চিরসুখী জন ভ্রমে কি কখন,
ব্যথিত বেদন বুঝিতে কি পারে?
কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে,
কভু আশীবিষে দংশেনি যারে
মূলভাব: যে বিষয়ে যার কোনো অভিজ্ঞতা নেই সে বিষয়ের মর্ম উপলব্ধি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সুখী মানুষ কখনোই দুঃখীর দুঃখ বুঝতে পারে না। বিষের জ্বালা বোঝা সম্ভব নয় যদি তার সংস্পর্শ লাভ করা না যায়। সেজন্য জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করে মানুষকে সহানুভূতিশীল হতে হবে।
সম্প্রসারিত ভাব: সংসার জীবনে দুঃখী অসহায় মানুষের সীমা নেই। সুখের চেয়ে বরং সংসারের দুঃখের আধিক্য বিরাজমান। এসব দুঃখী জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তাদের জীবনে হাসি ফোটাতে হবে। এজন্য দরকার দুঃখী জীবনের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা। দুঃখী জীবনের বেদনা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা জানতে পারলেই এই উদ্দেশ্য সফল করা সহজ হবে। কিন্তু যে লোক চিরদিন সুখে দিন কাটায় এবং দুঃখ বলতে কী বোঝায় তা জানেনা তার পক্ষে ব্যাথিত জনের দুঃখ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা মোটেই সম্ভব নয়। তেমনি শাপে যাকে কামড়ায় নি তার পক্ষে বিষের যন্ত্রণা সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব নয়।
অপরদিকে আমরা আরো বলতে পারি যে, সুখ এবং দুঃখ দুটি বিপরীত বিষয়। এরা একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। একটি না থাকলে অন্যটির মর্ম বোঝা যায় না। অন্ধকার না থাকলে যেমন আলো বোঝা যায় না। যখন কারো হাত কাটে তার ব্যাথা কেবল ঐ ব্যক্তিই বুঝে অন্য কেউ নয়। কষ্ট বা বেদনার যে অনুভূতি তা কেবল ব্যক্তি নিজেই বোঝে। আমরা পাশের মানুষ শুধু সমবেদনাই জানাতে পারি। তার কষ্টটা কখনো অনুভব করতে পারি না।
পৃথিবীতে মানুষের জীবন সুখ-দুঃখ মিলিয়েই গড়ে উঠেছে। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা দুঃখের চেয়ে সুখটাই বেশি ভোগ করে। তাই দুঃখী ব্যক্তির দুঃখ তারা বুঝতে পারে না। আমাদের সমাজে অনেক ধনী লোক আছে সোনার চামচ মুখে নিয়ে যাদের জন্ম হয়েছে।
কখনো কখনো তারা দরিদ্র মানুষদের গণ্যই করে না। যারা সুখী এবং সম্পদশালী তারা গরীবের কষ্ট কখনো বুঝতে পারে না। তাই গরীবকে তারা অবহেলা করে, অবজ্ঞা করে। গরীবের কষ্ট তারা কখনও বোঝার চেষ্টাও করে না। তারা ধনী ও গরীবের মাঝে এক বিভেদের দেয়াল তৈরি করেছে। সমাজে উঁচুতলার লোকেরা গরীব খেটে খাওয়া মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে চায় না।
বরং তাদেরকে আরও বেশি কষ্টে ভোগায়। ধনীরা কখনোই গরীবের কষ্টে সামিল হতে চায় না। কারণ তারা এই কষ্টের মূল্যায়নই করে না। তারা ভুলে যায়, যে সুখের পাহাড় তারা গড়েছে সেটা ঐ গরীব মানুষেরই কষ্টের ফসল। যাকে শাপে কামড় দেয় কেবল সে-ই বিষের যন্ত্রনা অনুভব করতে পারে। সুখে থেকে কখনো অন্যের দুঃখকে অনুভব করা যায় না।
মন্তব্য: বিশ্বের জীবনকে সুন্দর করার জন্য অবহেলিত নির্যাতিত মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে হবে। তাই দুঃখী মানুষের দুঃখের অভিজ্ঞতা অর্জন করা দরকার। এই অভিজ্ঞতা দুঃখী জীবনের পাশে সহানুভূতি সহকারে তার জন্য সাহায্য করবে। পরের দুঃখে কাতর হয়ে পড়ে আত্মনিয়োগ করতে হবে তাহলেই দেশ ও জাতি সামনের দিকে অগ্রসর হবে। কারণ দুঃখ ছাড়া কখনোই সুখ লাভ করা যায় না।
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আজকে আমরা বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ব্যাকরণ অংশ থেকে যে ভাব সম্প্রসারণ টি আলোচনা করলাম তা আপনাদের অবশ্যই বোধগম্য হবে। আমরা চেষ্টা করেছি এই ভাব-সম্প্রসারণ টি সুন্দর এবং সাবলীল ভাষায় উপস্থাপনা করার। যাতে আপনারা খুব সহজেই আয়ত্ত্ব করতে পারেন। আপনাদের উপকারী তাই আমাদের সার্থকতা। তাই আমাদের এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট আপনারা সর্বত্রই ভিজিট করবেন এবং অন্যদেরও ভিজিট করতে বলবেন। সুন্দর মতামত প্রদান করবেন যাতে আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটটিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি
Leave a Reply