এমআরপি থেকে ই পাসপোর্ট করবেন কিভাবে? এমআরপি থেকে ই পাসপোর্ট করার নিয়ম

এমআরপি থেকে ই পাসপোর্ট করবেন কিভাবে? এমআরপি থেকে ই পাসপোর্ট করার নিয়ম

দিন দিন এদেশে লেগেছে দিন বদলের হাওয়া। আজকের বাংলাদেশ আর ২০ বছর আগের বাংলাদেশে অনেক পার্থক্য। এদেশের প্রত্যেকটি মানুষের হাতে এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে, দেশের প্রত্যেকটি মানুষই কোন না কোনভাবে প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া আজ জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব। এমতাবস্থায় পাসপোর্ট এর মান উন্নত হবে না তা কী হয়৷ প্রযুক্তির কল্যাণে আজ যেমন জনজীবনে পরিবর্তন এসেছে, ঠিক তেমনি পাসপোর্ট ও উন্নত হচ্ছে দিন দিন।

আগে একসময় পাসপোর্ট হাতে লেখা হতো৷ বাংলাদেশেও হাতে লেখা পাসপোর্ট এর প্রচলন ছিলো কিছু কাল। কিন্তু ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার হাতে লেখা পাসপোর্ট এর পরিবর্তে নিয়ে আসে এমআরপি বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের পরে বাংলাদেশ সরকার আর কোন হাতে লেখা পাসপোর্ট ইস্যু করেনি।

২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিলো এমআরপির যুগ। এসময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার শুধু মাত্র মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রদান করেছে সকল আবেদনকারীকে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টগুলোকে এক ধরনের বিশেষ মেশিন শনাক্ত করতে পারতো এবং পাসপোর্টধারীর বিভিন্ন তথ্য শনাক্ত করতে পারতো।

মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নিয়ে আসার পর পাসপোর্ট জালিয়াতি অনেকাংশেই হ্রাস পায়। কিন্তু এই পাসপোর্ট এরও কিছু ত্রুটি ছিলো। যেই কারণে বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ই পাসপোর্ট প্রদান করার। বআংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো সকল পাসপোর্টধারীদের হাতে ই-পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়া। ২০২১ সালের পর থেকে বাংলাদেশ সরকার আর নতুন করে কোন এমআরপি প্রদান করবে না। এখন থেকে সকল পাসপোর্টই হনে ই-পাসপোর্ট।

ই-পাসপোর্ট হলো মূলত এমআরপির একটি নতুন রূপ। বর্তমান বিশ্বে এই ই-পাসপোর্টই হলো পাসপোর্ট এর সর্বাধুনিক রূপ। বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারিতে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু করলেও মাঠ পর্যায়ে এই পাসপোর্ট বিতরণ শুরু হয় ২০২১ সালে। ই-পাসপোর্টের আরেকটি নাম হলো বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট। এই পাসপোর্টের একটি বিশেষ স্থানে সিম কার্ডের মত একটি অংশ সংযুক্ত থাকে। এই সিম কার্ডের মত অংশটি হলো একটি মাইক্রো চিপ।

এই চিপটিতে রয়েছে মাইক্রো প্রসেসর ও এন্টেনা যার ফলে পাসপোর্টধারীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই পাসপোর্ট এ সংযুক্ত থাকবে। এই পাসপোর্টের চিপে সাধারণত পাসপোর্টধারীর তিন ধরণের ছবি, হাতের দশটি আংগুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশের (মণির) স্ক্যান কপি সংযুক্ত থাকে। এই পাসপোর্টে যেই তথ্য থাকে তা যাচাই করার জন্য এতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘পাবলিক কি ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ প্রযুক্তি।

বাংলাদেশই এই দিন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ যারা ই-পাসপোর্ট প্রদাব করা শুরু করেছে। ই-পাসপোর্ট এখন একটি সময়ের দাবী। এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে, এমন একটি পাসপোর্ট সকল দেশেরই দরকার যেটি সহজে নকল করা যাবে না। এই ই-পাসপোর্ট খুবই সুরক্ষিত, সহজে কারও পক্ষে এই পাসপোর্ট নকল করা সম্ভবপর নয়।

বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি এই ই-পাসপোর্ট নিতে চায় তাহলে খুবই সহজ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে এই পাসপোর্ট পেতে পারে। ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে এখন আর আগের এমআরপির মত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। নিজেদের ঘরে বসে অনলাইন থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করা যায়। আবেদন ফরম পূরণ করার পর তার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকাও বাসায় বসে অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই প্রদান করা যায়। এসব করা হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় কাগনপত্রসহ পূরণকৃত ফরম ও ফি প্রদানের রশিদ নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হয়।

ই পাসপোর্ট এখন দেশের যেকোন জেলা থেকেই পাওয়া সম্ভব। যেহেতু এখন দেশের সকল জেলাতেই পাসপোর্ট অফিস আছে এবং সকল পাসপোর্ট অফিস ই পাসপোর্ট প্রদান করতে পারে৷ ফরম জমা দেওয়ার পর আবেদনকারীকে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া হবে পাসপোর্ট অফিসে সাক্ষাৎ করার জন্য এবং ওইদিন আংগুলের ছাপ ও ছবি তোলা হবে পাসপোর্ট এর জন্য। সকল তথ্য প্রমাণ যাচাইয়ের জন্য পুলিশ ভ্যারিফিকেশন হবে এবং সকল ধাপ ঠিকভাবে পালন করলে সঠিক সময়েই পাসপোর্ট পাওয়া যাবে।

About শাহরিয়ার হোসেন 4780 Articles
Shahriar1.com ওয়েবসাইটে আপনার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় যা কিছু দরকার সবকিছুই পাবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*