
আপনারা যারা বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ভাব সম্প্রসারণ বিষয়ে জানতে চান তারা অবশ্যই আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। আমাদের এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা হয়ে আসছে। তাই আপনারা যারা বিভিন্ন প্রকারের ভাব সম্প্রসারণ ছাড়াও শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য পেতে চান তারা অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। আজ আমরা যে ভাব সম্প্রসারণ টি নিয়ে আলোচনা করব সেটি বিশেষ করে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপযোগী একটি ভাব সম্প্রসারণ।
ভাব সম্প্রসারণ: মিত্রত্ব সর্বদা সুলভ, মিত্রত্ব রক্ষা করাই কঠিন।
মূলভাব: পৃথিবীতে বাস করতে হলে মিত্রত্ব অপরিহার্য। কারণ মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে সে সমাজে কখনোই একাকীত্ব বসবাস করতে পারে না অথবা চাইও না। সে সবসময় পরিবার-পরিজন আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীদের নিয়েই বসবাস করতে চাই। তাদেরও প্রয়োজন মিত্রত্ব। সত্তিকারের মিত্রত্ব কোন জাতিকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দেয়।
সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে সুন্দর ভাবে বাস করতে হলে প্রত্যেকেরই ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায়ই হোক একে অন্যের সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কারণ হলো সামাজিক জীব হিসেবেই একজন মানুষ আর একজন মানুষের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। সেই সম্পর্কটি হয় প্রেম- প্রীতি আর ভালবাসার। এর সাথে থাকে না কোন রক্তের সম্পর্ক। যে কোন মুহূর্তে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে কোন দ্বিধা নেই যার, সে কেমন করে অনাত্মীয়ের সাথে সম্বন্ধে গড়ে তোলে, তাকে কখন আপন করে নেয় তা সে নিজেও জানে না। এ ধরনের সম্পর্ককে আমরা মিত্রতা বলে থাকি।
কিন্তু এই মিত্রতা যত সহজে গড়ে ওঠে তা দীর্ঘ দিন টিকিয়ে রাখা তত সহজ নয়। কারণ উভয়ের মন- মানসিকতার মিল না হলে, কিংবা সম্পর্কের মধ্যে কোনো রূপ স্বার্থপরতা দেখা দিলে সে সম্পর্ক রক্ষা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভঙ্গুর কাঁচের মতো এই মুহুর্তের মধ্যে ভেংগে খান খান হয়ে যায়। এজন্যেই বলা হয়– মিত্রতা গড়া যত সহজ তাকে টিকিয়ে রাখা তত সহজ নয়।
সমাজে বসবাস করতে হলে একে অন্যের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। অপরের সহযোগিতা ছাড়া কারো পক্ষেই জগতে বাস করা সম্ভব নয়। কিন্তু সেই সহযোগিতার পেছনে কোন হীনস্বার্থ লুকিয়ে থাক, তা কেউ কখনো কামনা করে না। কাজেই মিত্রতা শুধু গড়লেই সব হয়ে যায় না, তা টিকিয়ে রাখার জন্যে উভয়ের যে কোনো স্বার্থ ত্যাগ করে, নিঃস্বার্থভাবে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করা একান্ত প্রয়োজন।
আমাদের চারপাশে যে শত শত বন্ধুরা ঘোরাফেরা করে তাদের বেশিরভাগই প্রয়োজনের তাড়নায়, স্বার্থ সিদ্ধি কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বন্ধুত্ব করে। উদ্দেশ্যপ্রবণ মানুষেরা কখনো ব্যক্তির অধিকারে থাকা অর্থের জন্য, কখনো খ্যাতির জন্য, শক্তির জন্য আবার কখনো বা ক্ষমতার জন্য বন্ধুত্ব করে। বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে তারা ব্যক্তির সেই অর্থ-বিত্ত, খ্যাতি, ক্ষমতা ও শক্তিকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করে।
বন্ধুর সুসময়ে সে সারাক্ষণ বন্ধুর পাশে থাকে। চাটুকারিতায় বন্ধুকে মুগ্ধ করে তার কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে। একই সাথে তারা বন্ধুর সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়, পরশ্রীকাতর হয়ে পড়ে। বন্ধুর বিনাশ চায়। নিজের স্বার্থসিদ্ধি হওয়া মাত্রই তারা বন্ধুত্বে ফাটল ধরায়, অস্বীকার করে। তাই এত দিনের বন্ধুটি যখন কোনো বিপদে পড়ে বা কোনো সাহায্য প্রয়োজন হয় তখন উদ্দেশ্যপ্রবণ বন্ধুকে আর কোথাও পাওয়া যায় না। অন্যদিকে প্রকৃত বন্ধুরা কখনোই বন্ধুর বিপদে তাকে এড়িয়ে চলে না, কিংবা সুসময়ে তার থেকে কোনো সুবিধাও নেয় না। বরং সকল পরিস্থিতিতে তারা বন্ধুর পাশে থাকে। কোনো রকম স্বার্থ ছাড়াই, কেবলমাত্র নিখাঁদ বন্ধুত্বের টানে তারা সবার আগে বন্ধুর বিপদে ঝাপিয়ে পড়ে।
কিন্তু এমন বন্ধুদের সংখ্যা নিতান্তই কম। তাছাড়া হাজারো স্বার্থপরের ভিড়ে আমরা প্রকৃত বন্ধুকে চিনতে পারি না। ভুল মানুষের প্ররোচনায় তাদেরকেই সত্যিকারের বন্ধু ভেবে আস্থা রাখি। বিনিময়ে তারা প্রয়োজন মিটিয়ে বন্ধুত্ব বিনষ্ট করে। ফলে বন্ধুত্ব রক্ষা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।
মন্তব্য: স্বার্থপর বন্ধুদের হিংসা, লোভ ও পরশ্রীকাতরতা বন্ধুত্ব নষ্ট করে। শুধুমাত্র নিঃস্বার্থ প্রকৃত বন্ধুরাই বন্ধুত্বের মর্যাদা দেয় এবং তা রক্ষা করে। তাই আমাদেরকে প্রকৃত বন্ধু বাছাই করতে শিখতে হবে।
Leave a Reply