
বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ব্যাকরণ অংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে ভাব সম্প্রসারণ। যারা অনলাইনের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের এসব ভাব-সম্প্রসারণ পেতেচান তারা অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আমাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা আপনাদের প্রয়োজনই ভাব সম্প্রসারণ ডাউনলোড করতে পারবেন অথবা সরাসরি পড়তে পারবেন।
আজকে আমরা যে ভাব সম্প্রসারণ কে নিয়ে আলোচনা করব সেটি মূলত দশম একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপযোগী একটি ভাব সম্প্রসারণ। ভাব-সম্প্রসারণ টি হল, “যৌতুক প্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি”। বর্তমান সমাজে যৌতুক প্রথা একটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আজ এই সম্পর্কে আমরা আমাদের ভাব সম্প্রসারণ এর মাধ্যমে তুলে ধরব:
ভাব সম্প্রসারণ: যৌতুক প্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি
মূলভাব: সমাজগর্হিত কাজ সমূহের মধ্যে যৌতুক গ্রহণ অন্যতম। এর প্রভাবে সমাজে নানা অমানবিক ঘটনার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবেই চিহ্নিত।
সম্প্রসারিত ভাব: বিবাহ মহান আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নেয়ামত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। ঈমান পূর্ণতার সহায়ক।আর নারীর সঙ্গে পুরুষদের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়ে হচ্ছে একমাত্র বৈধ, বিধিবদ্ধ, সার্বজনীন এবং পবিত্র মাধ্যম। যার ফলে অপরিচিত দুজন ব্যাক্তির মধ্যে গড়ে ওঠে অকৃত্রিম এক ভালবাসা।অজানা এক অনুভূতি একে অপরকে খুব করে কাছে টানে এবং প্রশান্তিতে ভরে উঠে মানব হৃদয়!
কিন্তু যৌতুক প্রথার মতো এক বিষাক্ত ব্যাধি আমাদের সুশৃঙ্খল পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।আমাদের যেখানে প্রশান্তি পাওয়ার কথা সেখানে অশান্তির কালো ছায়ায় ছেয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ, নারী নির্যাতন, হত্যা এবং যৌতুকের চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো মহাপাপের মধ্যেও আমরা জড়িয়ে পরতেছি। যারফলে আমাদের দুনিয়া বরবাদের সাথে আখিরাতেও নিজের অবস্থান জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছি।
অথচ একটা মেয়ে বিয়ের আগে সম্পূর্ণ আলাদা একটি পরিবেশে বেড়ে উঠে। বিয়ের পরবর্তীতে সে তার হাশি-খুশি, রাগ-অভিমানসহ সকল চাহিদা উপেক্ষা করে অচেনা একটা জায়গায়, অজানা কিছু মানুষের সঙ্গে নিজের সবচেয়ে প্রিয় আপনজনদেরকে ছেড়ে এসে, জীবন পরিচালনার সংগ্রমে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়।আর সারাজীবনই সেই সংগ্রামের উপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখে!
অনেক আগে থেকে হিন্দু সমাজে পৈতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের অংশীদারিত্ব না থাকায় বিবাহের সময় কন্যার পিতা যতদূর সম্ভব আর্থিক ও বস্তুগত উপঢৌকন দিয়ে কন্যা সম্প্রদান করার প্রথা প্রচলিত ছিল। কিন্তু এ ‘দান’ কালক্রমে অধিকারের রূপ নেয় এবং বিবাহ পূর্বে বরপক্ষ দরকষাকষির মাধ্যমে অথবা দ্রব্যসামগ্রী দিতে কন্যাপক্ষ কে বাধ্য করে। এক্ষেত্রে কন্যা পক্ষের আর্থিক সঙ্গতি বা ইচ্ছা-অনিচ্ছা ভেবে দেখা হয়না।
ফলে এটা নির্মম জুলুমের পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে হিন্দুসমাজ থেকে আস্তে আস্তে এই প্রবণতা মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা মাতা বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে যৌতুকের টাকা জোগাড় করছে। প্রতিশ্রুত যৌতুক না দিতে পেরে অসংখ্য অসহায় নারী স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, অনেক নারীকে সংসার ছাড়তে হয়, এমনকি আত্মহত্যার ঘটনা অহরহ ঘটছে।
যৌতুক লোভী নর পুরুষদের হাতে প্রতিদিন স্ত্রী হত্যার মতো জঘন্য ঘটনা সংবাদপত্রের পাতায় ঘটছে। ধনী-দরিদ্র সব সমাজে নানা রূপে যৌতুক প্রথা বিদ্যমান। কিন্তু সমাজকে যৌতুকের ব্যাধি থেকে মুক্ত করতে না পারলে আমাদের সামাজিক প্রগতি অর্জন অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
তাই আমাদের উচিত হবে নিজেদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে যৌতুকের মতো সামাজিক ব্যাধিকে সমাজ থেকে নির্মূল করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা।আর তারজন্য প্রয়োজন আত্মসচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় নৈতিক শিক্ষা অর্জন করা।তবে কেবলমাত্র নৈতিক শিক্ষা অর্জন করেই বসে থাকলে চলবে না বরং সেই শিক্ষার আলোকে নিজের জীবন পরিচালনা করতে হবে।
আর যৌতুক প্রথা যে একটা সামাজিক অপরাধ সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।সর্বোপরি যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সরকার যে সকল আইন এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।তবেই আশা করা যায় আমাদের সমাজটা একটা যৌতুক মুক্ত সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মন্তব্য: যৌতুক একটি ঘৃণ্য প্রথা। এর বিরুদ্ধে সবাইকে জোরদার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা আবশ্যক। যৌতুকের বিরুদ্ধে সমাজে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
Leave a Reply