
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ দীর্ঘদিন করোনাকালীন সময়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। এখন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব কিছু খুলে গিয়েছে। এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সশরীরে ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই এখন প্রতিটা সময়ই শিক্ষার্থীদের জন্য মূল্যবান। আর আমাদের এই ওয়েবসাইট সেই সকল শিক্ষা মূলক তথ্য ও সম্প্রচার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
বাংলা ব্যাকরণ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভাব সম্প্রসারণ। আমরা শিক্ষার্থীদের চাহিদা মোতাবেক প্রায় প্রতিটা ভাব-সম্প্রসারণ ই আমাদের এই ওয়েবসাইটে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমাদের এই ওয়েবসাইটে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপযোগী ভাব-সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আজকে আমরা যে ভাব সম্প্রসারণ তিনি আলোচনা করব সেটি নবম-দশম এবং একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপযোগী একটি ভাব সম্প্রসারণ।
ভাব সম্প্রসারণ:
ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।
মূলভাব: ত্যাগই মানবজীবনের মহৎ আদর্শ। ত্যাগের মধ্য দিয়েই মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধিত হয়। যথার্থ মনুষ্যত্ব বোধসম্পন্ন মানুষের পরিচয় তার ভোগ-লালসার মাধ্যমে প্রকাশ পায় না, পরের জন্য ত্যাগের মধ্যেই মানুষের প্রকৃত সুখ নিহিত। নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে যে সুখ, তার মধ্যেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব স্বর্গের অমৃত সুধা। ত্যাগই এর মধ্যেই মানব জীবনের সার্থকতা, ত্যাগই মানুষের একমাত্র আদর্শ হওয়া উচিত।
সম্প্রসারিত ভাব: ভোগ নিজের জন্য, আর ত্যাগ পরের জন্য। ভোগ এবং ত্যাগ এর দরজা সবার জন্যই উন্মুক্ত। মানুষ ভোগে আনন্দ পেলেও তৃপ্তি পায় না। কিন্তু ত্যাগের মাধ্যমে আনন্দ ও তৃপ্তি দুটোই লাভ করা যায়। তাই ভোগ নয়, ত্যাগেই জীবনের লক্ষ্য হওয়া বাঞ্চনীয়।
ষড়রিপুর প্রবল পরাক্রমে মানুষ আত্মসুখে নিমগ্ন হয়। স্বার্থমগ্ন মানুষেরা ভোগ-বিলাসের মাধ্যমে পরিতৃপ্তি পেতে চায়। এতে মানুষের লালসা দিন দিন বাড়তে থাকে। ভোগে শুধু আসক্তিই বাড়ে। মানুষ ক্রমে ক্রমে লালসার গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। আত্মতৃপ্তিতে ভোগে সত্যিকারের আনন্দ নেই। কারণ, ভোগ মানুষকে ত্যাগী হওয়ার পরিবর্তে অহংকারী হতে শেখায়। ভোগ এমন এক আকাঙ্ক্ষা কিছুতেই তার নিবৃত্তি হয় না। ভোগের চাহিদা অসীম। ফলে ভোগী মানুষের প্রকৃত সুখও খুঁজে পায়না।
অন্যদিকে কল্যাণের জন্য যে স্বার্থ ত্যাগ তার মধ্যেই আছে প্রকৃত মানসিক প্রশান্তি। ভোগী মানুষ কেবল নিজের জন্য বাঁচে কিন্তু ত্যাগী মানুষ তার মৃত্যুর পরেও হাজার হৃদয়ে জীবন্ত হয়ে থাকে। এভাবেই মহৎ মানুষেরা তাদের ত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রকৃত সুখের সন্ধান লাভ করেন।
ত্যাগ মানুষকে বিরাট হৃদয়ের অধিকারী করে। তাই যে যত বেশি ত্যাগ করতে পারে, সে তত বিরাট হৃদয়ের অধিকারী হওয়ার যোগ্যতা রাখে। ত্যাগী মানুষ নিজের সুখ অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেয়, অন্যের দুঃখে প্রকাশ করে চরম সহানুভূতি। তাতেই তার তৃপ্তি বোধ হয়। বৃহত্তর মানবকল্যাণের জন্য নিজের সংকীর্ণ স্বার্থকে বলি দিয়ে পরার্থে জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে সে শান্তি অনুভব করে।
ভোগের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে না। ভোগ মানুষকে জড়িয়ে ফেলে গ্লানি ও কালি মার সঙ্গে। তাদের অর্জিত সম্পদ নিজের স্বার্থ ব্যতীত সমাজের অন্য কোনো কাজে আসে না। তাই পরের দুঃখে তাদের হৃদয়- মনও কাঁদে না।
ত্যাগ মানুষকে নিয়ে যায় মনুষ্যত্বের উদার ভূমিতে। পরের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার আদর্শ ও উদ্দেশ্য মনুষ্যত্বের মধ্যেই নিহিত থাকে। ত্যাগের মাধ্যমেই তাদের মনুষত্ব তথা মানবিক গুণাবলী ফুটে উঠেছে। ভোগ ও সুখ নিয়ে মানুষের নানা রকম ধারণা। সুখের জন্য অনেকেই বিলাস-ব্যসনে মত হয়ে ওঠে এবং ভোগ-বিলাসের নানা উপকরণের আয়োজন করে। কিন্তু কোনভাবেই ভোগাকীর্ণ জীবন সুখের সন্ধান পায় না।
মন্তব্য: পৃথিবীর সব মানুষ যদি নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অন্যের স্বার্থ নিয়ে ভাবে, তাহলে আমাদের এ মাটির পৃথিবীও হয়ে উঠতে পারে স্বর্গতুল্য। মনুষ্যত্বের যথার্থ বিকাশের জন্য আমাদের ভোগী হওয়ার পরিবর্তে ত্যাগী হওয়া উচিত।
Leave a Reply