রচনা: আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী সমাজের ভূমিকা অথবা অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী সমাজের গুরুত্ব

রচনা: আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী সমাজের ভূমিকা অথবা অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী সমাজের গুরুত্ব

আপনারা যারা বাংলা ব্যাকরণ এর বিভিন্ন বিষয় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খুজতেছেন তারা এখনই আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। এখানে বাংলা ব্যাকরণ এর বিভিন্ন অধ্যায়ে গুলো সুন্দর ভাবে আমরা আলোচনা করেছি। বিশেষ করে প্রবন্ধ রচনা, ভাব-সম্প্রসারণ আরো অনেক নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে আমরা তুলে ধরব। আমরা আজকে যে রচনা টা নিয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করব সেটি নিম্নে তুলে ধরা হলো:

আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী সমাজের ভূমিকা
অথবা অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী সমাজের গুরুত্ব

ভূমিকা: পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। কিন্তু তা সত্বেও পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা বরাবরই অবহেলিত। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশে নারীদের বিভিন্ন ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামাজিক কুসংস্কার ও বৈষম্যের বেড়াজালে ফেলে অন্তঃপুরে বন্দী করে রাখার প্রবণতা রয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী সমাজ: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষত রাজনীতি, শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন, অফিস আদালতে দায়িত্ব পালন থেকে শুরু করে ঘর গৃহস্থালী পর্যন্ত সর্বত্রই নারীরা পুরুষের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

গৃহস্থালী কাজে নারী: নারীরা একই সঙ্গে সন্তান লালন-পালন থেকে শুরু করে সাংসারিক কাজকর্ম সমাধা করে থাকে। বিশেষত ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত একটি সংসারের যাবতীয় কাজ নারীরাই করে। গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি নারীরা গৃহপ্রাঙ্গণে বিভিন্ন শাক সবজির চাষ করে এবং হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন করে পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছে।

কৃষি ক্ষেত্রে নারী: বাংলাদেশ মূলত কৃষি প্রধান দেশ। আমাদের দেশে বর্তমানে কৃষিকাজেও নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ ফসল গোলায় তোলা, বীজ সংরক্ষণ করা, খাবারের জন্য শস্য ভাঙ্গানো ও পরিষ্কার করা, পাটকাঠি হতে আঁশ ছাড়ানো, পশু ও হাঁস-মুরগির যত্ন নেওয়া, শাকসবজির চাষ ইত্যাদি উৎপাদন মূলক কাজের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। সময়ের পরিমাপে ও গুরুত্বের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যায়, কৃষি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ কোনভাবেই পুরুষের চেয়ে কম নয়।

পোশাক শিল্পে নারী: বাংলাদেশের সর্বাধিক ও সর্ব বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প হচ্ছে তৈরি পোশাক। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৭৬ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক শিল্প থেকে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত মোট জনবল এর দুই তৃতীয়াংশই নারী। দক্ষ ও অদক্ষ নারী শ্রমিকরা সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত এদেশের গার্মেন্টসগুলোতে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অক্লান্ত শ্রমের বিনিময়ে প্রস্তুতকৃত তৈরি পোশাক দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং এভাবে কোটি কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে যা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে নারী: ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সঙ্গে দেশের হাজার হাজার নারী জড়িত। ঘরে বসেই নারীরা বাঁশ, পাট, বেতন, মাটি প্রভৃতি দিয়ে তৈরি করছে দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র থেকে শুরু করে খেলনা পর্যন্ত। এ দেশের নারীদের তৈরি নকশি কাঁথা ও পাটজাত দ্রব্যাদি বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এনজিও-তে নারী: দেশে সম্প্রসারিত দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ দেশি-বিদেশি অসংখ্য এনজিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এসব এনজিও তে নারীদের অংশগ্রহণে বেশি এবং এক্ষেত্রে মোট জনবল এর এক-তৃতীয়াংশ নারী। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নারীরা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

চা- শিল্পে নারী: বাংলাদেশ ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে এবং চা উৎপাদনে বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্বের নবম অবস্থানে রয়েছে। আর এই চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের বেশিরভাগই নারী। বিশেষত বাগানের সার্বিক যত্ন নেওয়া চা গাছের পরিচর্যা করা এবং বাগান থেকে কাঁচা চা পাতা তুলে তা প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত নারী শ্রমিকরা জড়িত রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চা রপ্তানি করে কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে এবং আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

উপসংহার: আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অত্যন্ত গুরুত্ব ভূমিকা পালন করছে। নারীরা এখন আর সনাতন সংস্কারে বিশ্বাসী নয়। তারা এখন বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন এবং নিজেদের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা অর্জনে তৎপর। তারা একদিকে চায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মুক্তি আর অন্যদিকে চায় অর্থনৈতিক মুক্তি। নিজেদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে নারীরা আজ কৃষি ক্ষেত্র থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ পর্যন্ত সর্বত্রই অবাধ বিচরণ করছে। আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীরাও পুরুষদের সাথে সমান ভূমিকা রাখবে।

About শাহরিয়ার হোসেন 4780 Articles
Shahriar1.com ওয়েবসাইটে আপনার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় যা কিছু দরকার সবকিছুই পাবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*