
আমরা আজকে যে রচনাটি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি সেটি আমরা বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে প্রায়শই দেখে থাকি। সেটি হল ইভটিজিং। এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। এমন কোন ক্ষেত্র নাই যেখানে নারীরা ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে না। হ্যাঁ শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা এর উপরেই আজকে রচনা নিয়ে আলোচনা করব। আমরা যতটুকু পেরেছি ততটুকু এর উপরে রচনা লিখেছি আসলে ইভটিজিং এর উপর রচনা লিখলে এই কোন শেষ নেই তারপরেও আপনারা আপনাদের নিজেদের মতো করে অন্যান্য বইয়ের সহযোগিতা নিয়ে আরো ভালো হবে এই রচনাটি শেষ করবেন।
ইভটিজিং
ভূমিকা: “ইভ টিজিং” এই শব্দটির সাথে কম বেশী সবাই পরিচিত। তবে মেয়েরা বেশী পরিচিত। করণ স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, বাসে, রিকশায়, রাস্তায় চলাচলের সময় অথবা বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেয়ার সময়ে ইভ টিজিং এর শিকার হয় মেয়েরা। স্বাভাবিক ভাবে ইভ টিজিং বলতে চোখের সামনে এমন এক চিত্র ভাসে যেখানে কিছু স্কুল পড়ুয়া মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে পাশ থেকে বখাটে ছেলেরা বাজে মন্তব্য করছে, শিস দিচ্ছে। বাংলাদেশে ইভ টিজিং অন্যতম একটি সামাজিক ব্যাধি৷ ইভ টিজারারা হয়ে উঠছে বেপরোয়া ৷ তাদের শিকার হয়ে মেয়েরা অনেক সময় আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে ৷ হত্যারও শিকার হচ্ছে তারা ৷ প্রতিরোধে আইনও আছে, তারপরও থামছে না ইভ টিজিং৷
ইভটিজিং কি: ইভটিজিং মূলত প্রকাশ্যে যৌন হয়রানি। পথে-ঘাটে উত্ত্যক্ত করা বা পুরুষ দ্বারা নারী নির্যাতনের নির্দেশক একটি শব্দ।
‘ইভ’ শব্দটি বাইবেলের ‘ইভ’ (Eve) বা পবিত্র কোরআনের ‘হাওয়াকে’ বোঝায়। অন্যদিকে টিজিং শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘পরিহাস বা জ্বালাতন’। সুতরাং ‘ইভ’ বলতে বোঝায় নারী বা রমণী এবং টিজিং বলতে বোঝায় উত্ত্যক্ত বা বিরক্ত করা। আধুনিক সমাজে ‘ইভটিজিং’ শব্দটি ‘যৌন হয়রানি’ (Sexual Harassment) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
‘যৌন হয়রানি’ হচ্ছে সেই ধরনের কর্মকাণ্ড ও আচরণ, যা মানুষের যৌনতাকে উদ্দেশ্য করে মানসিক ও শারীরিকভাবে করা হয়। ইভটিজিং” নারী নিগ্রহ ও উত্যক্ত নির্দেশক কাব্যিক শব্দ মনে হলেও এর পরিধি এবং ভয়াবহতা ব্যাপক। ব্যাপক অর্থে ইভ টিজিং বলতে কোনো মানুষকে বিশেষ করে কোনো নারী বা তরুণীকে তার স্বাভাবিক চলাফেরা বা কাজকর্ম করা অবস্থায় অশালীন মন্তব্য করা, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দেয়া, ভয় দেখানো, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, তার নাম ধরে অকারণে ডাকা এবং চিৎকার করা, বিকৃতি নামে ডাকা, কোনো অশালীন শব্দ করা, শীস দেয়া, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে, যানবাহনে বা জনবহুল স্থানে ইচ্ছে করে ধাক্কা লাগানো, কোনো কিছু ছুড়ে দেয়া, ব্যক্তিত্বে লাগে এমন কোনো মন্তব্য করা, ধিক্কার দেয়া, তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা, পথ আগলে দাঁড়ানো, সিগারেটের ধোঁয়া গায়ে ছাড়া বা কবিতাংশ আবৃত্তি করা, চিঠি লেখা, প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি প্রদান ইত্যাদি ইভটিজিং এর মধ্যে পড়ে।
শুনতে খারাপ লাগলে এ কথাটাও সত্য অনেক শিক্ষিত লোকজন আছে যারা নানান ভাবে নারীদের ইভ টিজিং করে।
কারা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়?
কিশোরী মেয়ে, শিশু, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রীবৃন্দ, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত নারী শ্রমিকরা, বিভিন্ন অফিসে কর্মরত নারী কর্মচারী, কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক, ডাক্তারসহ সকল স্তরের নারীরা। ইদানীং পাবলিক পরিবহনেও নারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন।
ইভটিজিং বন্ধে যারা ভূমিকা রাখতে পারে:
পরিবারের সদস্য ও একে অপরকে সচেতন করতে পারেন;
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষিকারা;
কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীরা;
রাস্তাঘাটে চলাচলকারী সাধারণ জনগণ;
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী;
বিজ্ঞ আদালত;
ভ্রাম্যমাণ আদালত;
জনপ্রতিনিধি;
সাংবাদিকসহ সব সচেতন মানুষ;
ইভটিজিং প্রতিরোধ: ইভটিজিং এমন একটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে যা প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের সম্মিলিতভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ইভটিজিং প্রতি রোধে আমাদের যা করণীয়;
১। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
২। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লাসরুমে ইভটিজিং সম্পর্কে আলোচনা করা এবং নেতিবাচক বিষয় তুলে ধরা।
৩। গণমাধ্যমে ইভটিজিং উৎসাহিত হয় এ ধরনের বক্তব্য, বিজ্ঞাপন, নাটক কঠোরভাবে প্রচার না করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সচেতন ও কার্যকর করা।
৫। ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটলে ভিকটিমের পাশে সবাইকে দাঁড়ানো।
৬। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ইভটিজিং প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা।
উপসংহার: নারী-পুরুষ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, একে অপরের সহযোগী। নারীর প্রতি পুরুষের সহিংসতা সমাজকে ভালো কিছু দিতে পারে না। এর ফলে সমাজ শুধু পিছিয়েই পড়ে । নারীর প্রতি পুরুষের সম্মান ও মর্যাদা প্রদান বদলে দিতে পারে আমাদের সমাজজীবন, বন্ধ করতে পারে ইভটিজিং এর মতো ঘৃন্য অপরাধ।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আসুন সবাই ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আমাদের কন্যা, জায়া ও জননীদের পথচলা নিরাপদ করায় সবাই এগিয়ে আসি।
Leave a Reply