রচনা: পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য অথবা মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য

1.5/5 - (6 votes)

আজকে আমরা যে রচনাটি আপনাদের সামনে তুলে ধরব সেটি মূলত ষষ্ঠ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী একটি রচনা। তবে বিশেষ করে এই রচনাটি সপ্তম অষ্টম নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষায় এসে থাকে। আজকে যে রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব সেটি আমরা আপনাদের সামনে নিম্নে তুলে ধরলাম:

পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য
অথবা মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সংকেত: ভূমিকা-মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য -বিভিন্ন ধর্মে পিতা-মাতার স্থান- মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মহান ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত-পিতা-মাতার প্রত্যাশা পূরণ-অনুগত ও সন্তুষ্ট থাকা- সন্তানের শিক্ষা লাভ করা-পিতা-মাতার অবাধ্যতার পরিণাম-উপসংহার।)

ভূমিকা: পৃথিবীতে হাজারও সম্পর্কের মাঝে সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্কের বন্ধন গড়ে ওঠে সন্তান এবং মাতাপিতার মধ্যে। পৃথিবীতে পিতা-মাতাই আমাদের জীবনের উৎস। পিতা-মাতা আমাদের পরম আপনজন। তাদের মাধ্যমেই আমরা এই সুন্দর পৃথিবীতে এসেছি এবং তাদের ত্যাগ তিতিক্ষার কারণেই আমরা পৃথিবীর বুকে বেড়ে উঠি। সুতরাং প্রত্যেক সন্তানের উচিত মাতা-পিতার প্রতি তাদের যে কর্তব্য তা সঠিকভাবে পালন করা এবং সব সময় তাদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা।

মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য: সন্তানের জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে তার মাতাপিতা। পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য পালন যে কত গুরুত্বপূর্ণ তার প্রমাণ মানবজীবনের শাশ্বত দলিল কোরআন এবং মানব আদর্শের প্রতীক হাদিসে প্রমাণিত। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, “তোমরা আল্লাহর এবাদত করো, তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না, এবং পিতা-মাতার সাথে উত্তম আচরণ করো”। একারণে সন্তানের জীবনে মাতা-পিতার গুরুত্বও সবচেয়ে বেশি।

তাদের অধিকার প্রদান করাই সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সন্তানদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে সব থেকে প্রথমে যেটা আসে তা হলো পিতা-মাতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। বাবা-মা’র সন্তুষ্টি অনুযায়ী সন্তানের পথ চলা উচিত। প্রত্যেক সন্তানের উচিত সব সময় পিতা-মাতার বাধ্য থাকা এবং তাদের আদেশ নিষেধ মেনে চলা। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি বৃদ্ধ অবস্থায় তার বাবা-মাকে পেল কিন্তু তাদের সেবা-যত্ন করল না তার মতো হতভাগা আর কেউ নেই।’ তাই পিতা-মাতা মনে কষ্ট পায় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়।

বিভিন্ন ধর্মে পিতা-মাতার প্রসঙ্গ: সকল ধর্মের পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য পালনের আদেশ উপদেশ আছে। পবিত্র কোরআনে ভক্তি ও শ্রদ্ধার ব্যাপারে আল্লাহর পরেই পিতা-মাতার কথা উল্লেখ আছে। বলা হয়েছে— “পিতা মাতার সন্তুষ্টি ব্যতীত কেউ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।” হাদিসে বলা হয়েছে—” মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”।

মাতাপিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল মহান ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত: ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পৃথিবীতে মরেও যারা অমর এবং চিরস্মরণীয় হয়ে মানুষের হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন। তাঁরা সকলেই মাতৃ ও পিতৃভক্তির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী রাসূল (স.) শৈশবেই তাঁর মাকে হারিয়ে দুধমাতা হালিমার স্নেহ-মমতায় বেড়ে ওঠেন। দুধমাতা হলেও তিনি তাঁকে নিজের মায়ের মতোই ভালোবাসতেন।

হযরত বায়েজীদ বোস্তামি ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম ইতিহাসে মাতৃভক্তদের তালিকায় চিরকালই স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাম পিতৃসত্ব পালনের উদ্দেশ্যে চৌদ্দবছর বনবাস কাটিয়েছিলেন। হযরত আব্দুল কাদির জিলানী, হাজী মুহম্মদ মহসীন, জর্জ ওয়াশিংটন ও আলেকজান্ডার প্রমুখ মহান ব্যক্তিগণ মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইতিহাসে যুগ-যুগান্তর ধরে চির স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন।

পিতা-মাতার প্রত্যাশা পূরণ: সব বাবা-মার একটাই প্রত্যাশা-‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। সন্তানের সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার নিরলস সাধনা বিরাট ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেক মাতা-পিতাই চান তাদের ছেলেমেয়েরা সুসন্তান হিসেবে সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াক, সকল প্রকার অন্যায় ও মিথ্যাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা অর্জন করুক। এসব প্রত্যাশা পূরণ করার মাধ্যমেও তাদের প্রতি কর্তব্য পালন করা যায়।

উপসংহার: ইহকালীন এবং পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করতে হলে পিতামাতার প্রতি কর্তব্যগুলো ঠিকভাবে পালন করতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে প্রত্যেক বাবা-মা তার সন্তানের ভালো চান। সুতরাং তাদেরকে মেনে চলতে হবে।

উপরে উল্লিখিত রচনাটি আমরা চেষ্টা করেছি প্রত্যেকটা পয়েন্ট সুন্দর ভাবে আলোচনা করার। দুই থেকে তিনটা পয়েন্ট আমরা আলোচনা করতে পারি নাই এইটা আপনার অবশ্যই আপনাদের পাঠ্যপুস্তক এর সহযোগিতায় দেখে নিবেন। আগামীতে অন্য একটি রচনা নিয়ে আপনাদের সামনে আবার হাজির হবো সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button