আজকে আমরা যে রচনাতে নিয়ে আলোচনা করব সেটি মূলত ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী একটি রচনা। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় এই রচনাটি এসে থাকে। আজকে যে রচনাটিকে আলোচনা করব সেটি নিম্নে তুলে ধরা হলো:
সততা
প্রবন্ধ সংকেত: ভূমিকা-সততা কি-মানব জীবনে সততার প্রয়োজনীয়তা-সমাজ জীবনে সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তা- সততা হীনতার পরিনাম- উপসংহার।
ভূমিকা: মানুষের রয়েছে কিছু মহৎ, নৈতিক ও মৌলিক মানবিক গুণাবলী। যেসব গুণ মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে তার মধ্যে সততা অন্যতম। সততা একটি সর্বশেষ্ঠ মানবীয় গুণ। সততার গুণ অর্জন ছাড়া মানুষের জীবন পশুতে পর্যবসিত হতে বাধ্য। জীবনকে সার্থক করে তোলার ক্ষেত্রে সততার বিকল্প নেই।
সততা কি: সততা মূলত একটি বিমুর্ত ধারণা। তবে এটি একটি কাঙ্খিত ও ইতিবাচক প্রত্যয়। সততা মূলত সৎ মানুষের সামগ্রিক জীবনাচরণেরই স্বরূপ। দেশ-কাল-পাত্র ভেদে সততার কোন পার্থক্য নেই। সততার লক্ষণ যার মধ্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাকেই মানুষ নির্দ্বিধায় সৎ বলে থাকেন।
মানবজীবনে সততার প্রয়োজনীয়তা: মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। কিন্তু মানুষ জন্ম মাত্রই এ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হয় না। তাকে সৎ, সুন্দর ও কল্যাণের সাধনায় মনুষত্ব অর্জনের মাধ্যমে মানুষ হয়ে উঠতে হয়। একজন সৎ মানুষ সকলে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় অভিষিক্ত হয়। বস্তুগত অভাব থাকলেও সে জীবনে কোনদিনই অভাব তাড়িত হয় না কোনদিনই তার জীবন থেমে যায় না। সৎ মানুষকে সকলে অনুসরণ ও অনুকরণ এর যোগ্য বলে মানে। সততার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজেকে সর্বজয়ী করে তোলে।
সমাজ জীবনে সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তা: সামাজিক অনুশাসন ধর্মীয় মূল্যবোধ আইন সবকিছুই সততার সংরক্ষক। সমাজ মানুষের বসবাস কেন্দ্রই শুধু নয় এটি মানুষকে দেয় নিরাপত্তা ও সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা। আর এ সবই সামাজিক জীবনের সততার উপস্থিতির সাথে সম্পর্কিত। সমাজের সততার মূল্য ও পরিচর্যা না থাকলে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। লোভ হিংসা অনাচারে সমাজ ছেয়ে যায়। সমাজের মানুষ যদি সততার সাধক হয় তাহলে মানুষের সামাজিক জীবন সুখময় হতে বাধ্য।
সততা অর্জনের সময়: সততার জীবনের কোনো আংশিক বা বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। এটি জীবনের কোনো বিশেষ সময়ের প্রয়োজনে নয়। মূলত একটি জীবনব্যাপী একটি সাধনা।
সততাই শ্রেষ্ঠ পন্থা: ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে honesty is the best policy সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। প্রবাদটি মানব জীবনে চিরন্তন সত্য হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ এ পৃথিবীতে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য নানা বিরুদ্ধ পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে লড়াই করতে হয়। লড়াই একজন মহৎ ব্যক্তির শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে তার ব্যক্তি চরিত্রের মহৎ গুণাবলী সততা। মহামানবদের জীবনী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সততার বলে বলিয়ান হয়ে তাঁরা বাস্তব জীবনের কঠিন সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই তবেই খ্যাতিমান স্মরণীয়-বরণীয় হয়েছেন।
সততা হীনতার পরিনাম: সততা হীনতার পরিণাম অত্যন্ত মারাত্মক ও ভয়াবহ। নৈতিক অবক্ষয়ের ফলে সমাজ জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে ও মানুষ তার মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশু ধর্মের পতিত হয়। এর ফলে মানুষ ও পশুর মধ্যে কোন প্রভেদ থাকে না এবং সর্ব প্রকারের সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে বিবেক বাঁধা দেয় না। ফলে ব্যাপক অন্যায়-অত্যাচারের প্রসার ঘটে ও জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। মানুষ যখন সততা কে বিসর্জন দেয় তখন তার নিকট ন্যায়-অন্যায় সত্য কোন মূল্যই থাকে না
উপসংহার: আজকের দিনে সৎ-অসৎ, সুন্দর-অসুন্দর, ভালো-মন্দ প্রভৃতির পার্থক্য যেন একাকার হয়ে গেছে। একজন সৎ মানুষ সমাজের দুর্লভ এবং বলাবাহুল্য, যে সৎ মানুষ সে সমাজে বোকা অচল বলেই পরিহাসের পাত্র হয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও সততার নীতি কে উপেক্ষা করা যাবে না। আজকের সর্বময় অবস্থায় সমাজকে কল্যাণকামী করে তোলার জন্য সততার চেতনাটি সকলের মনে প্রজ্বলিত রাখতে হবে। তাই প্রত্যেকটা মানুষের উচিত সৎ মানবিক গুণাবলী দ্বারা নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। আর সততার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে ছোটবেলা থেকেই।
আপনারা বেশি করে আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন । আর আপনাদের কোন মতামত থাকলে তা অবশ্যই প্রদান করবেন। কারন মানুষ মাত্রই ভুল। কেউ ভুলের উর্ধে নয়। আপনাদের প্রত্যেকটা মতামত আমরা গুরুত্ব সহকারে তা সমাধানের ব্যবস্থা করব। সেই সাথে নতুন কোন বিষয় অথবা আইডিয়া থাকলে অবশ্যই জানাবেন যাতে করে আমরা এই ওয়েবসাইটকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
Leave a Reply