আপনারা যারা বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তারা অবশ্যই আমাদের এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহযোগিতা নিতে পারেন এখানে বিভিন্ন শিক্ষার ওপর সমসাময়িক তথ্য গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। আপনারা আপনাদের প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো ডাউনলোড করে অথবা পড়ে পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটকে সেভাবেই তৈরি করেছি।
আমরা ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়তই কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর আলোচনা করে থাকি। আজও আমরা বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ব্যাকরণ অংশের ভাব-সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করবো। আজ আমরা যে ভাব সম্প্রসারণ কি নিয়ে আলোচনা করব সেটি নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের উপযোগী। তাহলে বন্ধুরা চলুন আজকের ভাব-সম্প্রসারণ নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা যাক:
ভাব সম্প্রসারণ: যারে তুমি নিচে ফেল, সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে, পশ্চাতে রেখেছ যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।
মূলভাব: পৃথিবীতে কোন মানুষই তুচ্ছ নয়। সমাজের সকল মানুষই একই পথের সহযাত্রী। কেউ কারো বড় কিংবা ছোট নয়। স্রষ্টা যা কিছু সৃষ্টি তার সবই একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল। একে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে আজকে সবাই সভ্যতার উৎকর্ষের অবদান রাখছে।
সম্প্রসারিত ভাব: বিশ্বে সাদা-কালো, আর্য- অনার্য, হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ- খৃষ্টান, আরব-অনারব ইত্যাদি বর্ণগত ও জাতিগত পার্থক্য ও বৈষম্য বিরাজমান। সব ভেদাভেদ ও বৈষম্যের কারণে মানব সমাজের উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সে সাথে দেখা দিয়েছে জাতিভেদ, শ্রেণীভেদ এবং ঘৃণ্য বিরোধ। ছোট- বড়, ধনী- গরীব, জাত- অজাতের প্রশ্ন মুখ্য নয়, যারা এগুলো মুখ্য মনে করে একা একাই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই প্রকৃতপক্ষে তারা এগোতে পারে না।
পৃথিবীর উচ্চতম মানুষগুলো শিক্ষা-সংস্কৃতি, আর্থিক সুযোগ-সুবিধা, সামাজিক মর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি সবদিক থেকে নিম্ন স্তরের মানুষ গুলোকে বঞ্চিত রাখতে সদাতৎপর। এর ফলে মানব সমাজের একটা বৃহৎ অংশ মনুষত্ব বিবর্জিত স্তরে অবহেলা, অবমাননা, বঞ্চনা, ও দারিদ্র্যের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। যা সমগ্র দেশ ও জাতির উন্নয়নে মানবকল্যাণের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
মানুষ সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে যদি এগিয়ে যায় তাহলে সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা যেমন গড়ে উঠতে পারে তেমনি মানুষের ব্যক্তিগত সুখ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত হতে পারে। সমাজে যারা উঁচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র এসব শ্রেণীবৈষম্যের সৃষ্টি করে তারা সমাজ হিতৈষী নয়, মানবহিতৈষী নয়। এমনকি এসব স্বার্থপর মানুষ নিজেরাও একসময় বিপদগ্রস্ত হয়। কারণ অবহেলা করে, ঘৃণাভরে স্বার্থপর মানুষেরা যাদের পেছনে ফেলে দেয় সেসব অবহেলিত বঞ্চিত মানুষেরাই তাদের এক সময় পেছন দিকে টেনে ধরে। অথচ সবাই যদি একে অপরের সতীর্থ হয়ে একযোগে কাজ করে তাহলে সবার জন্যই মঙ্গল।
বিশ্বের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী যেখানে অশিক্ষার অন্ধকারে কুসংস্কার এবং মানবতা বিবর্জিত জীবন যাত্রায় অবদমিত সেখানে মুষ্টিমেয় উচ্চশ্রেণীর সংস্কৃতি উন্নত জীবনযাত্রায়ও কলঙ্কের কালিমা চিহ্ন পড়বে– তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। কারণ সমাজ একটা যৌথ পরিবার। সেখানে একের জীবনধারা, জীবনচর্চা অপরকে প্রভাবিত করেই।
তাছাড়া বিশ্বের এসব সুবিধা বঞ্চিত অবহেলিত মানুষ গুলোর মধ্যে দিনে দিনে সঞ্চিত অসন্তোষ অনেক সময় বিদ্রোহ ও বিপ্লবের রূপ পরিগ্রহ করে থাকে। তাতে সমাজ হয় বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সবার একত্রে অবস্থানের মধ্য দিয়ে যে কোন কঠিন কাজ সম্পন্ন করা সহজতর হয়। ব্যক্তিগত সীমারেখা সামষ্টিক সীমারেখার তুলনায় খুবই সংকীর্ণ। তাই ব্যক্তিকে সামষ্টিক সীমারেখা ধরেই পথ চলতে হবে। নচেৎ একসময় ব্যাক্তি নিজেই সামষ্টিক শক্তির কাছে নত হয়ে পড়তে বাধ্য হয় এবং অস্তিত্বের সংকটে পড়ে।
মন্তব্য: জগত সংসারে জাতি, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণি, উঁচু, নিচু ইত্যাকার সকল শ্রেণীর জনগণের বসবাস। জীবনযাপন প্রণালীতে এদের রয়েছে ব্যাপক বৈষম্য ও ভিন্নতা। কাজেই সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত হতে পারে। কারো একার পক্ষে তা সম্ভব নয়, এটাই বাস্তবতা।
Leave a Reply