
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রতিটি ঋতু নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভাব হয় এই দেশে। যদিও আমাদের এই দেশ ষড়ঋতুর দেশ কিন্তু মূলত আমরা সাধারণত তিনটি ঋতুর বেশি দেখতে পাই। একটি হলো গ্রীষ্মকাল বর্ষাকাল ও শীতকাল। বর্ষাকাল এর আগমনে প্রকৃতি তার নতুন রূপ ফিরে পায়। হ্যাঁ শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা এমন একটি রচনা লিখব যেটি বর্ষাকালের এরই অংশ। অর্থাৎ একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা। বিভিন্ন পরীক্ষায় রচনাটি কম আসলেও এর গুরুত্ব কতটা কম নয়।
একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা
প্রবন্ধ সংকেত:সূচনা -বর্ণনা -উপসংহার।
সূচনা: বর্ষা বাংলার প্রকৃতি ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি বাঙালির কাছেই বর্ষা ভিন্নরকম ব্যঞ্জনা নিয়ে আসে। প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগের কাব্যে কবিতায় কেবলই বর্ষা-বন্দনা। বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় তনময় কবিগুরু উচ্চারণ করেছেন—
‘এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন মেঘস্বরে বাদল ঝর ঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়’।
বর্ষণমুখর সন্ধ্যার অনুভূতি আবেগ শুধুমাত্র অনুভব করা যায়, প্রকাশ করা দুরূহ। এমন সন্ধ্যা উপভোগ্য ও সুন্দর।
বর্ষণমুখর সন্ধ্যা বর্ণনা: বর্ষায় ঝর ঝর সারাদিন ঝরছে। বৃষ্টি ঝরছে তো ঝরছেই। বিরাম নেই তিলমাত্র। নীল আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। আকাশ জুড়ে মেঘের ঘনঘটা। মেঘের পরে মেঘ। কাজল কালো মেঘের রাশি, পূবাল বায়ে সওয়ার হয়ে ছুটে চলেছে। তার সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। বিকেল পাঁচটার দিকে বৃষ্টি একটু কমে এলেও আকাশে মেঘের কমতি নেই। ঘন্টাখানেক বিরতির পর মেঘ আরও ঘনিয়ে এলো। যেন সন্ধ্যা নেমে এসেছে। পাখিরা সব দিনের পালা সাঙ্গ না হতেই কাল পাখা মেলে ধরাধামকে গ্রাস করল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো আধার।
গৃহকোণ ভরে গেল নিকষ কালো আঁধারে। নিস্তব্ধ চারিদিক। শুধু শ্রবণেন্দ্রিয়ে অনুরণন তুলেছে অবিরাম বারিধারা ঝমঝম শব্দ। ছোট বোনটি হ্যারিকেনটা জ্বেলে রেখে গেলো পড়ার টেবিলে। আমি তখনও চেয়ারটায় বসে আছি খোলা বাতায়ন পাশে। জানালার গ্রিল ভেদ করে ভেতরে ঢুকছে বাতাস। ভেজা আর ঠান্ডা। চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিবিষ্টচিত্তে চেয়ে থাকি। বর্ষণসিক্ত বাইরে সবকিছু ই তখন শুধু আমার। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝিলিক। তারি মাঝে চোখে পড়েছে বাইরের বর্ষণসিক্ত গাছগুলো যেন ভিজে চুপসে জুবুথুবু হয়ে পড়েছে। এক ঘেয়ে বর্ষণের সুর ছাড়া সবই যেন নীরব নিথর।
এ শ্রাবণ সন্ধ্যায় প্রকৃতির কবি রবীন্দ্রনাথের ‘সঞ্চয়িতা’ নিয়ে বর্ষায় কবিতা গুলো পড়তে ইচ্ছা হলো। এসময় গৃহত্যাগী মন আমার মুক্তগতি মেঘবৃষ্টি নিয়েছে আসন। আমি ঠিক বলতে পারি না, ঠিক ধরো সন্ধ্যায় কবি কালিদাসের ‘মেঘদূত’ কিংবা বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রবীন্দ্রনাথ ‘বর্ষা’ কবিতা লিখেছেন কি না। এ কথা সত্য যে বর্ষায় কবিতা লেখার জন্য মনে ভাব জাগে। কিন্তু স্যাঁতসেতে মন নিয়ে আমি যখন মেঘের কোলে ঘুরে বেড়ায় সেই বিশেষ মুহূর্ত কেমন করে কবিতা লেখা আর বুঝি না। আমার মনে সময় শূন্য হয়ে যায় অবশ্য এমন হতে পারে যে এ কাজল কালো মেঘের রূপ দেখে কুচবরণ কন্যা মেঘবরণ কেশ মনে করতে পারে।
গভীর আঁধারে ছেয়ে গেছে দিক দিগন্ত। কাল নেকাবে মুখ ঢেকেছে প্রকৃতি। এমন বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় জীবনের হাসি কান্না আনন্দ বেদনা টুকরো টুকরো স্মৃতি হৃদয় পথে উঠেছে ভাস্বর হয়ে। প্রাণের পেয়ালা সে আবেগী হয়ে উঠেছে আপ্লুত, ভাষাহীন ভাব। বানিহারা অনুভূতি হৃদয়ের গভীরে নাড়া দিচ্ছে অবিরত।
বর্ষণমুখর সন্ধ্যা নিকষ কালো আঁধারে আসমান জমিন সব একাকার। প্রকৃতির সবকিছু মিলে গড়ে তুলেছে এক কল্পনার রঙ্গিন জগত। প্রকৃতির মাঝে আমার ব্যক্তিসত্তা একাকার হয়ে গেছে। হঠাৎ মায়ের ডাকে সম্বিত ফিরে এলো মা খেতে ডাকছে ন। সময়ের ঘণ্টাধ্বনি জানিয়ে দিলো রাত দশটা। তখনো বৃষ্টি ঝরে চলেছে অবিরাম। কিন্তু বর্ষণমুখর সন্ধ্যার সে স্বপ্নীল আবেশময় পরিবেশ অনেক আগেই অনুপ্রবেশ করেছে রাতের সীমায়।
উপসংহার: রাত বাড়ছে। আরো বাড়বে। কিন্তু অকৃত্রিম শুদ্ধতা সমৃদ্ধ প্রকৃতির এই যে নিঃস্বার্থ দান, সেদান টুকু আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে দু’হাত পেতে গ্রহণ করলাম। আজকের বর্ষণমুখর সন্ধ্যা টি আমি কোনদিন ভুলবো না। আমার স্মৃতিতে তা অক্ষয় হয়ে থাকবে চিরদিন।
Leave a Reply