আনুমানিক ৬০০-৭০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলা সাহিত্য নিদর্শন পাওয়া গেলেও বাংলা গদ্য রীতির সেই সময় কোন নিদর্শন পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ বাংলা সাহিত্য কে বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে আধুনিক যুগের পূর্বে বাংলা সাহিত্যে কোন গদ্য রীতি প্রচলিত ছিল না। অর্থাৎ উনবিংশ সালের প্রথম থেকে বাংলা গদ্যরিতির প্রচলন অল্প অল্প করে চালু হতে থাকে। অর্থাৎ আধুনিক যুগের পূর্বেও মাপ বাঙালি মানুষজন অবশ্যই বাংলা ভাষায় কথা বলতো কিন্তু কোন সাহিত্যগুণ সমৃদ্ধ কোন গদ্য রচনা হয়নি।
সেই সময় বাংলা সাহিত্য বলতে পদ্ম রীতিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো। সে কারণে আধুনিক যুগের পূর্বে বাংলার বা বাংলা ভাষায় কোন পদ্ধতিতে সাহিত্যরূপ আমরা দেখতে পাই না। ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে আসাম রাজের লেখা কোচবিহারের রাজার একটি পত্রকে যদিও গদ্য রীতির রূপ মনে হয় তবুও সেটি সাহিত্য বলে বিবেচনা করা হয় না।
এই চিঠি কি বাংলা গদ্যের প্রাচীনতম নির্দশন হিসেবে ধরা হয়। পরবর্তীতে ১৮০০ সালে শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে বাংলা গদ্য পড়ানোর প্রাথমিকভাবে কোন ব্যবস্থা ছিল না। তাই বাংলা গদ্য রীতিকে পড়ানোর জন্য সে সময় সেখানকার পাদ্রী বাংলা সাহিত্যের অনেক শিক্ষককে দিয়ে বাংলা পড়ানোর জন্য কিছু বই লিখান। বাংলা গদ্যের বিকাশের জন্য ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বিশেষভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজকে বাংলা গদ্যের বিকাশের পথিকৃৎ হিসেবেও ধরা হয়ে থাকে। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজটি কলকাতার লালবাজারে চৌঠা মে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।
কলেজ কি প্রতিষ্ঠার জন্য লর্ড ওয়েলেসলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কলেজ কি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ১৮০১ সালের ২৪ নভেম্বরে বাংলা বিভাগ চালু করা হয়। তখন বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ হন পাদ্রী উইলিয়াম কেরি। এই উইলিয়াম কেরি নিজে বাংলা বই লেখেন এবং অনেক পন্ডিতকে দিয়ে নিজে বই লিখিয়ে বাংলা বিভাগের লেখাপড়া চালু রাখেন। তাই আমরা বলতে পারি উইলিয়াম কেরি বাংলা বিভাগের বা বাংলা গদ্যের চলিত রূপকে দান করার জন্য অর্থাৎ বাংলা গদ্য রীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। এই বাংলা ভাষাকে বাংলা গদ্য রীতিকে উইলিয়াম কেরির অবদান অনস্বীকার্য। তাহলে আমরা দেখে নিতে পারি বাংলা গদ্যের জনক কে।
বাংলা গদ্যের জনক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর মহাশয় কে বাংলা সাহিত্যের বা বাংলা গদ্যের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়।
তিনি বাংলা সাহিত্যের আধুনিক রূপদান করেন। এই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারক হিসেবেও ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি বাংলাকে বাংলা ভাষাকে বাঙালিকে এগিয়ে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকেই বাংলা গদ্যের জনক হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও রামরাম বসুর রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র বাঙালি লেখকের বা বাংলা সাহিত্যে প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস অনেক প্রাচীন হলেও বাংলা গদ্যের ইতিহাস অতি প্রাচীন নয়।। বাংলা গদ্য আধুনিক শিকারী একটি অনন্য সৃষ্টি।
বাংলা গদ্যর যখন পুরোপুরি রূপদান হয় তখন থেকে বাংলা সাহিত্য আরো বেশি সমৃদ্ধ হতে থাকে। এরপরই শুরু হয় বাংলা সাহিত্যের রেনেসাঁর যুগ। এ যুগের সৃষ্টি হয় অনন্য সব সাহিত্যিকের অনন্য কৃতিত্ব মাখা অনেক সাহিত্য। যে সাহিত্য গুলো সৃষ্টির কারণে বাংলা ভাষা অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। তাই আমরা পরিশেষে এ কথা বলতে পারি বাংলা গদ্যের সৃষ্টির কারণে বাংলা ভাষা বাংলা সাহিত্য আজ এত সমাদৃত বিশ্ব দরবারে। গিরিশচন্দ্র ঘোষ কে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের সাথে তুলনা করা হয়।
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার যে ধরনের নাটক রচনা করেছিলেন আমাদের গিরিশচন্দ্র ঘোষ পরিমাপের এই নাটক সৃষ্টি করে অনন্য নজির বলেছেন এই বাংলা সাহিত্যে। এ ধরনের সকল তথ্য পেতে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটটি বারবার ভিজিট করে আমাদের পাশে থাকবেন। আর আমরাও আপনাদের যথার্থ সঠিক তথ্যগুলি প্রদান করে আপনাদের সাথে থাকার বা পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।
Leave a Reply