মানুষ সামাজিক জীব। প্রতিটা মানুষই নিজ নিজ সমাজে বসবাস করে। আর আশেপাশের সকল কিছু নিয়েই এক একটা পরিবেশ তৈরি হয়। বেঁচে থাকার জন্য আমরা পরিবেশকে নানা ভাবে ব্যবহার করি। কিন্তু দিন দিন পরিবেশ দূষণ বেড়েই চলেছে। তাই আমাদের উচিত পরিবেশ দূষিত যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা যে রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব সেটি হল পরিবেশ দূষণ।
পরিবেশ দূষণ
অথবা পরিবেশ দূষণের কারণ ও প্রতিকার
অথবা পরিবেশের ভারসাম্য
অথবা পরিবেশ সংরক্ষণ
প্রবন্ধ সংকেত: ভূমিকা-পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণ কি? পরিবেশ দূষণের স্বরুপ- পরিবেশ দূষণের কারণ- পরিবেশ দূষণের প্রভাব-প্রতিকার- পরিবেশ সংরক্ষণে করণীয়- উপসংহার।
ভূমিকা: পৃথিবীজুড়ে ঘনিয়ে আসছে পরিবেশ সংকট। সুস্থ পরিবেশের সুস্থ্যজীবন এখন আর নেই। স্রষ্টা প্রদত্ত প্রকৃতির রাজ্য আজ বিপন্ন প্রায়। সেই সাথে মানব জীবন ও প্রাণী জগৎ আজ প্রকৃতির বিষন্নতায় ধ্বংসোন্মুখ।
পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণ কি?: মানুষ চারপাশে যা কিছু নিয়ে বাস করে তাই তার পরিবেশ। বেঁচে থাকার জন্য আমরা পরিবেশকে নানা ভাবে ব্যবহার করি। ফলে পরিবেশে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন জীবের জন্য ক্ষতিকর হয়, তখন তাকে আমরা পরিবেশ দূষণ বলি।
পরিবেশ দূষণের কারণ: পরিবেশ দূষণের অনেক কারণ রয়েছে। পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিল্পায়ন। শিল্প-কারখানা সচল রাখতে বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন– তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারই দূষণের প্রধান উৎস।
পরিবেশ দূষণে আরেকটি অন্যতম কারণ হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি। প্রয়োজনীয় খাদ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য মানুষ পরিবেশ ধ্বংস করছে। পরিবেশের বেশিরভাগ দূষণ মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ডের ফল এই হয়ে থাকে। এছাড়াও যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বিষাক্ত গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড ছড়াচ্ছে। তাছাড়া যানবাহনের তীব্র শব্দ দূষণ ঘটাচ্ছে যা মানুষের স্নায়ুবিক বৈকল্য, নিদ্রাহীনতা, মানসিক রোগী তাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পরিবেশ দূষণের প্রভাব: পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ জীবজন্তু ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দূষণের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়, যেমন ক্যান্সার, শ্বাসজনিত রোগ, পানিবাহিত রোগ ইত্যাদি। পরিবেশ দূষণের ফলে জীব জন্তু আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। খাদ্য শৃংখল ধ্বংস হচ্ছে। ফলে অনেক জীব পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হিমবাহ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে।
প্রতিকার: নিম্নে পরিবেশ দূষণের প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
সচেতনতা বৃদ্ধি: প্রথমেই মানুষের মাঝে পরিবেশ দূষণ এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ: জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে না পারলে পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
বৃক্ষরোপণ: বৃক্ষনিধন বন্ধ ও প্রচুর বৃক্ষ রোপন করে পরিবেশের সুস্থতা ফিরিয়ে আনা যায়।
সামাজিক আন্দোলন: পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে এক দুর্বার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণে করণীয়: পরিবেশ সংরক্ষণে যেসব করণীয় রয়েছে সেগুলো হলো:
জাতীয় পরিবেশ নীতির সফল বাস্তবায়ন;
আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করা;
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ;
পরিবেশ সংরক্ষণে রাজনৈতিক অঙ্গীকার;
পরিকল্পিত নগরায়ন;
ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ;
শিল্প বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ;
বর্জ্যের নিরাপদ অপসারণ:
নিরাপদ পানির ব্যবহার;
পরিবেশ সম্পর্কে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা;
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা;
বন্যা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন;
উপকূলীয় বনরাজি সম্প্রসারণ;
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানো;
উপসংহার: এই বিশ্বকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাসের উপযোগী করতে চাইলে আমাদের সকলকে পরিবেশে সুস্থতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা পরিবেশ দূষণ রোধ করতে পারি। পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে সকলকে অবহিত করে সকলের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে তাহলেই সুন্দর পরিবেশ আমরা গড়ে তুলতে পারব।
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আমরা আজকে যে রচনাটি নিয়ে আলোচনা করলাম আমরা চেষ্টা করেছি সহজ এবং সুন্দর ভাষায় প্রতিটা রচনা উপস্থাপনা করার। আমরা প্রতিটা রচনা লেখার সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চেষ্টা করেছি প্রত্যেকটা পয়েন্ট সম্পূর্ণভাবে আলোচনা করার। আর যে পয়েন্ট গুলো আলোচনা করা হয়নি সেগুলো আপনারা অবশ্যই আপনাদের পাঠ্যপুস্তক এর সহায়তায় বিস্তারিত জেনে নেবেন।
Leave a Reply