রচনা: নিয়মানুবর্তিতা

রচনা: নিয়মানুবর্তিতা

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ বাংলা ব্যাকরণ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো প্রবন্ধ রচনা। এই প্রবন্ধ রচনা গুলো আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে সুন্দরভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমরা গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষায় আশার উপযোগী রচনাবলী আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। আমরা প্রতিটি রচনা চেষ্টা করেছি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপস্থাপন করার এর মধ্যেও কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমরা শুধুমাত্র মূল বিষয়টা তুলে ধরেছি বাকিটা আপনারা আপনাদের নিজের মতো করে আলোচনা করে নিবেন। আজ আমরা যে রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব সেটির নিম্নে দেওয়া হল:

নিয়মানুবর্তিতা

সংকেত: ভূমিকা-প্রকৃতিতে নিয়মানুবর্তিতা; সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নিয়মানুবর্তিতা-শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় নিয়মানুবর্তিতা-ছাত্রজীবনে নিয়মানুবর্তিতা-নিয়মানুবর্তিতা চর্চার সময় ও ক্ষেত্র-উপসংহার।)

ভূমিকা: আমরা সবাই একটা নির্দিষ্ট নিয়ম এর মধ্যেই চলাচল করি। আমাদের চারপাশের সবকিছুই নিয়মের সূক্ষ্ম জালে আবদ্ধ। প্রকৃতি থেকে শুরু করে মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে নানা নিয়ম শৃঙ্খলা। সবাইকেই এসব নিয়ম মেনে চলতে হয়। নিয়ম ভঙ্গ করলে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। নিয়ম মেনে সুশৃঙ্খলভাবে বসবাস করাকেই বলা হয় নিয়মানুবর্তিতা।

প্রকৃতিতে নিয়মানুবর্তিতা: প্রকৃতির সকল কিছুই একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে চলে। প্রকৃতিতে কোন একটা জিনিস হুট করে বা রাতারাতি কোন কাজ সম্পন্ন হয় না। কোন একটা জিনিস ছোট থেকে আস্তে আস্তে সেটা বড় হয়। প্রকৃতিতে ষড়ঋতু আসে তার নিজস্ব নিয়মে একটি নির্দিষ্ট ক্রম অনুসারে। প্রতিদিন সূর্য ওঠে, তার আলো-উত্তাপ উজাড় করে দেয় পৃথিবীর বুকে। আবার দিন শেষে অস্ত যায়। নিয়ম ভঙ্গ করে কখনোই সে অসময়ে আবির্ভূত হতে পারে না। আবার সময়ের আগেই অস্ত যেতে পারে না। সৌরজগতের সকল গ্রহ-উপগ্রহ আবর্তিত হয় তাদের নিজস্ব কক্ষপথে। কাজেই দেখা যায় প্রকৃতি সর্বত্র একটা ভারসাম্যমূলক নিয়ম প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে তার বাহিরে যাওয়া অসম্ভব।

সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নিয়মানুবর্তিতা: মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে একত্রে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ নানা নিয়ম নীতি প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব নিয়ম-নীতি মেনে চললে মানুষের মনে শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত হয়। এই শৃঙ্খলাবোধ সমাজ থেকে নানা অন্যায়-অবিচার দূরীভূত করতে সাহায্য করে। ফলে সমাজজীবন হয়ে ওঠে সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ।

একইভাবে রাষ্ট্রীয় জীবনেও নিয়মানুবর্তিতার চর্চা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি রাষ্ট্রের কিছু নির্দিষ্ট অনুশাসন থাকে, যা সেই রাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রতিটি নাগরিককে মেনে চলতে হয়। এসব অনুশাসন ভঙ্গ করলে সে নাগরিক রাষ্ট্রের আইনে অপরাধী বলে গণ্য হয় এবং রাষ্ট্র তার নিজস্ব নিয়মে ঐ অপরাধীর শাস্তি প্রদানের অধিকার রাখে। নিয়মানুবর্তিতা তাই সুনাগরিকের অন্যতম গুণ।

