভর্তি এবং সাথে রয়েছে আরও অন্যান্য অনেক প্রজাতির গাছ। জনাকীর্ণ মানবসমাজ হতে দূরে গিয়ে যদি সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজেকে খুঁজে পেতে চান তবে সেন্টমার্টিনস হচ্ছে আপনার উপযুক্ত গন্তব্য স্থল এখানে পাবেন প্রচুর শুটকি নারিকেল শামুক ঝিনুক প্রাকৃতিক বৈচিত্র এবং আন্তরিক আতিথেয়তা।

About শাহরিয়ার হোসেন 4780 Articles
Shahriar1.com ওয়েবসাইটে আপনার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় যা কিছু দরকার সবকিছুই পাবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*