আপনারা যারা বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ব্যাকরণ অংশের বিভিন্ন ভাব-সম্প্রসারণ সম্পর্কে তথ্য পেতে চান তাদেরকে আমাদের এই ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আমরা এখানে শিক্ষার ওপর বিভিন্ন তথ্যমূলক প্রকাশনা প্রচার করে থাকি। সবার আগে সব সময় সমসাময়িক শিক্ষা বিষয়ক ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের যারা তথ্য পেতে যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই তারা অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এখানে সবার আগে সব সময় এই সকল তথ্য গুলো পেয়ে যাবেন।
আজ আমরা যে ভাব সম্প্রসারণ টি নিয়ে আলোচনা করব সেটি মূলত একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় আসার মত একটি ভাব সম্প্রসারণ। চলুন আমরা আমাদের ভাব-সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করি:
ভাব সম্প্রসারণ: ধৈর্য ধরো, ধৈর্য ধরো, বাধো-বাধো বুক সংসারে সহস্র দু:খ আসে আসুক।
মূলভাব: ধৈর্য ধারণ মানুষের মহৎ গুণ। ধৈর্য ধারণ করে সম্মুখে অগ্রসর হলে এবং নিজের উদ্দেশ্য ও প্রচেষ্টায় অবিচল থাকলে উদ্দেশ্য পূরণ এবং কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করা সম্ভব। কেননা ধৈর্যই সাফল্যের পূর্ব শর্ত। সাফল্য পেতে হলে তাকে অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
সম্প্রসারিত ভাব: সবুর আরবী শব্দ এর অর্থ ধৈর্য। আর মেওয়া ফারসি শব্দ এর অর্থ পুষ্টিকর শুষ্ক ফল। প্রবাদ আছে সবুরে মেওয়া ফলে। ধৈর্য ধারণ করতে পারলে একদিন না একদিন সুফল লাভ করা যায়। জগত সংসারে সুখ-দুঃখ মিলিয়েই মানবজীবন। মানবজীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই নানারকম দুঃখ-কষ্ট রোগ-শোক হতাশা ব্যর্থতা প্রভৃতির সম্মুখীন হতে হয়। আর ধৈর্যের সঙ্গে এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার নামই সবুর। এসব প্রতিকূলতাকে জয় করে টিকে থাকতে হলে মানুষকে ধৈর্য ও সহ্যশক্তি প্রদর্শন করতে হয়। দুঃখ আর ব্যর্থতাকে জয় করতে পারলেই জীবনে সুখ ও সাফল্য লাভ সম্ভব।
জীবনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ কিংবা অভিষ্ট লক্ষ্য হাসিলে ব্যর্থ হলে হতাশায় উচিত নয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সঃ এর বানী প্রচার করতে গিয়ে নানা রকম বাধা বিপত্তির শিকার হন। এমনকি শত্রুর পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু মুহূর্তের জন্যেও তিনি ধৈর্য হারা হননি বরং অপূর্ব ও ধৈর্য সহকারে তিনি তার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন।
দুঃখ দারিদ্র্য, অন্যায়-অত্যাচার, বিপদ আপদ কখনো কখনো মানব জীবনকে থামিয়ে দেয়। মানুষকে এসব প্রতিরোধ করে ধৈর্য নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয়। সাফল্য আর ব্যর্থতায় ভরা কর্মক্ষেত্রে মানুষ যদি ব্যর্থতাকে গ্রহণ করে পরবর্তীকালে সাফল্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তাহলে সে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়।
সহনশীল ও ধৈর্যশীল লোক জীবন সংগ্রামে পরাজয়ের মধ্যেও শক্তি সঞ্চয় করে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। পরাজয়, ব্যর্থতার কাছে সে নতি স্বীকার করে না। তাই ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে নিজের অধিকার আদায়সহ যেকোনো কঠিন কাজ করা সম্ভব। এ জগত সংসারে দুর্বল আর অসহায়কে সবলের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে জীবনে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
কেননা যার সহ্য ক্ষমতা নেই তার জীবন ব্যর্থতা আর হতাশায় পর্যবসিত হয়। কোনো কাজেই সে সাফল্য লাভ করতে পারে না। ধৈর্যের অভাবে তার জীবন নিয়ন্ত্রণহীন ও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। তার পারিবারিক জীবনে দুঃখ-কষ্ট, লাঞ্ছনা-গঞ্জনার মতো তিক্ততা নেমে আসে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কাজী নজরুল ইসলাম, রবার্ট ব্রুস প্রমুখ মহান ব্যক্তিত্ব জীবনে কখনো পরাজয়ের কাছে নতি স্বীকার করেননি।
ধৈর্য সহকারে সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই সামনে এগিয়ে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত বিজয়মাল্য পরেছেন। তাঁরা যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে বেঁচে আছেন ও বেঁচে থাকবেন। কাজেই ধৈর্যসহকারে স্থির মস্তিষ্কে জীবনের সকল কঠিন কাজের সমাধান করতে হবে। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে এসেও সুন্দর জীবনের স্বপ্নে বুক বাঁধতে হবে। তবেই মানুষ সকল কঠিন কাজে সফল হবে। জগতসংসারে সম্মান ও খ্যাতি নিয়ে বেঁচে থাকবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন মহামানবদের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই বহু ধৈর্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করতে হয়েছে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ও মানুষকে অন্যের হিংসা-বিদ্বেষ লোভ-লালসা কুৎসা প্রভৃতির শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে যারা ধৈর্য্য সাহস আর সততার দ্বারা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে তারা একসময় অন্যের আস্থাভাজন এ পরিণত হয়।
মন্তব্য: জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কোন কাজে ধৈর্য হারা হলে চলবে না। ধৈর্যহীন মানুষ সহজেই প্রতিকূলতার নিকট পরাজিত হয়। সুতরাং ধৈর্যশীলদের সাফল্য সুনিশ্চিত।
Leave a Reply