
মানুষ কখনো কখনো অল্প কথায় মনের ভাব প্রকাশ করে। এইভাবে ঠিক রেখেই এর সম্প্রসারণ করতে হয়। ভাব-সম্প্রসারণ অনেকটা ভাবার্থের বিপরীত। কোন পদ্যাংশ বা গদ্যাংশের ভিতরে একটি গূঢ় তাৎপর্য অত্যান্ত স্বল্পতায় থাকে। তাকে বিস্তৃতভাবে প্রকাশ করার নামই ভাব সম্প্রসারণ।
প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ উপরে যে কথাগুলো বলা হয়েছে তা আপনারা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন। অর্থাৎ ভাব সম্প্রসারণ। হ্যাঁ আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত কনো না কোন ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করে থাকছি। তেমনি আজও আমরা একটি ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব। আজ যে ভাব সম্প্রসারণ টি নিয়ে আলোচনা করব। সেটি বিশেষ করে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাব সম্প্রসারণ।
ভাব সম্প্রসারণ: ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।
মূলভাব: জীবনে বড় কিছু হতে হলে প্রথমেই তাকে তার কর্মপন্থা ঠিক করে নিতে হবে। জীবনের কার্যক্রম মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই নির্ভরশীল। মানুষ যদি তার কর্মপন্থা ঠিক করে থাকে তাহলে সে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সম্ভব। কারণ কোন কিছু করার ইচ্ছা থাকলে তা বাস্তবায়ন করার উপায় সহজে বের হয়ে আসে। জীবনে সফলতা আসে ইচ্ছার যথার্থ কার্যকারিতার মাধ্যমে।
সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ নানা বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়। জীবনে বেঁচে থাকার প্রতি পদে পদে মানুষকে বাধা বিঘ্নের সাথে সংগ্রাম করে চলতে হয়। এজন্য মানুষ নানা ধরনের কাজ করে থাকে। কাজের সাফল্যের জন্য মানুষের ইচ্ছা শক্তির গুরুত্ব বেশি।
ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। এ কথাটি বাস্তবে তা রূপ দিয়েছেন শেরপুরের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সুরাইয়া জাহান। ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য চেষ্টার ফলে কোন বাধাই মনে করেনি সুরাইয়া জাহান। হাত অকেজো থাকলেও পা দিয়ে লিখে গত শনিবার (২ অক্টোবর২০২১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এরকম আরো অনেক বাস্তব ঘটনা আমরা সমাজে দেখতে পাই। এ সব কিছুই নির্ভর করে ইচ্ছাশক্তির ওপর।
মানব জীবন সংগ্রামে পরিপূর্ণ। এই সংগ্রাম করতে গিয়ে নিরাস হলে চলবে না। নিরাশ হয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। তাকে অধিক উদ্দীপনা- উৎসাহ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নামতে হবে। সেই কঠিন কাজ করার প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তির প্রকাশ ঘটাতে হবে। তাহলে দেখা যাবে সেই কাজের জন্য কোন না কোন উপায় পাওয়া যাবেই যাবে। ইচ্ছাশক্তি প্রবল হলে যে কোন কাজে সফলতা লাভ সুনিশ্চিত।
পৃথিবীতে যারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের কাজের ব্যক্তিজীবনে ইচ্ছাশক্তি প্রবল প্রকাশ পাওয়া যায়। দুর্দমনীয় ইচ্ছার কারণে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ইউরোপ জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন, আব্রাহাম লিংকন প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছিলেন এবং কলম্বাস আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন আমেরিকা। ইচ্ছাশক্তির দাঁড়ায় মানুষ কর্ম জীবনের সাফল্য লাভ করে।
মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ছোটখাট ঘটনার পিছনে যেমন ইচ্ছা কাজ করে, তেমনি বড় বড় ঘটনার পেছনে থাকে মানুষের ইচ্ছা শক্তি। মানুষের অদম্য ইচ্ছা বা আগ্রহ থাকার ফলেই আজকের বিশ্বে এত বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। মানুষের ইচ্ছার বাস্তবায়নের ফলে বর্তমান বিশ্ব সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে। কোনো কিছু করার উপায় এনে দেয় দৃঢ় ইচ্ছা। কি করতে হবে সে সম্পর্কে মনে ইচ্ছা থাকতে হবে এবং কীভাবে বা কোন উপায়ে তা বাস্তবায়ন হবে তা ইচ্ছা থেকেই তখন বের হয়ে আসে। ইচ্ছা না থাকলে জীবন অকর্মণ্য ও অর্থহীন হয়ে পড়ে।
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে,” where there is a will, there a way” অর্থাৎ ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়।
মন্তব্য: ইচ্ছা শক্তির দ্বারা বৃত্তের একাগ্রতা, ধৈর্য, সহনশীলতা ও অধ্যাবসায়ের সৃষ্টি হয়। এতে সফলতা সহজ হয়। মানব জীবনের সবকিছুই নির্ভর করে ইচ্ছাশক্তির উপরে। প্রবল ইচ্ছা এবং একাগ্রতা মানবজাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
Leave a Reply