রচনা: ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্রসমাজ অথবা ছাত্র রাজনীতি

রচনা: ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্রসমাজ অথবা ছাত্র রাজনীতি

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আজকে আমরা যে রচনা নিয়ে আলোচনা করব সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা তো বেশি কথা না বলে আমরা রচনার মূল টপিক সে চলে যায়:

ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্রসমাজ
অথবা ছাত্র রাজনীতি

প্রবন্ধ সংকেত: ভূমিকা-বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির সূচনা- ছাত্ররাজনীতির গুরুত্ব- ছাত্র রাজনীতির অবদান-ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস-ছাত্র রাজনীতির বর্তমান অবস্থা-উপসংহার।)

ভূমিকা: বিদ্যা অর্জন করা ছাত্র জীবনের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব। পাশাপাশি ছাত্রদের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। আজকের ছাত্রই যেহেতু আগামী দিনের নেতা তাই ছাত্রজীবন নেতৃত্ব গঠনের মূখ্য সময়। এজন্য ছাত্রদের বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। বলিষ্ট নেতৃত্ব গঠনের জন্য ছাত্র রাজনীতির বিকল্প নেই। বাংলাদেশে রাজনীতিতে ছাত্র রাজনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন স্থান দখল করে আছে। ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৯০ এর স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে ছাত্ররাই ছিল সামনের সারিতে।

বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির সূচনা: বাংলাদেশের ছাত্ররা সরাসরি জাতীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন বিংশ শতাব্দীর শুরুতে স্বদেশী আন্দোলনের সময়। এসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক অনেক গোপন সমিতি গড়ে ওঠে এবং তাতে যুক্ত হয়ে ছাত্ররা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। সূর্যসেন, পুলিনবিহারী দাস, বাঘা‌ যতীন, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, বীণা দাস, সুনীতি চৌধুরী, শান্তি ঘোষ প্রমুখ প্রায় সবাই ছিলেন ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষক। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ছাত্ররাজনীতি সাংগঠনিক রূপ পরিগ্রহ করে এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর স্থানীয় রাজনৈতিক দল গঠিত হবার ফলে জন্ম হয় ছাত্র সংগঠনের।

ছাত্র রাজনীতির গুরুত্ব: জনদাবী আদায়ে ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা অনস্বীর্কায। অন্য কোনো শ্রেণি বা পেশার মানুষ ততটা সংগঠিত হতে পারে না যতটা হতে পারে ছাত্ররা। তারুণ্য নির্ভর তেজোদীপ্ত সংগঠিত ছাত্রদের দৃঢ় আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খানের মতো স্বৈরশাসকেরও পতন হয়েছে, তেমনি পতন হয়েছে স্বৈরশাসক এরশাদেরও। ছাত্ররা সমাজের সবচেয়ে বড় সচেতন গোষ্ঠী। রাজনৈতিক নেতৃত্ব কোনো অন্যায় করলে ছাত্ররাই প্রথমে ফুঁসে উঠে তার প্রতিবাদ জানায়।

ছাত্র রাজনীতির অবদান: ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ বিভিন্ন ইস্যুতে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছে। নিম্নে ছাত্রসমাজের রাজনৈতিক সচেতন ও তার ফসল হিসেবে বিভিন্ন ইস্যু আন্দোলনে তাদের অবদানের ক্ষেত্র সমূহ চিহ্নিত করা হলো:

ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা: ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ঘোষণা দিলেন “উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা” তখনই ছাত্র জনতা এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ছাত্ররা ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে ছাত্ররা সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। এতে পুলিশ ছাত্রদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় আর শহিদ হন সালাম, রফিক, শফিক, বরকত সহ আরও অনেকেই।

৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা: ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন এ দেশের স্বার্থবিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করলে ছাত্ররা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের ভূমিকা: ১৯৬৬ সালের ৬ দফাকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী “আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা” নামক একটি মামলা দায়ের করে। এতে প্রধান আসামী করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তখন ছাত্ররা বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য আসামীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে আন্দোলন গড়ে তোলে। এই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়।

৭১’র মুক্তিযুদ্ধ: ৭১’র নির্বাচনে জনমত গঠনে ছাত্র সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 25 শে মার্চ এর কাল রাত্রের পর সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হলে ছাত্ররা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয় এবং অকাতরে দেশমাতৃকার জন্য জীবন দান করে।

ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস: স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে সন্ত্রাসী হামলায় ৭ জন ছাত্রের প্রাণ হারায়। এরপর থেকে ছাত্র রাজনীতিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারী সরকার ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো অস্ত্রের ভাষাতেই তার জবাব দেয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্ত্রভাণ্ডার তৈরি হয় এবং পবিত্র শিক্ষাঙ্গনে সশস্ত্র সংঘাত মারাত্মক আকার ধারণ করে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি চলমান কিন্তু সন্ত্রাস অনেকটাই কমে গেছে।

ছাত্ররাজনীতির বর্তমান অবস্থা: ছাত্ররাজনীতির বর্তমান ছাত্র সংগঠনগুলো দ্বন্দ্ব-কলহ সংঘর্ষ, চাদাবাজি, খুন ইত্যাদি অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এতে যেমন পড়াশুনার স্বাভাবিক পরিবেশে নষ্ঠ হচ্ছে তেমনি অভিভাবকদের উদ্বিগ্নতাও বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতি এখনো সুস্থ ধারায় ফিরে আসেননি। তাই বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে জনগণের নেতিবাচক মনোভাব জোরালো হয়েছে। সর্ব মহল থেকে বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ বা বন্ধ করার জোর দাবি উঠেছে।

উপসংহার: বর্তমানে ছাত্র রাজনীতিতে যা চলছে তা জাতির সার্বিক উন্নতির জন্য উদ্বেগ বয়ে এনেছে। বর্তমান আইন করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সময় এসেছে। জাতি ছাত্রদের হাতে বই খাতা কলম দেখতে চাই। দেশের মানুষ ছাত্র রাজনীতির নামে আর রক্ত পদসংখ্যা দেখতে চাই না।

About শাহরিয়ার হোসেন 4780 Articles
Shahriar1.com ওয়েবসাইটে আপনার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় যা কিছু দরকার সবকিছুই পাবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*