আজ আমরা যে ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব সেটি নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপযোগী আজকের ভাব সম্প্রসারণ। তাহলে চলুন আজকের ভাব-সম্প্রসারণ যে নিয়ে আলোচনা করা যাক:
ভাব সম্প্রসারণ:
দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি
সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?
মূলভাব: মানুষের জীবনে সত্য মিথ্যা ভালো-মন্দ একত্রে জড়িয়ে আছে। একটি কে ছাড়া অপরটিকে যথাযথ উপলব্ধি করে যায় না বলে উভয়েই উভয়ের পরিপূরক। তাই জীবনের প্রয়োজনে সত্য-মিথ্যা চিরন্তন। সত্য জীবনের আরাধ্য। মিথ্যাকে পরিহার করে সত্যকে আঁকড়ে ধরেই জীবনের সার্থকতা প্রতিপন্ন করতে হয়। পৃথিবীতে যারা মিথ্যা ও ভুল-ভ্রান্তি কে বাদ দিয়ে কেবল মাত্র সত্য লাভের পথ খোঁজে তারা কখনোই সত্যের নাগাল পায় না।
সম্প্রসারিত ভাব: সত্য মিথ্যা নিয়ে এই জীবনের পথ চলা। সত্যই জীবন, সত্যই- আলো পৃথিবীতে মানুষ চায় মিথ্যার কুহকে পথভ্রান্ত না হতে, তার একান্ত কাম্য লক্ষ ‘সত্য’। সত্যই মানব জীবনের কল্যাণ বয়ে আনে। সত্য মানে কল্যান। সত্য মানে সুন্দর। কিন্তু সত্য কোন বিচ্ছিন্ন অনুষঙ্গ নয়।
সত্যকে সহজে পাওয়ার ও চেনার কোন পথ নেই। কেননা সত্য এমন কোন বিশুদ্ধ ধারণা নয়, যে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে জীবনের সকল গতিবিধি কে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। সত্য হলো একটি আপেক্ষিক ধারণা। জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সত্য-মিথ্যা কে চিনে নেওয়া যায়। দিনকে যেমন রাতের সাথে তুলনা করেই চেনা যায়, তাপকে যেমন শত্যৈর সাথে তুলনা করে করে অনুভব করা যায়, সত্যকেও তেমনি মিথ্যার পাশাপাশি রেখেই উপলব্ধি করতে হয়। ভুল বা মিথ্যা মানবজীবনের অনিবার্য একটি ঘটনা। তাকে স্বীকার করেই তাকে অতিক্রম করতে হয় ,এড়িয়ে গিয়ে নয়। মানব জীবনের এক একটি ভুল মানুষকে এক বা একাধিক সত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
সংসারের সত্য ও মিথ্যা, সুন্দর ও অসুন্দর একই সাথে বিরাজ করে। মিথ্যা ও অসুন্দরকে প্রত্যাখ্যানের জন্য দ্বার বন্ধ করে বসে থাকলে চলবে না। কেননা, মিথ্যা পরিহার করা মানেই সত্যানুসন্ধানী হওয়া নয়-মিথ্যা পরিহার করার সাথেসাথে সত্যকে আঁকড়ে ধরতে হবে। দ্বার বন্ধ করে সংসার বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলে সত্য ও মিথ্যা উভয় থেকেই বিচ্ছিন্ন হতে হয়। প্রকৃতপক্ষে সংসার জীবনের সকল কাজ কর্ম করে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয় পূর্বক সাধ্যমত সত্যাশ্রয়ী থাকার চেষ্টা করাই সকলের কাম্য হওয়া উচিত।
পার্থিব জগতে সত্য ও মিথ্যার রয়েছে পাশাপাশি অবস্থান। সত্য-মিথ্যা পরস্পর এমন অবিচ্ছেদ্য যে, নিরবচ্ছিন্ন সত্য এবং মিথ্যাকে পৃথক পৃথকভাবে উদঘাটন করা সম্ভবপর নয়। জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতায় দুর্গম পথ চলতে চলতে এসব ভুল ভ্রান্তি ও মিথ্যাকে অপসারিত করে মানুষকে সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। অজস্র ভুল ভ্রান্তি কে অতিক্রম করলেই যথার্থ সত্যের সন্ধান মেলে। জীবনের সকল দ্বার রুদ্ধ করে দিলে হয়তো ভ্রান্তিকে ঠেকানো যায়, কিন্তু সত্যকে পাওয়া যায় না। আকরিক ধাতু যেমন মাটির সাথে মিশে থাকে, মাটি পরিষ্কার করে তাকে পেতে হয়, জীবনের পথেও তেমনি সত্য আর মিথ্যা মিশে আছে। সত্য এবং মিথ্যা নিয়েই জীবন যাপন করতে হয়।
বাস্তব জীবনের জটিল পথে সত্য ও মিথ্যা দুই-ই এসে দাঁড়াবে। মানুষকে তার বিবেক ও বুদ্ধি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয় সে কোনটাকে গ্রহণ করবে, সত্য না মিথ্যা? এই জটিল জীবন পথে ভুলভ্রান্তি আসাও স্বাভাবিক। কিন্তু ভুলকেই শেষ মনে করলে চলবে না। ভুলের বন্ধুর পথ অতিক্রম করেই সাফল্যের সোনালী দিগন্তে পৌঁছা যায়। তেমনি মিথ্যাকে মাড়িয়েই সত্যের সোনালী দিগন্তে পৌঁছা যায়। তাই মিথ্যা কে বাদ দিয়ে সত্যের কল্পনা করা বৃথা। অপরদিকে মিথ্যা না থাকলে সত্যের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব কে কিছুতেই উপলব্ধি করা যায় না।
মন্তব্য: সত্যের জন্যেই মিথ্যার প্রয়োজন। জীবনে চলতে গেলে ছোটখাট ভুল ভ্রান্তি সত্যকে পাওয়ার পথে প্রতিবন্ধক বা অন্তরায় মনে করলে চলবে না। বরং ভুল-ভ্রান্তি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করে মানুষ প্রকৃত সত্যকে উদঘাটন করবে। তাই মিথ্যা গৃহবন্দি হয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। কারণ মিথ্যা না থাকলে সত্যের গুরুত্ব ততটা বোঝা যায় না।
Leave a Reply