আপনারা যদি তালাক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন এবং কি কি কারণে তালাক দেওয়া যায় এ বিষয়গুলো জানতে চান তাহলে আজকে আমাদের ওয়েবসাইটের এই পোস্টের মাধ্যমে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানিয়ে দেব। আমাদের সমাজে বিয়ের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুইজন নরনারী একত্রে বসবাস করার সামাজিক এবং ধর্মীয় স্বীকৃতি পেয়ে থাকে। এর মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন এবং সুন্দর একটি পরিবার সকলের মাঝে প্রদান করায় একটি বিয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।
তবে পরিবারের বিভিন্ন সমস্যার কারণে তালাক নামক বিষয়টি ঘটে থাকে এবং এর মাধ্যমে আলাদা থাকার ব্যবস্থা নিয়ম অনুসরণ করে করা হয়। তবে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন নিয়ম অনুসরণ করা হতে পারে সে বিষয়ে আজকে আপনাদেরকে আমরা ধারণা প্রদান করব। সেই সাথে আমাদের সমাজে কি কি কারণে তালাকের মতো বিষয়গুলো ঘটে থাকে সেগুলো জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।
আপনারা যদি তালাকের প্রকারভেদ জানতে চান তাহলে বলবো যে আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় নিয়ম অনুসরণ করে তালাক প্রদান করা হয়ে থাকে। যদিও আমাদের দেশ মুসলিম প্রধান দেশ তার পরেও এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে উপায়গুলো অনুসরণ করে তালাক প্রদান করা হয়ে থাকে সেগুলো আলোচনা করব। যখন দেখা যায় যে ছেলেপক্ষ এবং মেয়ে পক্ষের মধ্যে কোন কারণে ঝামেলা হচ্ছে এবং সংসার একত্রে করা সম্ভব নয় তখন রাষ্ট্রীয়ভাবে এই তালাগুলো দেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে লেনদেনের বিষয় থেকে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নির্ভর করে যা আজকে আপনাদেরকে আমরা সহজ ভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। রাষ্ট্রীয় নিয়ম অনুসরণ করে দুইভাবে তালাক প্রদান করা যায়।
প্রথম ভাগে আপনাদেরকে বলতে চাই আপনি যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে তালাক প্রদান করতে চান তাহলে একজন রেজিস্টার্ড কাজীর মাধ্যমে তালাক দেওয়া সম্ভব হবে। দুই পরিবার যখন ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে সমঝোতা করতে পারবে না এবং সমস্যা আসলেই প্রকট হয়ে উঠবে তখন তালাক দেওয়াটাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। তাই আপনি যখন রেজিস্টার কাজীর মাধ্যমে তালাক দেওয়ার জন্য যাবতীয় পদ্ধতি অনুসরণ করতে চাইবেন তখন উভয়পক্ষকে রেজিস্টার্ড কাজীর কাছে উপস্থিত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং সাক্ষীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপস্থাপন করতে হবে। আর এই ক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো লেনদেনের বিষয়গুলো।
অর্থাৎ আপনি যেভাবে তালাক প্রদান করুন না কেন দেনমোহরের বিষয়টি যদি পরিশোধ না থাকে তাহলে তালাক দেওয়া যাবে না। দেনমোহর পরিশোধ করে অবশ্যই তালাকের যাবতীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে এবং সেখানে উভয়ের সম্মতিক্রমে যাবতীয় তথ্য প্রদান করে সাক্ষ্য প্রদান করতে হবে। একজন রেজিস্টার্ড কাজীর মাধ্যমে যখন খুশি যে কোন জায়গায় আপনারা তালাক রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন।
