রচনা: বর্ষাকাল অথবা বাংলার বর্ষা অথবা বর্ষায় বাংলাদেশ

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আপনাদেরকে আমাদের এই ওয়েবসাইটে স্বাগত জানাই। আপনারা যারা বিভিন্ন বিষয়ের উপর রচনা খুঁজছেন তারা অবশ্যই আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। এখানে সকল শ্রেণীর সকল পেশার সকল প্রতিযোগিতামূলক পরিক্ষার প্রয়োজনে রচনাগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করে থাকি।
আজকে আমরা যে রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব সেটি সেটি মূলত পঞ্চম শ্রেণী থেকে শুরু করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী একটি রচনা। আজকের রচনাটি মূলত পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম শ্রেণীতে পরীক্ষায় বেশি এসে থাকে। আমরা এখানে চেষ্টা করব রচনা প্রতিটি টপিকস আলোচনা করা যদি সম্ভব না হয় আপনারা অবশ্যই আপনাদের বাকি টপিকগুলো আপনাদের বই দেখে পড়ে নিবেন।
বর্ষাকাল
অথবা বাংলার বর্ষা
বর্ষায় বাংলাদেশ
প্রবন্ধ সংকেত: ভূমিকা- বর্ষার আগমন- বর্ষার রূপ- বর্ষায় প্রাকৃতিক দৃশ্য- বর্ষাকালের যোগাযোগ ব্যবস্থা- বাংলার অর্থনৈতিক জীবনে বর্ষা- বর্ষায় উপকারিতা-অপকারিতা-উপসংহার।
ভূমিকা: ঋতু বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশ গরবিনী বর্ষা আগমন করে তার সজল রুপ ও সৌন্দর্য নিয়ে। বসন্তকে ঋতুরাজ বললেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বর্ষাই বাংলার মানুষের প্রিয় ঋতু।
বর্ষার আগমন: গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের প্রশান্তি নিয়ে আসে বর্ষা। আষাঢ়- শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল হলেও এর আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় বর্ষার আগমন বার্তা। আবার শ্রাবণের শেষেও বর্ষা যেন বিদায় নিতে চায় না। আরো কিছুদিন বৃষ্টিধারা বর্ষণ করে চলে। বর্ষার আগমনে শুষ্ক-রুক্ষ প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পায়, গাছপালা বৃক্ষরাজি সজীব হয়ে ওঠে।
বর্ষার রূপ: বর্ষায় আকাশের বুক চিরে অঝোরে বৃষ্টি নেমে আসে। বর্ষাকালে চলাফেরা করার জন্য নৌকা, ডিঙ্গি, ভেলা প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। কৃষকরা বৃষ্টিতে ভিজে ফসল তোলার কাজে ব্যস্ত থাকে। কারণ বর্ষাকাল পাট কাটা ও ধান তোলার উপযুক্ত সময়। বর্ষায় আকাশ থাকে কালো মেঘে আচ্ছন্ন। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ চারিদিকে আঁধার হয়ে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। মাঝে মাঝে কয়েকদিন পর্যন্ত সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না।
বর্ষায় প্রাকৃতিক দৃশ্য: বর্ষা বাংলার প্রকৃতি কে দান করে নতুন রূপ। শুষ্ক পত্র আর পত্রশূন্য বৃক্ষরাজি ভরে ওঠে সবুজের সমারোহে। গাছে গাছে ফোটে কদম, কেয়া, জুঁই ইত্যাদি বর্ষার ফুল। ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা গুলো ভেসে চলে ভরা নদীর উপর দিয়ে। ধানের চারা গুলো জলের পরশে শ্যামল হয়ে মৃদু বাতাসে আন্দোলিত হতে থাকে। বিল, হাওর, বাওর পানিতে ভরে যায় জেলেরা বিভিন্ন ধরনের মাছ মারে এই বর্ষাকালে।
বর্ষাকালের যোগাযোগ ব্যবস্থা: বর্ষাকালে গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট ডুবে যায়। কোথাও পায়ে হেঁটে যাওয়ার উপায় থাকেনা। তখন নৌকায় হয় বর্ষাকালের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।
বাংলার অর্থনৈতিক জীবনে বর্ষা: কৃষক আর কৃষির দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। আমাদের কৃষি সফলতা অনেকখানি নির্ভর করে বড় বর্ষার ওপর। কৃষক এই ঋতুতে বীজ বোনে, চারা তোলে, চারা রোপণ করে। বৃষ্টিহীনতায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শস্য উৎপাদন। কেননা এখনো পর্যন্ত সেচ সুবিধা দেশের সব জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় নি অনেকের আবার সামর্থ্য নেই।
বর্ষার উপকারিতা: বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে দেশের ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে যায়। দূষিত বায়ু বিশুদ্ধ হয়। গ্রাম বাংলার মানুষ বর্ষার আগমনের প্রতীক্ষায় থাকে। কেননা বর্ষায় জমিতে প্রচুর পলি জমে, জমিকে উর্বর করে তোলে। তখন ফসল ভালো হয় এবং কৃষকের মুখে হাসি ফোটে।
অপকারিতা: বর্ষার কিছু অপকারী দিকও আছে। বর্ষাকালে পথঘাট ডুবে যায়। রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। বর্ষাকালে বন্যার সময় দূষিত পানি পান করে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। যারা দিন এনে দিন খায় তাদের জন্য বর্ষা কখনো কখনো অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়। খাদ্যাভাবে পড়তে হয় অনেক মানুষকে।
উপসংহার: বর্ষাকালে যতই অসুবিধা থাকে না কেন বর্ষা আমাদের জন্য বড়ই উপকারী ঋতু। বর্ষা না হলে এদেশ মরুভূমিতে পরিণত হতো। প্রকৃতি ও মানব জীবনে বর্ষার প্রভাব অপরিসীম। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বর্ষার আগমনকে স্বাগত জানিয়েছেন বিমুগ্ধ চিত্তে—
” বরষা ওই এলো বরষা
অঝোর ধারায় জল ঝরঝরি অবিরল
ধূসর নীরস ধরা হলো সরসা”।
পরিশেষে আমরা আজকে যে রচনা টা নিয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করলাম সেটা অবশ্যই আপনাদের ভাল লাগবে। কারণ আমরা এখানে সুন্দর সাবলীল ভাষায় রচনা টাকে উপস্থাপনা করার চেষ্টা করেছি। আশাকরি আপনাদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এই রচনাটি অবশ্যই সহায়ক হিসেবে কাজে লাগবে।