রচনা: নারী শিক্ষার গুরুত্ব অথবা নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অথবা জাতি গঠনে নারী শিক্ষার গুরুত্ব

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আমরা আপনাদের সামনে আজকে একটা নতুন রচনা নিয়ে হাজির হয়েছি। আমরা এখানে চেষ্টা করেছি প্রতিটি রচনাগুলোর মূলভাব আপনাদের সামনে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার। আপনারা আমাদের এই ওয়েবসাইটে যে রচনাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলোর পাশাপাশি অবশ্যই পাঠ্য পুস্তকের সহযোগিতা নিবেন। এর কারণ হলো আমরা শুধু এখানে চেষ্টা করেছি প্রতিটা রচনার মূল অংশ গুলো তুলে ধরার। আপনারা যদি আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই অন্যান্য বইয়ের সহযোগিতা নিবেন। আজকে আমরা আমাদের রচনা যে বিষয়টি সেটি হল:
নারী শিক্ষার গুরুত্ব
অথবা নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
অথবা জাতি গঠনে নারী শিক্ষার গুরুত্ব
প্রবন্ধ সংকেত: ভূমিকা-নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা-বিশ্ব সভ্যতায় নারীর অবদান-নারী শিক্ষা সম্পর্কে গৃহীত পদক্ষেপ-স্বাবলম্বীতা অর্জনে নারী শিক্ষা-দেশ গঠনে নারী শিক্ষার গুরুত্ব-ইসলাম ধর্মে নারী শিক্ষা-উপসংহার।
ভূমিকা: “এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”।
যেকোনো দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির পেছনে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও ভূমিকা রয়েছে। আর এজন্য নারী জাতিকে শিক্ষিত করে তোলা অপরিহার্য। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, “আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি উন্নত জাতি উপহার দেব”। নারীকে পশ্চাতে রেখে উন্নয়ন প্রত্যাশা করা যায় না। দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নতির জন্য নারী শিক্ষার প্রয়োজন অপরিহার্য।
নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা: নারী ও পুরুষের সমান ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জাতীয় উন্নতি নিশ্চিত হতে হবে। বেগম রোকেয়া তার এক প্রবন্ধে বলেছেন, “সংসার হল দ্বি-চক্রযানের মত। এর এক চক্র পুরুষ এবং অন্য চক্র নারী। ফলে কোন একটি চক্র বড় এবং অন্যটি ছোট হলে সেই গাড়ির সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে না। তাই নারীকে বাদ দিয়ে আর্থসামাজিক উন্নতি কল্পনা করা যায় না। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও বাস্তবমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। নারী শিক্ষার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্ব সভ্যতায় নারীর অবদান: সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে সভ্যতার এ চরম বিকাশের পর্যায় পর্যন্ত সর্ব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের যৌথ প্রচেষ্টাতেই সবকিছু বদল ঘটানো সম্ভব হয়েছে। নারী কখনও পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে বাইরে, কখনো ঘরের সমস্ত দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়ে পুরুষকে সহায়তা করেছে। উন্নত দেশে নারীদের অবস্থান আজ সুদৃঢ় হবার পেছনে প্রধান কারণ হলো স্ত্রী- শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি এসব দেশের অগ্রগতি ও উন্নতির পেছনে নারীদের অবদান কম নয়। এসব দেশের নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।
নারী শিক্ষা সম্পর্কে গৃহীত পদক্ষেপ: নারী শিক্ষা বিস্তারে স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। অবশ্য পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই যৎসামান্য। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত নারীদের অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। তাছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও এনজিও নিজেদের উদ্যোগে নারী শিক্ষা বিস্তারে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
দেশ গঠনে নারী শিক্ষা গুরুত্ব: যেকোনো দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। সুতরাং নারীদেরকে অশিক্ষিত রেখে জাতীয় অগ্রগতি কল্পনা করা যায় না। উন্নত দেশগুলো নারীদেরকে কর্মসংশ্লিষ্ট করার মাধ্যমে জাতীয় উন্নতির ত্বরান্বিত করেছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান স্বাধীনতা অর্জনের ধাপগুলোতেও নারীরা পুরুষের পাশে থেকে অবদান রেখেছে।
ইসলাম ধর্মে নারী শিক্ষা: আমাদের নারী শিক্ষার বিস্তারে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্মীয় কুসংস্কার ও দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতা। ইসলামে নারী পুরুষ উভয়ের জন্য শিক্ষা অর্জন কে গুরুত্ব সহকারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। অথচ ধর্মের অজুহাতে নারীকে করে রাখা হয়েছে অবগুন্ঠিত। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটতে শুরু করেছে বর্তমানে।
উপসংহার: উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায় তারা লিঙ্গগত বৈষম্যের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের প্রতিটি নাগরিককে শিক্ষিত করে তুলেছে। সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের পক্ষে জাতীয় উন্নতির ভিত রচনা করা সম্ভব হয়েছে। আমরা যদি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কথা বিবেচনায় রাখি তাহলে নারীশিক্ষাকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। নারীকে অশিক্ষিত রেখে জাতীয় উন্নয়নের কথা কল্পনাও করা যায় না। একটি দেশের উন্নতি তখনই সম্ভব যখন দেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা সংযুক্ত হয়।