রচনা: আর্সেনিক দূষণ ও প্রতিকার বা আর্সেনিক দূষণ আর্সেনিক সমস্যা ও তার প্রতিকার

রচনা: আর্সেনিক দূষণ ও প্রতিকার বা আর্সেনিক দূষণ আর্সেনিক সমস্যা ও তার প্রতিকার

আজকে আমরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আজকের রচনাটি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আশা করি আজকের এই রচনা আপনাদের বিভিন্ন পরীক্ষায় অবশ্যই সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। তো আর কথা না বাড়িয়ে আজকে রচনাটি আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি:

আর্সেনিক দূষণ ও প্রতিকার
বা আর্সেনিক দূষণ
আর্সেনিক সমস্যা ও তার প্রতিকার

ভূমিকা: আর্সেনিক একটি মৌলিক পদার্থ। এটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি উপাদান, যা মূলত পানিতে দ্রবীভূত হয়ে মানবদেহে প্রবেশ করে। আর্সেনিক দূষণ বাংলাদেশে ধীরে ধীরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এ অবস্থায় এর প্রতিরোধে সচেতনতা পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

আর্সেনিক দূষণ প্রক্রিয়া: আর্সেনিক এমন এক ধরনের পদার্থ, যার কোন বর্ণ, গন্ধ, ও স্বাদ কিছুই নেই। আর্সেনিক বিভিন্ন ধাতুর সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে এবং অক্সাইড, সালফাইড ও আর্সেনিক ইত্যাদি রূপে প্রকৃতিতে যৌগ অবস্থায় বিরাজ করে। মানবদেহে আর্সেনিক আক্রমণের মূল মাধ্যম হচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানি। ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক দূষণ প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়ে থাকে।

মাটির নীচে বিশেষ স্তরে আর্সেনিক সঞ্চিত থাকে এবং নলকূপের পানির মাধ্যমে তা উত্তোলিত হয়। বিগত কয়েক দশক যাবত কৃষি উৎপাদনে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে ফলে তা বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে দূষিত করছে নদী, নালা, খাল, বিল এবং সমুদ্রের পানি। এই অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার আর্সেনিক দূষণের একটি অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণের পরিস্থিতি: বাংলাদেশে আর্সেনিক সমস্যা ক্রমেই উদ্বেগ জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা। ২০০১ সালে ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে বাংলাদেশের ৬১টি জেলায় নলকূপের পানি পরীক্ষা করে জানায় ৪২% নলকূপের পানিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানের চেয়ে বেশি মাত্রার আর্সেনিক রয়েছে।

পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা বেশি। বাংলাদেশে বেশি দূষণযুক্ত জেলাগুলো হচ্ছে চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা ও বাগেরহাট। কম দূষণযুক্ত জেলাগুলো হলো ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নাটোর এবং নীলফামারী।

আর্সেনিক আক্রমণের প্রতিক্রিয়া: শারীরিক বিভিন্ন লক্ষণ থেকে আর্সেনিক দূষণ নির্ণয় করা যায়। আর্সেনিক আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের চামড়া খসখসে হয়ে যায়। হাত- পায়ের তালু ফেটে যায়। শরীরে কালো কালো দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি ক্রমেই দুর্বল হয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে চামড়া ফেটে রক্তক্ষরণও হয়। আর্সেনিক বিষক্রিয়ার প্রভাবে লিভার, কিডনি রোগ, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে পারে। অনেক সময় আর্সেনিক আক্রান্ত ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।

আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর জিহ্বা, মাড়ি, ঠোঁটে লালভাব দেখা যায়। ক্ষুধামন্দা, খাদ্যে অরুচি এবং বমিবমি অনুভব করে। ধীরে ধীরে হৃদযন্ত্র নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। মানুষের রক্তে শ্বেত ও লোহিত কণিকার পরিমাণ কমে যায়। অনেক সময় রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত এবং গর্ভবতীদের ভ্রুনের মারত্মক ক্ষতি হয়।

আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধের উপায়: আর্সেনিক বিষক্রিয়া থেকে মুক্তির জন্য আপাতত প্রতিরোধক ব্যবস্থাই সবচেয়ে উপযোগী। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে ০.০৫ মিলিগ্রাম আর্সেনিক মানুষের দেহের জন্য সহনীয় বলা হলেও বর্তমান রিপোর্টে বলা হয়েছে বাংলাদেশের জন্য এ মাত্রা ০.০১ মিলি গ্রামের বেশি হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে। তাই প্রতিরোধ ও প্রতিকারের দিকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণায় দেখা যায় কম গভীরতা সম্পন্ন নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি। বিশেষ করে ১০০-২০০ মিটার গভীরতায় আর্সেনিকের উপস্থিতি কম। আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে-

– গভীর নলকূপের পানি খাবার এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করতে হবে।

– বৃষ্টির পানিতে আর্সেনিক থাকেনা। তাই বৃষ্টির পানি জমিয়ে রেখে ব্যবহার করতে হবে।

– রেডিও টেলিভিশন ও গ্রাম্য আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আর্সেনিক সম্পর্কে সচেতন করা।

– পুকুর এবং খাল-বিলের পানিতে আর্সেনিক থাকেনা এ ক্ষেত্রে পুকুরে, খাল বা বিলের পানি ছেঁকে ২০ মিনিট ফুটিয়ে পান করতে হবে।

– সরকারি সহায়তার মাধ্যমে আর্সেনিক বিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপন করা।

– সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পর পর নলকূপের পানি পরীক্ষা করতে হবে।

– বালতি, কলসি এবং SOES, CSIR-এর যৌথ প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত ফ্লাই এ্যাশ দিয়ে ফিল্টারের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করা।

– আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলোকে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে পানি পান বন্ধ করে দিতে হবে।

– আর্সেনিক কোনো সংক্রামক বা ছোঁয়াছে রোগ নয় তাই আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে হবে।

উপসংহার: পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু সেই পানি কখনো কখনো মানুষের জীবন সংকট ও মরণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকই নলকূপের পানি পান করে। কিন্তু সেই নলকূপের পানি খেয়েই মানুষ এখন ঘাতক ব্যাধির দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। কাজেই এর থেকে প্রতিরোধ এবং প্রতিকার অত্যন্ত জরুরী।

About শাহরিয়ার হোসেন 4780 Articles
Shahriar1.com ওয়েবসাইটে আপনার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় যা কিছু দরকার সবকিছুই পাবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*