রচনা: চরিত্র অথবা চরিত্রই সম্পদ

Rate this post

প্রবন্ধ সংকেত: ভূমিকা-চরিত্র কি-সচ্চরিত্রের লক্ষণ- চরিত্র হরণের কারণ- সচ্চরিত্রের গুরুত্ব -চরিত্র গঠনের উপায়- চরিত্রের মূল্য -চরিত্রহীনতার কুফল -উপসংহার।

ভূমিকা: চরিত্র মানব জীবনের মুকুটস্বরূপ। চরিত্রবান ব্যাক্তিদের স্বকীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের গুনে সমাজজীবনের শ্রদ্ধাভাজন ও সমাদৃত হয়ে থাকেন। চরিত্র মানুষকে ন্যায়, সত্য, ও শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দেয় এবং সৎ পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। সুন্দর চরিত্র মানুষের সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ। চরিত্র গুণেই মানুষ ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

চরিত্র কি: চরিত্র মানুষের প্রধানতম গুণ। জীববিজ্ঞানীরা চরিত্রের নিয়ন্তা হিসেবে এক জোড়া ক্রোমোজোম বা বংশগতির বাহক সূত্র ‘জীন”কে দায়ী করে থাকেন। কিন্তু সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে পরিবার ও পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞান থেকে মানুষের চরিত্র গঠিত হয়। মানুষের মধ্যে শ্রমশীলতা, সহনশীলতা স্বাবলম্বন, অধ্যবসায়, শ্রদ্ধাবোধ, আত্মসংযম সবকিছুই প্রকারান্তে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে।

সচ্চরিত্রের লক্ষণ: চরিত্রগুণেই মানুষ হয়ে ওঠে শ্রেষ্ঠ, চরিত্র বলেই মানুষ হয় মহত্বের অধিকারী। চরিত্রবান ব্যক্তি কখনো সত্য থেকে সংকলিত হন না, অন্যায় কে প্রশ্রয় দেন না, ক্রোধে আত্মহারা অন্য কারো সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করেন না। কারো প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করেন না। আল্লাহকে ছাড়া সে আর কাউকে ভয় করে না।

চরিত্র হরণের কারণ: চরিত্রহীন মানুষের সাথে পশুর তুলনা দেওয়া হয়। অর্থাৎ চরিত্রহীনতা ও পাশবিকতার মধ্যে কোনো প্রভাব নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সঙ্গদোষ চরিত্র হরণের অন্যতম প্রধান কারণ। মানুষ যাদের সাথে মিশে তারা অতি সহজে প্রভাবিত হয় ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। চরিত্র স্বর্গীয় সম্পদ। কিন্তু এ চরিত্র হারালে মানুষ পশুত্বের পর্যায়ে নেমে যায়। হীন, ভোগ- লালসা বশবর্তি হয়ে মানুষ যখন পাপাচারে লিপ্ত হয়ে নিজের রিপুকে দমন করতে পারে না তখন সে হয়ে ওঠে চরিত্রহীন।

সচ্চরিত্রের গুণাবলী: সচ্চরিত্রতা মানব জীবনের একটি স্বর্গীয় সম্পদ। চরিত্রবান লোক দেশ ও জাতির গৌরব। সবচেয়ে দুর্লভ শোভনীয় ধন, মনের মানুষ আর মানুষের মন —সেই দুর্লভ লোভনীয় ধনেরই অধিকারী চরিত্রবান। চরিত্র বলেই মানুষ পায় মানুষের ভালোবাসা, পায় শ্রদ্ধা-ভক্তি, পায় তাদের নেতৃত্ব। চরিত্রগুণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ, চরিত্র বলেই মানুষ মহত্বের অধিকারী হন।

চরিত্র গঠনের উপায়: চরিত্র গঠনের কোন বিধিবদ্ধ নিয়ম বা সূত্র নেই। চরিত্র গঠনে ইচ্ছা ও অধ্যাবসায়ী হচ্ছে সবচেয়ে বড় শক্তি। তবে বাল্যকালেই চরিত্র গঠনে যথার্থ সময়। পরিবার চরিত্রগঠনের আদর্শ বিদ্যাপীঠ। সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের স্তর অনুযায়ী শিশুর চরিত্র বিকশিত হয়। তাই চরিত্র গঠনের জন্য বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে একটি আদর্শ পরিবার। এছাড়া প্রতিবেশীও সহচরদের মাধ্যমেও চরিত্র গঠিত হয়। যে কারণে বলা হয়—“সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে” কিংবা”সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ”।

চরিত্রের মূল্য: চরিত্র মানুষের মহার্ঘ তম বস্তু, শ্রেষ্ঠতম অলংকার। সৎ চরিত্র অন্য সম্পদ অপেক্ষা অধিক মূল্যবান। চরিত্র গৌরবে বলীয়ান মানুষ পৃথিবীতে বিরাজ করে দেবতার মহিমায়। চরিত্রবান ব্যক্তি সমাজের শিক্ষা স্বরূপ। সে অর্থ-সম্পদে দীন হলেও গৌরবে মহান। কথায় আছে,– “রাজার জোর অর্থের আর চরিত্রবান ব্যাক্তিদের জোড় হৃদয়ের”। পক্ষান্তরে চরিত্রহীন ব্যক্তি পশুর সদৃশ। সে সৌরভ বিহীন পুষ্পের মত। তাই কেউ তাকে সম্মান করে না চরিত্র বলেই মানুষ সুন্দর ও সার্থক হয়ে ওঠে।

চরিত্রহীনতার কুফল: মানবের স্বর্গ সম্পদ একমাত্র চরিত্র। যার চরিত্র নেই, তার কিছুই নেই। সে সকলের কাছে ঘৃণার পাত্র। মানব সমাজে তার স্থান নেই। সে মানুষ নামের অযোগ্য, কেউ তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেনা। চরিত্রহীন ব্যক্তির বিদ্যা-বুদ্ধি ধন প্রভৃতি যতই থাকুক না কেন, কিছুতেই সে মানুষের মন জয় করতে পারে না। চরিত্রহীন মানুষ অন্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সে জীবনে কোনো উন্নতি করতে পারে না। সে সমাজেও বহিস্কৃত।

উপসংহার: মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার হচ্ছে তার চরিত্র। চরিত্র ছাড়া মানুষের গৌরব করার মত আর কিছুই নেই। সুতরাং আমাদেরকেও মহাজ্ঞানী ও মহাজনদের মত পবিত্র চরিত্রের অধিকারী হতে হবে চির স্মরণীয় চির স্মরণীয়।

আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের প্রতিটি লেখায় সুন্দর এবং সহজ ভাবে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার। এতে করে আপনাদের বুঝতে এবং পড়তে খুব সহজ হবে সেই ভাবেই আমরা আমাদের প্রতিটি বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরি। তাই আপনারা বেশি বেশি করে আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং অন্যদের ভিজিট করতে সহযোগিতা করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button