প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আপনাদেরকে আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাগত জানাই। আজ অনেকদিন পর আবার আমরা আপনাদের জন্য ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে হাজির হয়েছি। বর্তমানে বিশ্ব করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট বিশেষ করে ওমিক্রণ ও ডেল্টা নিয়ে বেশ সংকিত রয়েছে। আমাদের দেশেও এর প্রাদুর্ভাব প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। হয়তোবা আবার নতুন করে অনলাইন ক্লাসে সবাইকে ফিরে যেতে হবে।
তাই আমরা আবার হাজির হয়েছি অনলাইনভিত্তিক আমাদের এই ওয়েবসাইট যেখানে শিক্ষার উপর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। আমরা আজকে যে ভাব সম্প্রসারণ টি নিয়ে আলোচনা করব সেটি বিশেষ করে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপযোগী একটি ভাব সম্প্রসারণ। আজ যে ভাব সম্প্রসারণ টি নিয়ে আলোচনা করব সেটি নিম্নে তুলে ধরা হলো:
ভাব সম্প্রসারণ: যত বড় হোক ইন্দ্রধনু সে সুদূর আকাশে আঁকা / আমি ভালোবাসি মোর ধরণীর প্রজাপতির পাখা
মূলভাব: কাছাকাছি যে আছে সে ক্ষুদ্র হলেও তার সাথেই সখ্য গড়ে ওঠে, জন্ম নেয় ভালোবাসা। দূরে থাকে যা, তা যতই মূল্যবান হোক না কেনো সেটি আকাঙ্ক্ষার ধন হওয়া উচিত নয়। নাগিল– বহির্ভূত বস্তু মানুষের কল্পনার সামগ্রী যা ঠিক নয়। কেননা বাস্তব আর কল্পনা এক নয়। বহু দূরের সৌন্দর্য হাতের নাগালে নয়, এমন সৌন্দর্যের চেয়ে জীবনের খুব কাছাকাছি সহজ উপভোগ্য সাধারণ সৌন্দর্যের মূল্য অনেক বেশি।
সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী বলে ইন্দ্রধনু তার কাছে বেশ দৃষ্টিনন্দন। প্রত্যেক মানুষই সৌন্দর্যকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। ইন্দ্রধনু বা রংধনুতে রয়েছে বিচিত্র রঙের সমাহার। ইন্দ্রধনু মানুষের মনে ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি করলেও ইন্দ্রধনুর সাথে আমাদের আকাশ আর মাটির ব্যবধান। বর্ণ সুষমায় ইন্দ্রধনু যতই মনমুগ্ধকর ও নয়ন রঞ্জক হোক না, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। জীবনের বাস্তব ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন। বাস্তবের কঠিন মাটিতে পা ফেলে মানুষকে জীবন চালাতে হয়। বাস্তবকে অপেক্ষা করা মোটেই সম্ভব নয়।
আমরা ভালবাসি প্রজাপতি। আমাদের হাতের কাছেই থাকে এ প্রজাপতি। চিত্র-বিচিত্র পাখা মেলে প্রজাপতি যখন উড়ে যায়, তখন আমাদের মনে আনন্দের দোলা লাগে! আমাদের হাতের নাগালেই প্রজাপতির মত সুন্দর একটি প্রাণী থাকে, আর আমাদের মনোযোগ কিনা ইন্দ্রধনুর দিকে। যাকে পাওয়া যাবে না, দেখা যাবে না, কাছাকাছি ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, তার প্রতি ভালোলাগার অনুভূতি থাকলেও ভালোবাসা কাজ করে না। আমরা তাই ইন্দ্রধনু নয়, প্রজাপতিকেই ভালোবাসি।
ইন্দ্রধনুর চেয়ে প্রজাপতি আকারে ক্ষুদ্র। কিন্তু আমাদের আকর্ষণ এর প্রতিই বেশি। কারণ প্রজাপতিকে আমরা হাতের নাগালেই পায় অথচ ইন্দ্রধনু কে কাছে পাওয়ার যেহেতু কোনো সম্ভাবনা নেই, সেহেতু একে না পেলেও খারাপ লাগবে না আমাদের। কিন্তু প্রজাপতি না দেখলে, কাছে না পেলে আমাদের খারাপ লাগতেই পারে। কাছের বস্তুকে মানুষ ভালবাসবে, এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যেই নিহিত থাকে প্রকৃত প্রেম ও মহত্ব।
প্রজাপতির সৌন্দর্য আমাদের বেশি মুগ্ধ করে ইন্দ্রধনুর চেয়ে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, দূরের দুর্লভ বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ দেখিয়ে কাছের সৌন্দর্যকে উপেক্ষা বা অবহেলা করা মোটেও উচিত নয়। অনেক দূরের অনিঃশেষ সৌন্দর্যের চেয়ে নিকটের ক্ষুদ্র সৌন্দর্যই আমাদের কাছে প্রাণবন্ত এবং সুখকর। দূরের সৌন্দর্য সবসময় দূরেই থেকে যায়, দূরের সৌন্দর্যের প্রতি বেশি অনুরাগ প্রকাশ করলে তাকে কাছে না পেয়ে কষ্ট পেতে হয় মানুষকে। প্রজাপতির সৌন্দর্যের অনাবিল উৎস।
সীমার বাইরে কোনো বস্তুই উপভোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে না। কল্পনার ভাবালুতা অমৃত চারি করে অনুসরণ করায় তাতে রোমান্টিক ভাবনার হয়তো কিছু খারাপ হতে পারে কিন্তু বাস্তব জীবনে তার প্রয়োজন কতখানি তা ভেবে দেখা দরকার।
মন্তব্য: কাছের সৌন্দর্যকে যেভাবে নাগালের মধ্যে পাওয়া যায় তেমনি তার সৌন্দর্যকে প্রাণভরে উপভোগ করা যায়। তাই আকাশকুসুম পরিকল্পনা না করে সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলা উচিত। আমাদের উচিত সুদূরের অধরা সুন্দর্যকে পাওয়ার দুরাশা না করে, হাতের কাছের সৌন্দর্যকে উপভোগ করা।
উপরোক্ত যে ভাব সম্প্রসারণ টি নিয়ে আজ আলোচনা করা হল নিশ্চয়ই আপনাদের ভাল লেগেছে। আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে যতটুকু পেরেছি সুন্দর ও সহজ ভাবে উপস্থাপনা করার চেষ্টা করেছি। আপনারা বেশি বেশি করে এই ওয়েবসাইট পেজে ভিজিট করুন এবং অন্যান্যদের ভিজিট করতে বলুন। আমরা বাংলা ব্যাকরণ এর আরো অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিশদ আকারে এই ওয়েবসাইট পেজে আলোচনা করব। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন।
Leave a Reply