কর্মক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতা: জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রতিটি মানুষকেই কোনো না কোনো কাজে নিয়োজিত থাকতে হয়। কর্মক্ষেত্রে নানা ধরণের নিয়ম-নীতি রয়েছে। প্রত্যেক কর্মচারীকেই এসব নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন, সময় মতো কর্মস্থানে পৌঁছানো, নিজের কাজ ঠিক মতো করা, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কর্মস্থলে অবস্থান করা ইত্যাদি।

কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীর নিয়মানুবর্তিতার অভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমে যেতে পারে। এতে সে প্রতিষ্ঠানের মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই অফিসের নিয়ম-শৃঙ্খলা ঠিক মতো পালন না করলে কর্মচারীদের উপর মালিক মনক্ষুণ্ন হয়। এমনকি বেতন কাটা, বহিষ্কার প্রভৃতির মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটারও সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রত্যেকের উচিত কর্মক্ষেত্রে সকল নিয়মশৃঙ্খলা মেনে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ করা।

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় নিয়মানুবর্তিতা: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। শরীর সুস্থ থাকলে মানুষ সকল কাজে উদ্যম পায়। শরীর অসুস্থ থাকলে তার প্রভাব মনের উপরও পড়ে। ফলে সার্বিক সুখ-শান্তি নষ্ট হয়। সুস্বাস্থ্যই জীবনে উন্নয়নের প্রধান শর্ত। সুস্বাস্থ্য অর্জন করা সম্ভব নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে। শুধুমাত্র শারীরিক নয় মানসিক সুস্থতার জন্যও নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন।

ছাত্রজীবনে নিয়মানুবর্তিতা: ছাত্রজীবন নিয়মানুবর্তিতা প্রয়োগের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ও ক্ষেত্র। আজকের ছাত্র আগামী দিনে জাতির নেতৃত্ব প্রদানকারী। তাই তাদের যথাযথ নেতৃত্ব দানের জন্য উপযুক্তভাবেই গড়ে ওঠতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন নিয়মানুবর্তিতা অর্জন ছাত্রজীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু পড়াশুনার পাশাপাশি তাদের নিয়মিত পাঠক্রম বহির্ভূত আরো অনেক শিক্ষা অর্জন করতে হয়। তাছাড়া সমাজের যে কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ছাত্ররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করে থাকে। যে কোনো বিপদে-আপদে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাধারণ মানুষের সেবায় তারা অগ্রগণ্য।

নিয়মানুবর্তিতা চর্চার সময় ও ক্ষেত্র: নিয়মানুবর্তিতা চর্চার শুরু হওয়া উচিত শিশুকাল থেকে। শিশু মন অত্যন্ত নরম; কাদা মাটির মতো। এ সময় মনে যে ছাপ লাগে তা সারাজীবনের জন্য স্থায়ী হয়ে যায়। শিশুকালে নিয়মানুবর্তিতায় অভ্যস্ত হলে মানুষ সারাজীবন এর প্রয়োগ ঘটাতে পারে। শিশুদের নিয়মানুবর্তিতা চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে পরিবার। পরিবারই নিয়মানুবর্তিতা চর্চার প্রাথমিক ক্ষেত্র।

উপসংহার: পরিশেষে উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, পৃথিবীতে সবকিছুই নিয়মমাফিক চলে। যদি আমরা সময়ের সদ্ব্যবহার করে তাহলে দেশ এবং জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। কারন মানুষ ছোট থেকেই বড় হয়। সব কিছু নিয়মের মধ্যে থাকলে আমরাও আমাদের দেশকে উন্নতির কাতারে দাঁড় করাতে পারবো।

About শাহরিয়ার হোসেন 4780 Articles
Shahriar1.com ওয়েবসাইটে আপনার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় যা কিছু দরকার সবকিছুই পাবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*