আমাদের এই ওয়েবসাইট পেজে আপনাদের সকলকে স্বাগতম। আমরা বরাবরের মতোই আজকে আরো একটি ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব। আজ আমরা যে ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব, সেই ভাব সম্প্রসারণ টি বিশেষ করে নবম এবং দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় উপযোগী একটি ভাব সম্প্রসারণ। শ্রেণিকক্ষের নির্দিষ্ট বাংলা ব্যাকরন বইয়ের পাশাপাশি আমাদের এই ওয়েবসাইটে আজ যে ভাব-সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করা হবে তা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আশা ব্যক্ত করি। চলুন আমরা আজকে যে ভাব-সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব তা নিম্নে দেওয়া হল:
ভাব সম্প্রসারণ:
বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে
মূলভাব: সৌন্দর্য প্রকৃতির এক দুর্লভ উপাদান। এ সৌন্দর্য কোথায় বিশিষ্টতা অর্জন করতে সক্ষম, তা প্রকৃতিই নির্ধারণ করে দেয়। এর ব্যতিক্রম ঘটলো সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়। স্থান কাল পাত্র ভেদে সৌন্দর্যের পূর্ণতা নির্ভর করে। যে জিনিস যেখানে থাকা উচিত, সেখানে রাখলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। যথার্থ স্থানে বস্তুর বিকাশ ঘটে। সবকিছুই তাঁর নিজ নিজ পরিবেশে সুন্দরও মানানসই বলে বিবেচিত হয়। প্রত্যেকের বৈশিষ্ট্য বিকাশের একটা নিজস্ব পরিমণ্ডল থাকে। সে পরিবেশ থেকে তাকে সরিয়ে নিলে তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ব্যাহত হয়।
সম্প্রসারিত ভাব: মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব অসামান্য। বিচিত্র পরিবেশ মানবজীবনে ফেলেছে বৈচিত্র্যময় প্রভাব। অরণ্যচারী মানুষ আরণ্যক জীবনেই পায় স্বতস্ফূর্ত স্বাচ্ছন্দ্য। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিজস্ব পন্থায় তারা প্রকৃতির সাথে জীবন পদ্ধতি ও সংস্কৃতি গড়ে তুলে। তাদের জীবন সংস্কৃতি গড়ে ওঠে আরণ্যক পরিবেশের সাথে যোগসূত্র ও সঙ্গতি রেখে। অরণ্যলালিত সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবনেই তারা পরিতৃপ্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশেই এরা মানানসই।
স্রষ্টা পৃথিবীর ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য নানা ধরনের প্রাণী, গাছপালা, বন বনানী, পাহাড় পর্বত, নদী নালা, খাল বিল, সাগর-মহাসাগর সৃষ্টি করেছেন। সেইসাথে প্রতিটি বস্তু এবং প্রাণীর উপযোগী স্থান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন । আমাদের দেশে বন্য প্রকৃতির মধ্যেও যারা লালিত,পালিত, তারা তাদের নিজস্ব পরিবেশেই মানানসই। তাদের পাশে যদি শহরের সভ্য মানুষ এসে দাঁড়ায়, তাহলে তাদের সভ্য পোশাক এবং আচরণ বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে নিতান্তই বেমানান মনে হবে।
বন্যপ্রাণীদের যতই খাঁচা কিংবা সোনার কারাগার তৈরি করে করে বন্দি করে রাখা হয় তবুও সে সুযোগ পেলে বন্দী খাচা থেকে পালিয়ে যাবে। কারণ তাদেরকে বনেই সুন্দর মানায় খাঁচাতে নয়। তেমনি ফুল যতক্ষণ তার বোটায় প্রস্ফুটিত থাকে ততক্ষণ তার স্বর্গীয় সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, কিন্তু বোটা থেকে ফুল ছিঁড়ে ফেললে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য আর থাকে না। মায়ের কোল শিশুর নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
শিশু তার মাতৃসান্নিধ্যে পায় অনুপম স্নেহ। মায়ের কোল থেকে শিশুকে বিচ্ছিন্ন করা হলে সে কেবল সৌন্দর্য হারায় না, বরং নিরাপদ আশ্রয়চ্যুত হওয়ার শংকা ও অনিশ্চয়তায় তার মুখে বেদনার ছাপ পড়ে। এমনিভাবে স্বাভাবিক জীবন পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে প্রতিটি প্রাণীই তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারায়। জীবনের সাথে পরিবেশের যোগ যেমন অবিচ্ছিন্ন তেমনি স্ব-স্ব পরিবেশের পটভূমিতেই জীবসত্তা পায় স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও অনুপম বৈশিষ্ট্য। তা না হলে কেবল অসংগতি ঘটে না, অনেক সময় তা দৃষ্টিকটু হয়ে ওঠে।
মন্তব্য: পরিশেষে উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, স্থান পাত্র, কাল ভেদে যার অবস্থান যেখানে তার স্বাভাবিক বিকাশ সেখানে ঘটে। স্থান ভেদে পরিবর্তন করলে তার স্বাভাবিক বিকাশ এর ব্যত্যয় ঘটে। পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পর্ক প্রতি প্রাণীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রত্যেক প্রাণীই তার নিজ নিজ পরিবেশে থাকে তৃপ্ত। কোন প্রাণীকে যদি তার পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় তবে সে হারায় তার আসল সৌন্দর্য।
সবশেষে শিক্ষার্থীদের কে অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি যে আপনারা প্রতিনিয়ত আমাদের এই ওয়েবসাইট থেকে শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন। আমরা আশা করি আপনারা আপনাদের নির্দিষ্ট বই ব্যতীত আমাদের এই ওয়েবসাইটে আপনাদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য পেয়ে থাকবেন যেটা আপনাদের অনেক কাজে লাগবে।
Leave a Reply