আজকে আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে নতুন আরো একটি ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করবো। আজকের ভাব-সম্প্রসারণ টি বিশেষ করে ৯ ম, ১০ম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য। আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিদিন ই প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাব সম্প্রসারণ আমাদের এই শিক্ষাবিষয়ক ওয়েবসাইট এ আলোচনা করার। তারই ধারাবাহিকতায় আজও আমরা একটি ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব। আজ আমরা যে ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব সেটি হল
ভাব সম্প্রসারণ: নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারেতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস।
নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।
মূলভাব: এ পৃথিবীতে প্রকৃতপক্ষে কেউই পুরোপুরি সুখী নয়। কেননা সুখের অতৃপ্তিই এক ধরনের সুখহীনতা। নিজের চাইতে অন্যকে সুখী মনে করে মানুষ নিজের আত্ম যাতনা বাড়িয়ে তোলে। মানুষ কখনোই নিজ অবস্থায় সন্তুষ্ট নয়। সে নিজেকে অপরের তুলনায় বঞ্চিত ও দুখী ভেবে নিরব অভিমানে পীড়িত হয়।
সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা অন্তহীন। সে তৃপ্তিহীন আশা-আকাঙ্ক্ষার পেছনে মানুষ নিরন্তর ধাবমান। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার যেমন শেষ নেই তার ছুটে চলারও তেমন অন্ত নেই। মানুষের আকাঙ্ক্ষা করার ক্ষমতা অসীম। কিন্তু তাকে বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা সীমিত। তাই সে আশা আকাঙ্ক্ষা করে প্রচুর কিন্তু পায় অল্প। এটাই তার চিরন্তন অতৃপ্তির কারণ। তাই সে যা পাই তাতে চিত্তের ক্ষুধা মেটে না। সে চায় আরো আরো অনেক বেশি। আসলে মানুষ যে কি চায় তা সে নিজেও জানে না।
সুখ এমনই এক স্বর্ণমৃগ যে, তাকে পাওয়ার জন্য সবাই লালায়িত। সুখের কোন শেষ নেই, তার চাহিদারও কোনো শেষ নেই। সুখের অনন্ত প্রত্যাশায় মানুষ অস্থির। এমনিভাবে সংসারে কেউই নিজের বর্তমান অবস্থায় সুখী নয়। নিজে যত সুখ স্বাচ্ছন্দ্যেই থাকুক না কেন, পরের ঐশ্বর্য ও সুখ শান্তি কেই সে বড় করে দেখতে অভ্যস্ত এবং এ কারণেই সে সর্বক্ষন অতৃপ্তি ও অশান্তির মধ্যে কাল কাটায়। সুখের প্রত্যাশাই আসলে এক ধরনের দুঃখময় ও তাই মানুষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। অতৃপ্ত ও অশান্ত মানুষেরাই উদ্বৃত্ত কবিতাংশের রূপক নদীর দুই পাড়।
পরস্পর বিচ্ছিন্ন নদীর দুই পাড়ের প্রত্যেকেই একে অন্যকে তার চেয়ে সুখী মনে করে। এভাবেই তাদের প্রত্যেকের মনে বিরাজ করে সার্বক্ষণিক অশান্তি ও অতৃপ্তি। একই সমাজে বাস করেও আমরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকি বলে কেউ আমরা কাউকে সঠিক ভাবে চিনি না। আর এ না চেনার কারণে আমরা বাইরের চাকচিক্য দেখে নিজের চেয়ে অন্যকে সুখী মনে করি। আমরা নিজের অবস্থার ওপর সন্তুষ্ট থাকি না বলেই অন্যের সুখেই বড় করে দেখি এবং ঈর্ষান্বিত হই। কিন্তু আমরা যদি অন্যের আসল পরিচয় জানি,, তাহলে দেখা যাবে যে তার মনেও বিরাজ করছে কত অশান্তি। এ কারণেই আমরা নদীর পরস্পর বিচ্ছিন্ন দুই তীরের মত পরস্পরকে অধিক সুখী কল্পনা করে অশান্তিতে দিন যাপন করি।
নদীর এপার থেকে অন্য পারের দৃশ্যাবলী যেমন সুন্দর মনে হয়, তেমনি মানুষও মনে করে অন্যেরা তার থেকে সুখে আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে কেউই পরিপূর্ণভাবে সুখী নয়। কারণ আত্মসন্তুষ্টির সজীব বৃত্তেই সকল সুখ অন্তর্নিহিত।
মন্তব্য: প্রকৃতপক্ষে এই পৃথিবীতে কেউই সুখী নয়। মানুষকে সব সময় নিজস্ব যা কিছু আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। নিজের প্রতি আস্থাহীনতার অসন্তুষ্টি মানুষকে দ্বন্দ্বময় জীবনের দিকে ধাবিত করে। আত্মসন্তুষ্টির পূর্ব শর্ত নিজের প্রতি প্রগাঢ় আস্থাশীলতা। সুখের অসীম চাহিদায় মানুষকে চিরসুখী করে রেখেছে।
আজকে আমরা উপরে যে ভাব সম্প্রসারণটি নিয়ে আলোচনা করলাম, আমরা সহজে বুঝতে পারছি যে মানুষের চাহিদা অসীম। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী তা পূরণ করতে পারছে না বিধায় তারা অশান্তি তে ভুগছে।
শিক্ষার্থী বন্ধুরা আপনারা সহজেই আজকের ভাব-সম্প্রসারণ টি বুঝতে পেরেছেন। আমাদের এই ওয়েবসাইটে পেজে আপনাদের ভিজিট করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। যেহেতু দীর্ঘদিন করোনাকালীন সময়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় আপনারাও ঠিকমতো ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেননি, পড়াশোনার দিক দিয়ে আপনারা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন। তাই আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে শিক্ষাবিষয়ক তথ্য গুলো আপডেট করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এতে আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
Leave a Reply