আপনাদের সকলকে আমাদের এই ওয়েবসাইটে স্বাগত জানাই। আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে বাংলা ব্যাকরণ এর প্রবন্ধ রচনা নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা করে আসছি। আমরা চেষ্টা করেছি শিক্ষার যাবতীয় বিষয় গুলো আপনাদের সামনে আমাদের এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তুলে ধরার। এখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় প্রবন্ধ রচনা গুলো তুলে ধরা হয়েছে। আজকে আমরা যে রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব সেটি নিম্নে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি:
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক
(প্রবন্ধ সংকেত: ভূমিকা-শিক্ষার আগ্রহ-ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক- ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের গুরুত্ব- শিক্ষকের কাছে প্রত্যাশা; ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়নে করণীয়-উপসংহার।)
ভূমিকা: জাতীয় জীবনের শিক্ষাকে কল্যাণকর করে তোলার জন্য ছাত্রীর সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক নিখাদ ও গভীরতর হওয়া প্রয়োজন। কারণ আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর এক জন ছাত্রীর ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর হচ্ছে একজন শিক্ষক। আরে জন্য ছাত্র এবং শিক্ষকের সম্পর্ক হওয়া উচিত সুন্দর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ।
শিক্ষার আগ্রহ: ছাত্ররা অপরিণত বয়স আর কচি মন নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে পদার্পণ করে। শিক্ষা গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা ও তাদের মনে প্রবল। এ সময় তাদের সামনে যদি মহৎ আদর্শ তুলে ধরা যায়, তবে তাদের কাছ থেকে জাতির জন্য কল্যাণকর অনেক কিছুই আশা করা যায়। আশিক উদ্দেশ্য সাধনের দায়িত্ব শিক্ষকদের। ছাত্রদের দূরে ঠেলে রেখে নয় ভয়ের দন্ড বা শাস্তির ভয় দেখিয়ে নয় একান্ত আপন জনের মত মনে করে যদি তাদের কাছে টেনে নেয়া যায় তাহলে তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ফল লাভ করা সম্ভব।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক: শিক্ষককে ছাত্র দের অভিভাবক বলা হয়ে থাকে। মাতা-পিতা যেমন সন্তানদের সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করেন, একজন শিক্ষকও তেমনি শিক্ষার্থীর জীবনকে পূর্ণাঙ্গরূপে প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করেন। অনেক ক্ষেত্রে পিতা-মাতা বা অভিভাবকের কাছে একজন ছাত্র যতটুকু সহজ হতে পারে না, শিক্ষকের কাছে তার চেয়েও বেশি সহজ হয়ে যায়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধানও চেয়ে বয়সে তারা শিক্ষকের কাছে। তাই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হলো সাফল্য-ব্যর্থতা, গ্লানি কিংবা গর্বে সমান অংশীদারিত্বের সম্পর্ক।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের গুরুত্ব: শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। তাই শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক যত বেশি ভাল হবে, সুন্দর হবে, বন্ধুত্বপূর্ণ হবে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে তত ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। শিক্ষকের সান্নিধ্যে এসে শিক্ষার্থীরা জীবনকে জনতে, চিনতে ও বুঝতে শেখে। সব কিছুকে নতুন করে দেখতে শেখে।
শিক্ষক শিক্ষার্থীর দেখার চোখ খুলে দেয়, জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়। তাদেরকে জ্ঞানের পথে, আলোর পথে নিয়ে যায়। শিক্ষক জীবন সম্পর্কে যে দর্শন চিন্তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় তার ভিত্তিতেই তারা তাদের জীবনের ব্রত ঠিক করে। একজন ভাল শিক্ষক একজন বখে যাওয়া শিক্ষার্থীকেও সঠিক পথে নিয়ে আসতে পারেন, তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।
শিক্ষকের কাছে প্রত্যাশা: শিক্ষকেরা মহদ আদর্শের প্রতীক। ছাত্ররা যদি শিক্ষকের কাছ থেকে মহৎ আদর্শ প্রত্যক্ষ করতে পারে তবেই তারা তাদের অনুসারী হয়ে উঠবে। একজন শিক্ষকের কাছে তার শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা হলো শিক্ষক তাকে জীবনোপযোগী, যুগোপযোগী শিক্ষা দেবেন। তাকে জ্ঞান অর্জনের পথ দেখাবেন, আলোর পথের যাত্রী করবেন। শিক্ষক তার ছাত্রের ভেতর জ্ঞান লাভের, অজানাকে জানার, অদেখাকে দেখার এবং চেনা-জানা বিষয়গুলোকে নতুন করে চেনার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে দেবেন, ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা দেবেন।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়নে করণীয়: একজন শিক্ষক তখনই সফল হন যখন তিনি নিজ শিক্ষায় তার ছাত্রকে শিক্ষিত করতে পারেন। আর ছাত্রও তখনই সফল হয় যখন সে সেই শিক্ষাকে আত্মস্থ করতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে। আর এ জন্য প্রয়োজন ছাত্র শিক্ষক সুসম্পর্ক। কিন্তু বর্তমানে এই সম্পর্ক খুবই নাজুক। তাই এই সম্পর্ক উন্নয়নে যা করতে হবে তা হলো-
– শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পরস্পরের উপর অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো পালন করতে হবে।
– পরস্পরের কাছে যে প্রত্যাশাগুলো রয়েছে সেগুলো পুরণ করতে হবে।
– কোনো পরিস্থিতিতেই কেউ কারো প্রতি অসাদাচরণ করবে না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। শিক্ষক তাদের প্রতি স্নেহশীল থাকবেন।
– শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষার্থী অনেক বেশি প্রভাবিত হয় তাই শিক্ষকের উচিত নিজের গুণাবলীগুলো শিক্ষার্থীর ভেতরে ছড়িয়ে দেয়া।
– শিক্ষকতাকে শুধুমাত্র মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেই হবে না বরং তা সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে শিক্ষার জগতের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হলেন একজন শিক্ষক। তাই ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক একান্তই নিবিড় হতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুন্দর সম্পর্কের মধ্য দিয়ে জ্ঞানচর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলা যায়। এ জন্য ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক হতে হবে গভীর থেকে গভীরতর।
Leave a Reply