
ভাব সম্প্রসারণ:
গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন
নহে বিদ্যা, নহে ধন, হলে প্রয়োজন।
মূলভাব: সম্পদ নিজের আয়ত্তে না থাকলে তা প্রয়োজনের সময় কোনো কাজে আসে না। তেমনি বিদ্যা যদি বইয়ের পাতার মধ্যে আবদ্ধ থাকে তবে তার জীবনের কোন উপকারে লাগে না। সবকিছুতেই বাস্তব প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারলে তাতে জীবন উপকৃত হয় এবং তাতে সে সব জিনিসের সার্থকতা ঘটে।
সম্প্রসারিত ভাব: বিদ্যা এবং ধন একটি অপরটির বিপরীত। পার্থিব জীবনে ধন-সম্পদ ও বিদ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। গ্রন্থ বা বই-পুস্তক পাঠের মাধ্যমে আমরা সাধারণত বিদ্যা লাভ করে থাকি। কিন্তু শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা লাভ করলে শিক্ষা সমাপ্ত হয় না। বইয়ের মধ্যে যে বিদ্যা থাকে মানুষ চর্চার মাধ্যমে তাকে আত্মস্থ করে এবং মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়।
পৃথিবীর ইতিহাস এখন অনেক পুরনো। জীবনযাত্রাও এখন অনেক জটিল। এ জীবন চলার পথে জ্ঞান আহরণের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এই ক্ষুদ্র জীবনে বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সব জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য আমাদের গ্রন্থের সাহায্য নিতেই হবে। গ্রন্থের তথ্য অধ্যয়ন করে বাস্তবতার নিরিখে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাস্তবজীবনে যখন কাজে লাগানো হয়, তখনই সেটি প্রকৃত বিদ্যা বা জ্ঞান হয়ে ওঠে। সেই জ্ঞানই সত্যিকারার্থে আমাদের আলোর পথ দেখায়।
গ্রন্থ পাঠ থেকে অর্জিত বিদ্যা যদি আমরা আমাদের ব্যবহারিক জীবনে কাজে না লাগাতে পারি তাহলে সে বিদ্যা বা জ্ঞান মূল্যহীন। সে বিদ্যাকে পরের হাতে ধন-সম্পদের সঙ্গে তুলনা করা যায়। পরের সম্পদে যেমন আমাদের কোন অধিকার থাকেনা কারণ প্রয়োজনে তা আমরা ব্যবহার করতে পারি না। তাহলে সে সম্পদ আমাদের কাছে মূল্যহীন। তেমনি বিদ্যা অর্জন করে যদি আমরা আমাদের সে বিদ্যাকে ব্যবহারিক জীবনে অথবা প্রাত্যহিক জীবনে কাজে না লাগাতে পারি, তাহলে সেই বিদ্যা শুধু পুঁথিগত হিসেবেই থাকবে বাস্তব জীবনে কোন কাজে লাগবে না।
আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যে অধীত বিদ্যা অর্জন করে থাকি, জীবনের উন্নতিতে যদি তা কাজে লাগানো না যায়, তবে সে বিদ্যা কখনো সার্থকতার মুখ দেখে না। এ বিদ্যা হয়তো পরীক্ষা পাস কিংবা ভালো ফলাফলে সহায়ক; কিন্তু জীবন চলার পথে তা সহায়তা করে না। ধন সম্পদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।
এ প্রসঙ্গে চাণক্য পন্ডিত মন্তব্য করেছেন, “পুঁথিতে যে বিদ্যা থাকে আর পরের হাতে যে ধন থাকে দুটিই সমান। দরকারের সময় সে বিদ্যা বিদ্যা নয়। সে ধন ধন নয়।” যে বিদ্যা হৃদয়ঙ্গম করা থাকে সে জ্ঞান প্রকৃত জ্ঞান। আর যে ধন দিয়ে জরুরি মুহূর্তে প্রয়োজন মেটানো সম্ভব, সেটাই সার্থক ধন।
সার্থক ও সুন্দর জীবনের জন্য বিদ্যাকে বুদ্ধি দ্বারা নিজে আত্মস্থ করা এবং ধনসম্পত্তি অন্যের কাছে গচ্ছিত না রেখে নিজের আয়ত্তে রাখা প্রয়োজন যেন প্রয়োজনের সময় যেকোনো মুহূর্তে কাজে লাগানো যায়।
মন্তব্য: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, গ্রন্থ বা বই-পুস্তক হতে যে বিদ্যা অর্জন করি সেটা তখনই সার্থক হবে যখন আমরা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে পারবো। আমাদের গচ্ছিত ধন-সম্পদ যদি পরের হাতেই থাকে বিপদে যদি কোন কাজে না লাগে তাহলে সে ধন ধন নয়। তাইতো কবির ভাষায় বলতে হয়
গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন
নহে বিদ্যা, নহে ধন, হলে প্রয়োজন।
যখন আমরা শিক্ষাকে শিক্ষণ হিসেবে নিতে পারব, দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যম হিসেবে নিতে পারব, জানার পরিধি বাড়ানোর মাধ্যম হিসেবে নিতে পারব, মানুষ গড়ার উন্নতম মাধ্যম হিসেবে নিতে পারব, তখনই কেবল প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারব। আর এই কাজটি সহায়ক হিসেবে আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য গুলো দিয়ে থাকে। যাতে করে একজন শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তক এর পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে এবং দেশ ও দশের কল্যাণে নিয়োজিত থাকতে পারে।
Leave a Reply