
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ
ভূমিকা: সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। কিন্তু আয়তনে আমাদের দেশটি খুব বড় নয়। যেকোনো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ তার অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার। পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়া দেশটির উন্নতি লাভ করতে পারে না। কিন্তু জনসংখ্যা তুলনায় বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদের ততটা সমৃদ্ধ নয়। আমাদের দেশের যতটুকু প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে তারও যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। এজন্য বাংলাদেশের স্বল্প প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হবে এবং দরিদ্র জনগণের ভাগ্যের উন্নতি ঘটবে।
প্রাকৃতিক সম্পদ ও তার গুরুত্ব: প্রকৃতিতে শ্রেষ্ঠ সম্পদ বা প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সম্পদই প্রাকৃতিক সম্পদ। এগুলো কৃত্রিম নয়। মানব কল্যাণে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। একটি দেশের ভূমি, খনিজ, মৎস্য, বনজ, মানবসম্পদ সে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। এসব প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ও সুষ্ঠু ব্যবহারে একটি দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। নিচে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ গুলো আলোচনা করা হলো:
পানিসম্পদ: অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের মতো পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো অসংখ্য ছোট- বড় নদীতে এ দেশ সমৃদ্ধ। এ নদীগুলো সারা বছরই জল দান করে ভূমিকে উর্বর করে রাখে। শুষ্ক মৌসুমেও অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ মৎসের একমাত্র ধারণ ক্ষেত্র নদীগুলো। দেশের জলাশয় এর বর্তমান ব্যবহার সনাতন কাল থেকে যেভাবে চলে আসছে এখনো তাই।
পুকুর বা দীঘিতে মাছের চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। পানি সম্পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল বিদ্যুৎ উৎপাদন। আমাদের দেশে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় এর চেয়ে শতগুণ বেশি উৎপন্ন করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পানি সম্পদ কে যদি আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারি তাহলে তা জাতির জন্যে মঙ্গল বয়ে আনবে।
মৎস্য সম্পদঃ মৎস্য সম্পদ বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ। এ দেশে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল এবং হাওর রয়েছে। আর এই সকল জলাশয়গুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এছাড়াও বাংলাদেশের সামুদ্রিক অঞ্চলের লোনা পানিতেও প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের পরিকল্পিত উপায়ে চিংড়ি মাছের চাষ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে চিংড়ি মাছের সম্ভাবনা অনেক উজ্জ্বল হবে বলে আশা করা যায়।
ইলিশ, রুই, কাতলা, মাগুর, বোয়াল, গজার, শোল, পুঁটি, শিং, চিংড়ি, পাবদা, টেংরা প্রভৃতি বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ। আবার এদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ভেটকি, রূপচাঁদা, লাক্ষা, চুরি, কোরাল, গলদা চিংড়ি প্রভৃতি মাছের জন্য প্রসিদ্ধ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মৎস্য সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ থেকে গুণগত ও মানসম্মত হিমায়িত চিংড়ি এবং মৎস্য জাত পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, হংকং, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
খনিজ সম্পদ: খনিজ সম্পদই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সম্পদ। সে দেশই বেশি উন্নত লাভ করে, যে দেশে খনিজ সম্পদে পরিমাণ বেশি। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে। বাংলাদেশের খনিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনা পাথর, মৃত্তিকা, চীনামাটি, কাঁচবালি প্রভৃতি। সম্প্রীতি কিছু তেলের খনিও আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ। বাংলাদেশের প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে এবং ১৯৫৭ সালে প্রথম গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়।
বনজ সম্পদ: সাধারণত যে সকল ভূমিতে ছোট, মাঝারি ও বড় ইত্যাদি অসংখ্য বৃক্ষের সমাবেশ ঘটে তাকে বনভূমি বলা হয়। আবার বনভূমি থেকে প্রাপ্ত সম্পদকে বনজ সম্পদ বলা হয়। কোনো একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে আমাদের দেশের মোট বনভূমির পরিমাণ ১৭.০৮%। বাংলাদেশের বনজ সম্পদ দেশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার সাথে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব: একটি দেশের অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি হলো সে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। এজন্য প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের যথাসাধ্য ব্যবহারই একটি দেশের সার্বিক উন্নতি সাধন করতে পারে। দেশের শিল্প বিপ্লব ঘটাতে পারে প্রাকৃতিক সম্পদ।এর ফলে দেশ উন্নতির পথে এগিয়ে যায়।
উপসংহার: বাংলাদেশ পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ নয়। তবুও এদেশে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে তা দেশের উন্নতির জন্য একেবারে কম ও নয় এই স্বল্প পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদেরই যুধি যথাযথ সুষ্ঠু ব্যবহার নিষেধ করা যায় তাহলে দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে।
Leave a Reply