
প্রিয় শিক্ষার্থীরা আমরা আজকে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি নতুন একটি রচনা নিয়ে। আজকে আমরা যে রচনাটি নিয়ে লিখব সেটির সাথে আপনার অনেক আগে থেকেই পরিচিত। আজকে যে রচনাটি লেখা হবে সেটি আসলে লিখে শেষ করার মতো নয়। তারপরেও আপনাদের সুবিধার জন্য আমরা মূল বিষয়গুলো এখানে আলোচনা করেছি। আজকের এই রচনাটি কে আপনাদেরকে অবশ্যই পাঠ্যপুস্তকে সহযোগিতা নিয়ে সম্পর্ক করতে হবে। এখানে আমরা অনেক কিছুই বাদ দিয়ে রচনামূলক মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরেছি। বাকিটা আপনারা নিজেরাই বই দেখে কালেকশন করে নেবেন। তাহলে আজকে রচনা টি হল:
মুক্তিযুদ্ধ
অথবা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
প্রবন্ধ সংকেত: ভূমিকা-মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি-মুজিবনগর সরকার গঠন-মুক্তি সংগ্রাম-পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ-মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-উপসংহার।
ভূমিকা: লাল সবুজের দেশ বাংলাদেশ। হাজার বছরের ঐতিহ্য দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু এই বাংলাদেশকে আমরা সহসাই অর্জন করতে পারি নাই। এর জন্য আমাদেরকে লড়াই করে যুদ্ধ করে অনেক শহীদের রক্তের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা আমাদের এই দেশ কে পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চেতনাকে শাণিত করে।
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি: পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই মূলত স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ বপন করা হয়। ১৯৫২ সালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য গুলি চালানো হয়। শহীদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত সহ আরো অনেকে।
বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপিত হয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরের নামে তালবাহানা শুরু করে। ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় ভাষণে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’
বলে জাতিকে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। সারাবাংলায় শুরু হয় তুমুল আন্দোলন।১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের গভীর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েন নিরস্ত্র বাঙালির ওপর।
মুজিবনগর সরকার গঠন: ১০ এপ্রিল ১৯৭১ কুষ্টিয়ার বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা ইউনিয়নের ভবের পাড়া গ্রামের আম্রকাননে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। এই জায়গার নতুন নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। তাই এই সরকারকে বলা হয় মুজিবনগর সরকার। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে, রাষ্ট্রপতি শাসিত এই সরকার ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করে। এই দিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে তা কার্যকর হয়। পরবর্তীতে এই ঘোষণাপত্র অনুযায়ী দেশ চলতে থাকে।
মুক্তি সংগ্রাম: ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে বিপর্যস্ত হয় পূর্ব বাংলার মানুষ। তাদের এই অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে বাংলার মানুষকে স্বাধীনতা উদ্বুদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তার এ ঘোষণায় বাংলার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিসংগ্রামে।
মুক্তিযুদ্ধ ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড: মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি ও যৌথবাহিনীর দুর্বার প্রতিরোধ ও আক্রমণের মুখে পশ্চিমা হানাদার বাহিনী যখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল, তখন পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে এ দেশের সূর্যসন্তানদের ওপর। আর এ কাজে তাদেরকে সাহায্য করে তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস্ বাহিনী। দেশের মুক্তিকামী ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনকারী শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ডাক্তার, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের বেশির ভাগের ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ: সংগ্রামী বাঙালি আর মিত্র বাহিনীর সাথে যুদ্ধে হানাদার বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে মিত্র বাহিনীর জেনারেল মানেকশ পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজীকে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন। ১৬ ডিসেম্বর বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অর্থাৎ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ৯৩০০০ সৈন্য নিয়ে জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন। সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরোরার নিকট তিনি আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকার।
মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ দেখে যে চেতনা লাভ করেছে, তা জাতির সব আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। ঐক্যবদ্ধ জাতি দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়েছে—তার পেছনে মুক্তিসংগ্রামের আত্মত্যাগ কাজ করেছে। আর সেই জাগ্রত চেতনা ছড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের পরবর্তী কর্মকাণ্ডে।
উপসংহার: দীর্ঘ নয় মাস মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে। আমাদের দায়িত্ব বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করা। তাহলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলা স্বপ্ন দেখতেন সেটা আমরা গড়ে তুলতে পারব।
Leave a Reply