শিক্ষার্থীবৃন্দ আপনাদেরকে আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাগত জানাই। আমরা আপনাদের সামনে আবার হাজির হয়েছি নতুন একটি ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে। ইতোমধ্যে আমরা অনেকগুলো ভাব-সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলা ব্যাকরণ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ভালো ভাব সম্প্রসারণ। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আপনাদের পাঠ্যপুস্তকে অনেক ভাব-সম্প্রসারণ নিয়েই আলোচনা করা হয়ে থাকে। তবে আমরা চেষ্টা করেছি এখানে পরীক্ষায় আসার মত ভাব সম্প্রসারণ গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার।
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে যে ভাব সম্প্রসারণ গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি সেগুলো বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষায় প্রায়:শই সেই এসে থাকে। বিভিন্ন সালের পাবলিক পরীক্ষায় এবং অন্যান্য পরীক্ষা এই সকল ভাব সম্প্রসারণ গুলো আপনারা পেয়ে যাবেন যেগুলো আমাদের এই ওয়েবসাইটে আলোচনা করা হয়েছে। আজকে আমরা আরেকটি নতুন ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব।
ভাব-সম্প্রসারণ: হাস্যমুখে অদৃষ্টেরে করব মোরা পরিহাস।
মূলভাব: মানুষের নিরন্তর পরিশ্রম করার মানসিকতা ও জানার আগ্রহ মানুষকে সভ্যতার অগ্রযাত্রায় এগিয়ে দিয়েছে। সে এখন আর অদৃষ্টের হাতে সমর্পিত নয়। মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্য নিয়ন্তা।
সম্প্রসারিত ভাব: একটা সময় ছিল মানুষ অদৃষ্টের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করত। সে বিশ্বাস করত পূর্বজন্মের কর্মফলই এ জন্মের কর্মের নিয়ন্ত্রক ও নিয়ামক। কিন্তু এই বিশ্বাস এখন নেই। মানুষের নিরন্তর প্রচেষ্টায় বিজ্ঞান খুলে দিয়েছে অতীতের অনেক অজানা রহস্যের দ্বার। মানুষ চাঁদে গেছে, আবিষ্কার করেছে গ্রহ, তারা, নক্ষত্রপুঞ্জ। জেনে গেছে এদের প্রকৃত রহস্য। আয়ত্ত করেছে অজানা শক্তিকে।
প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে নিজেকে। একথা সত্য, যে বিষয়গুলোর রহস্য আবিষ্কার সম্ভব হয়নি সেগুলোর ক্ষেত্রে অদৃষ্ট কথাটি থেকে যাচ্ছে। আজকের দিনে মানুষ আর ভাগ্যের লিখন বা কপালের দোহাই দিয়ে বসে থাকতে রাজি নয়। জানার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা আর নিরন্তর প্রচেষ্টা অনেক অজানা রহস্যকে মানুষের দৃষ্টিসীমাযর আয়ত্তে এনে দিয়েছে।
মানুষের চলার পথ বাধাহীন, সাবলীল নয়। তাই বলে নিজেকে দুঃখী-হতভাগা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আনন্দকে জয় করে চারপাশে ছড়িয়ে দিতে হবে। অদৃষ্টকে পাশ কাটিয়ে না গিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ভয়কে জয় করার মানসিক শক্তি অর্জন করতে হবে।
নিজেকে বিশ্বাস করাতে হবে যে, আমিও পারব, থাকতে হবে আনন্দ সৃষ্টির নিরন্তর প্রয়াস। আপন কর্মের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে হবে অদৃষ্টকে। সে যাত্রায় হয়তো মুখ থুবড়ে পড়তে হবে বারবার। হয়তো ভাগ্যের হাতে বড় নির্মমভাবে নিপীড়িত, নিগৃহীতও হতে হবে।
তবুও উঠে দাঁড়াতে হবে আশায় বুক বেঁধে তা অর্জন করার সাহস নিয়ে। আর যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন- ‘আল্লাহ, কোনো জাতির ভাগ্য ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে।’ তাই কোনো কাজে সফলতা অর্জন করতে হলে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন চেষ্টা করাই একমাত্র উপায়।
যিনি জানেন, জীবন হলো সুখ-দুঃখময় এক অনিবার্য পরিবর্তনশীল ক্ষেত্র, তিনি দুঃখের দিনে হতাশায় ভেঙে পড়েন না। দুঃখ-বিপাককে জীবনের অমোঘ পাথেয় হিসেবে মেনে নিয়ে দিনবদলের সংগ্রামে নামেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন- ‘সাহস মানে ভয়ের অনুপস্থিতি নয় বরং ভয়কে জয় করা। সে সাহসী নয়, যে ভীতি অনুভব করে না বরং সে-ই সাহসী যে ভীতিকে জয় করে।’ যদিও এই ভয় বা আতংকই কিছু মানুষের জীবনের সব সুখ শান্তি কেড়ে নেয়। কিন্তু ভয়ের মুখোমুখি হয়ে জয় করার মাধ্যমে অর্জিত হয় আত্মতুষ্টি ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রশান্তি যা জীবনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
মন্তব্য: আত্মবিশ্বাসী মানুষ অদৃষ্টের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে না বরং জানার নিরন্তর প্রচেষ্টায় অদৃষ্টকে পরিহাস করে সংগ্রামী হয়ে ওঠে। অদৃষ্টের প্রতি আস্থাশীলতা মানুষের জীবনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করে।
উপরে আজকের যে বিষয়টা নিয়ে আপনাদের সামনে আমরা আলোচনা করলাম অবশ্যই আপনাদের এই ভাব-সম্প্রসারণটি পরীক্ষার জন্য কাজে লাগবে। আমরা চেষ্টা করেছি এ পর্যন্ত যে সকল ভাব সম্প্রসারণ গুলো আমাদের এই ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিটি সহজ সুন্দর এবং সাবলীল ভাষায় উপস্থাপনা করার যাতে করে আপনারা সহজেই সেটা আয়ত্ত করে নিতে পারেন। আজ এই পর্যন্তই আগামীতে অন্য একটি টপিক নিয়ে আমরা আপনাদের সামনে হাজির হব।
Leave a Reply