কাজির তালাক নিবন্ধন বহিতে প্রত্যেকটি তথ্য লিপিবদ্ধ করার পর এক কপি তথ্য মেয়ে পক্ষকে এবং এক কপি তথ্য ছেলেপক্ষকে প্রদান করা হবে। সেই সাথে ছেলে এবং মেয়ের এলাকায় যে স্থানীয় সরকার বিভাগ রয়েছে তাদের কাছে এক কপি করে এই তালাক রেজিস্ট্রেশনের নকল কপি প্রদান করা হবে। আশা করি এখান থেকে আপনারা রেজিস্টার করা কাজির মাধ্যমে বিষয়গুলো বুঝতে পারলেন।
আর যদি কেউ কোর্টের মাধ্যমে তালাক প্রদান করতে চাই তাহলে এখান থেকে এই নিয়মগুলো পড়তে অনুরোধ করা হলো। বিয়ের সময় যদি দেনমোহর পরিশোধ করা হয়ে থাকে তাহলে ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষকে অথবা মেয়ে পক্ষ ছেলেপক্ষকে নোটিসের মাধ্যমে তালাক প্রদান করতে পারবে। ছেলে পক্ষের ছেলে যদি নিজের ইচ্ছাই কোর্টের মাধ্যমে তালাক প্রদান করে এবং যাবতীয় লেনদেন আগে থেকেই যদি সম্পূর্ণ থাকে তাহলে মেয়ে পক্ষ যদি এই তালাকের নোটিসে হ্যাঁ বলতে সম্মতি জানাই তাহলে তালাক হয়ে যাবে। ঠিক একই ভাবে মেয়ে পক্ষ যদি ছেলে পক্ষকে তালাকের নোটিশ পাঠায় এবং ছেলে পক্ষ যদি সম্মতি জানাই তাহলে তালাক হয়ে যাবে।
তবে অনেক সময় লেনদেনের বিষয়গুলো জড়িত থাকে এবং লেনদেন যদি পরিশোধ না হয়ে থাকে তাহলে সেটা কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দেনমোহর পরিশোধ করার বিষয়ে অনেকেই গড়িমসি করতে থাকে এবং অনেকের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে পরিশোধ করতে সক্ষম হয় না। সেক্ষেত্রে কোর্ট নিরীহ ব্যক্তির পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে টাকা পরিশোধ করার জন্য সময় বেঁধে দেন। অর্থাৎ লেনদেন সম্পূর্ণ থাকলে আপনারা একজন উকিলের মাধ্যমে তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে উভয়ের সম্মতিক্রমে তালাক প্রদান করতে পারবেন।
এখন আপনারা জানতে চেয়েছেন তালাক কি কি কারণে হতে পারে। প্রথমেই বলতে চাই যে স্বামীর অথবা স্ত্রীর শারীরিক অক্ষমতার কারণে তালাক হতে পারে। বিয়ে করার উদ্দেশ্য হলো সন্তান জন্ম দান করার ভিত্তিতে বংশ মর্যাদা রক্ষা করা এবং পরবর্তী প্রজন্ম সৃষ্টি করে রাখা। তাছাড়া এখানে অন্যান্য বিষয়ে জড়িত বলে কেউ যদি অক্ষম হয়ে থাকে তাহলে অনেক সময় তা তালাক হয়ে যায়। তবে বর্তমান সময়ে নারীদের আত্মনির্ভরশীলতার কারণে তালাকের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
শারীরিক বিষয়গুলো ছাড়াও স্ত্রীর খারাপ ব্যবহার অথবা স্ত্রীর সঙ্গে ছেলের পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের সম্পর্ক ভালো না থাকার কারণেও হতে পারে। আবার দেখা যাচ্ছে যে স্বামী নেশাগ্রস্থ এবং নেশাগ্রস্ত হওয়ার পর স্ত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে। স্বাভাবিকভাবে যদি স্ত্রীকে মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় তাহলে সেই কারণে অনেক সময় তালাক হয়ে যেতে পারে। উপরে উক্ত কারণগুলো ছাড়াও আমাদের দেশে অনেক কারণে তালাক হয়ে থাকে।
Leave a Reply