দর্শন যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ফিলোসফি। ফিলোসফি শব্দটি ফিলোসোফিয়া থেকে এসেছে। ফিলোস এবং সোফিয়া এই দুইটি শব্দ যোগে ফিলোসফি গঠিত হয়েছে। এখানে ফিলোস হল বন্ধু এবং সোফিয়া অর্থ প্রজ্ঞা। তাহলে এই শব্দ দুটি থেকেই আমরা বলতে পারি যে ফিলোসফি শব্দের অর্থ জ্ঞানের প্রজ্ঞা বা ভালোবাসার প্রজ্ঞা। তাই দার্শনিক হতে হলে জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা বা জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা দুটি থাকতে হবে।
শুধুমাত্র জ্ঞান দিয়ে দার্শনিক হওয়া যাবেনা আবার প্রজ্ঞার মাধ্যমে দার্শনিক হওয়া যাবে না, তাই দার্শনিক হতে হলে জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা দুইটি জিনিসের মিলন হতে হবে। জ্ঞান অর্জন করতে হলে ঘটনা তথ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ও নির্ভুল ধারণা থেকে জ্ঞান লাভ করতে হবে তাহলেই প্রকৃত দার্শনিক হয়ে ওঠা সম্ভব হবে। বিখ্যাত গ্রিক জ্যামিতিবিদ পিথাগোরাস সারা জীবন প্রজ্ঞার সাধনা করেছেন কখনো তিনি জ্ঞানের গরিমা অনুভব করেননি তাই তিনি পৃথিবীতে একজন বিখ্যাত দার্শনিক রূপে প্রকাশিত ।
তাই বলতে হয় একজন প্রকৃত দার্শনিকের মধ্যে থাকতে হবে অন্তর্দৃষ্টি, দৃষ্টিভঙ্গির অভ্রান্ততা, বিচারের ভারসাম্যতা ও বিশ্লেষণের সামঞ্জস্য। আর আধুনিক দর্শন হলো দর্শনের একটি শাখা যার বিকাশ লাভ করেছে এই আধুনিক যুগেই। আধুনিক দর্শনের কিছু আধুনিক মতবাদ রয়েছে এই মতবাদ গুলি কখনোই আধুনিকতার সাথে মিলানো উচিত হবে না আমাদের। এই মতবাদ গুলি আগের আমলের দর্শন থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে যায়। আধুনিক দর্শনের স্থাপিত হয় সপ্তদশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীর অগ্রভাগে বলে ধারণা করা হয়। মানুষের জীবন জগত মানুষের সমাজ তার চেতনা এবং জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞানের প্রক্রিয়া, প্রভৃতি মূল বিষয়ের আলোচনাকেই দর্শন বলা হয়ে থাকে।
মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব সেই দিক থেকে বিবেচনা করে বলা যায় যে দর্শনের ইতিহাস সেই গুহাবাসী মানুষের সমাজের সময় থেকেই। যে সময় থেকে বা যে মুহূর্ত থেকে মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করে তখন থেকেই দর্শনের উৎপত্তি হয়েছে বলে দার্শনিকগণ মনে করে থাকেন। তাই দর্শনের সুদূরপ্রসারী ইতিহাস থেকে বলা যায় যে মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই দর্শনের ও সৃষ্টি হয়। মানুষ যেহেতু সৃষ্টিকর্তার সেরা বুদ্ধি দীপ্ত তাই মানুষ উদ্ভব এর পর থেকেই তাদের নানামুখী জ্ঞানেরও উদ্ভব হতে থাকে, সেখান থেকেই দার্শনিক বিকাশ গুলি ক্রম চলে আসছে বলে সকলের ধারণা। হয়তো সেই সময় বুদ্ধিদীপ্ত প্রক্রিয়াগুলি একটু ধীরগতিতে অগ্রসর হয়েছে, কিন্তু দর্শনের উদ্ভব আসলে মানুষ উদ্ভবের পর থেকেই।
প্রাচীনকালে গুহাবাসী মানুষ নিজের জীবনকে রক্ষা করার জন্যই বিভিন্ন কলা কৌশল এর আশ্রয় নিতে হয়েছে তাদেরকে। সে মুহূর্ত থেকেই তারা প্রকৃতি সম্পর্কে মানুষ সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করেছে বা জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করে গেছে নিরলস ভাবে। তাই বলা যায় যে মানুষের নিজের প্রয়োজনেই তারা দার্শনিক হয়ে উঠেছিল। অর্থাৎ সেই সময়কার প্রকৃতিকে বশ করার জন্য মানুষ সবসময়ই চেষ্টা করে গেছে প্রকৃতির রহস্য ভেদ করার জন্য চেষ্টা করে গেছে সেই থেকেই তারা বুঝতে শিখেছে জানতে পেরেছে প্রকৃতি কি প্রকৃতির রহস্য কি কিভাবে তাকে বশ করা যায় এইসব চিন্তা ভাবনা গুলি থেকেই দর্শনের উৎপত্তি হয়েছে। আবার এদিক থেকে বলা যায় দর্শন যেমন একদিকে জ্ঞানের ভান্ডার তেমনি আবার তার মধ্যে সমস্যার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে সমাধানের বদলে কাল্পনিক সমাধানের সাক্ষাৎ অধিক পাওয়া যায়।
তাই কালক্রমে মানুষের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারা সেই পুরাতন দর্শনের মতবাদকে ঝেড়ে ফেলে আধুনিক বৈজ্ঞানিক মতবাদ গুলি গ্রহণ করতে শিখে তখন থেকেই আসলে আধুনিক দর্শনের উৎপত্তি হয়ে যায়। অর্থাৎ যখন কাল্পনিক তথ্য গুলি মানুষ পরিত্যাগ করে বৈজ্ঞানিক ভাবে আবিষ্কৃত অধিকতর বাস্তব এবং সুনির্দিষ্ট হওয়ায় এই জ্ঞানের শাখাটি বিকাশ লাভ করতে থাকে। পূর্বে প্রকৃতি পদার্থ সমাজ চেতনা যুক্তি অর্থনীতি ধর্ম সবি দর্শনের অন্তর্ভুক্ত ছিল কিন্তু বর্তমানে প্রত্যেকটি শাখায় আলাদা আলাদা একটি শাখায় রূপান্তরিত হয়েছে।
আমাদের দেখাতে হবে আধুনিক দর্শনের জনক কে
আধুনিক দর্শনের জনক: রেনে ডেকার্ট।
Leave a Reply