
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আজকে আমরা যে রচনাটি আপনাদের সামনে তুলে ধরব সেটি নিম্নে আলোচনা করা হলো:
এইডস
অথবা এইডস; এ যুগের ঘাতক ব্যাধি
ভূমিকা: আধুনিক যুগের আলো ঝলমলে সভ্যতার জন্য এক অমোচনীয় কালিমা হিসেবে দেখা দিয়েছে ঘাতক ব্যাধি এইডস। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত মনে করা হলেও এইচ নামকদুরা রোগ্য ব্যাধির প্রাদুর ভাবে মানুষের এ সাফল্য কীর্তি নিতান্তই অসার প্রমাণিত হয়েছে।
এইডস (AIDS): এইডস এর পূর্ণরূপ হলো Acquired Immune Deficiency Syndrome| এটি একটি ঘাতক ব্যাধি, যা এইচআইভি (HIV) থেকে জন্ম নেয় এই ভাইরাস দেহের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। HIV অন্যান্য সব ভাইরাসের মতোই, কিন্তু এর কার্যপদ্ধতি ভিন্ন।
এইডস ভাইরাসের বিস্তার ও কারণঃ কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে শরীরের চার ধরণের তরল পদার্থের মাধ্যমে এইডস ভাইরাস ছড়ায়। এগুলো হলো রক্ত, বীর্য, যোনিরস ও মাতৃদুগ্ধ। এই চারটি তরল পদার্থ যদি কোনো এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে কোনো সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করে তবেই তিনি এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন।
HIV-তে আক্রান্ত হওয়ার কারণগুলো হলো-
এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ যৌন মিলন।
এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সূচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার।
এইচআইভি বহনকারী মা এর মাধ্যমে তার গর্ভস্থ সন্তান, অথবা জন্মদানের সময় বা জন্মের পর দুগ্ধদানের মাধ্যমে সন্তান এইচআইভিতে আক্রান্ত হতে পারে।
রক্তদানের সময় দানকৃত ব্যক্তির এইচআইভি থাকলে তা গ্রহীতার রক্তে সঞ্চালনের মাধ্যমে গ্রহীতার এইচআইভি হতে পারে।
মাদকাসক্ত ব্যক্তি যারা ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য সরাসরি শরীরে প্রবেশ করায়, তাদের এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি অনিরাপদ যৌন মিলনের চেয়েও বেশি।
এইডস ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিতঃ বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ। এর পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, ভুটানে এইচআইভি সংক্রমণের হার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। বাংলাদেশের সাথে এসব দেশের যোগাযোগ থাকার কারণে বাংলাদেশেও এইডস এর বিস্তার ঘটছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দুটো জেলা সিলেট ও চট্টগ্রামে এইডসে আক্রান্তের হার বেশি। এছাড়া সীমান্তবর্তী জেলা যশোর ও রাজশাহীতেও এই হার চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের জন্য এই ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি থাইল্যান্ডের মতো হুমকিস্বরূপ।
HIV-তে আক্রান্ত হওয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হলো যৌনকর্মীরা। এছাড়াও এদেশে ইনজেকশন-এর মাধ্যমে মাদক সেবনকারীরাও মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের এইডস-এ আক্রান্ত হওয়ার কিছু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হলো-
কিশোর ও তরুণ সমাজ যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে।
অল্প বয়স্ক মহিলা ও মেয়ে শিশু, যাদের অধিকাংশ শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত।
নিজের পরিবার পরিজন ও সমাজ ছেড়ে আসা ভাসমান জনগোষ্ঠী, যারা প্রায়ই একাকিত্বের কারণে যৌন কর্মীদের সাথে যৌন মিলন করে থাকে।
মাদকসেবী জনগোষ্ঠী যারা অর্থের জন্য অনিরাপদ যৌন মিলনে বাধ্য হয়।
এইডস এর লক্ষণসমূহ: এইডস এর লক্ষণসমূহ নিম্নরুপ –
* মাঝে মাঝে জ্বর, মাথা ব্যথা ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাস।
* মুখের ভেতর, ঠোঁটে ও জিভে সাদা পর্দা পড়া।
* অসীম দুর্বলতা ও হজম শক্তি হ্রাস।
* স্মৃতিশক্তি হ্রাস।
* শুকনা কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট।
* গ্রন্থিসমূহ বিশেষ করে গলা, বগল ও কুচকী ফুলে যাওয়া।
* রাতে ঘাম হওয়া, অনিদ্রা ও ওজন কমে যাওয়া।
* পিঠে, মুখে ও গলায় ফুসকুরি।
এইডস প্রতিরোধে করণীয়ঃ এইডস প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এইডস প্রতিরোধে করণীয়গুলো নিম্মরূপ-
প্রথমতঃ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বিশ্বস্ততা বজায় রাখা।
দ্বিতীয়ঃ যৌন সম্পর্ক স্থাপনে নিরাপদ পদ্ধতি ব্যবহার করা। এছাড়া বহুগামীতা ও পতিতালয়ে যাতায়াত বন্ধ করা।
তৃতীয়তঃ রক্তদানের পূর্বে রক্তদাতার রক্তে HIV- আছে কিনা তা পরীক্ষা করা।
চতুর্থতঃ অন্যের সুই, সিরিঞ্জ, ব্লেড, রেজার, ক্ষুর ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
পঞ্চমঃ এইডস আক্রান্ত মায়ের গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকা।
ষষ্ঠতঃ মাদক দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকা এবং সরকারি, বেসরকারি, দেশি, বিদেশি সকল প্রচার মাধ্যমে সতর্কতামূলক প্রচার চালানো।
উপসংহার: এইডস রোগ মানব সভ্যতার জন্য এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের অবিমৃষ্যকারিতার জন্যই এ মরণ ব্যাধিটির সৃষ্টি হয়েছে। তাই মানুষকেই তার পরিণতি ভোগ করতে হবে। সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশের অধিবাসীদেরও এ রোগের ব্যাপারে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে তাই ব্যাপক আগারের একটি ছড়িয়ে পড়ার আগেই আমাদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
Leave a Reply