
আপনারা যারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য রচনা সহ–শিক্ষার অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ করছেন তারা এখনই আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যে সকল রচনাগুলো আসে আমরা সেই সকল রচনা গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আমরা চেষ্টা করেছি সমসাময়িক বিষয়ের উপর রচনাগুলো তুলে ধরার। বিশেষ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর যে রচনাগুলো রয়েছে সেগুলোর উপর আমরা বিশেষ করে গুরুত্ব দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধু না থাকলে আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতাম না।
আজ আমরা যে রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব সেটি “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি“ আপনারা খেয়াল করে থাকবেন এই রচনাটি আমাদের জাতীয় দিবসগুলোতে যে রচনা প্রতিযোগিতা হয় সেখানে প্রায় সই এসে থাকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি
ভূমিকা: হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এর কথা বললেই যার নাম প্রথমে আসে তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু। আজীবন আমাদের জন্য বাংলা মাতার জন্য যিনি নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করেছেন তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অন্তর্নিহিত অনুপ্রেরণা, প্রাণ সঞ্চারনী চেতনা, অপারাজেয় শক্তি সম্বলিত বহুমুখী বিরল বৈশিষ্ট্যের অনন্য নাম। তিনি ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন বাংলাদেশের স্রষ্টা, স্থপতি, বিনির্মাতা ও জাতির পিতা।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও শৈশব কাল: ১৯২০ সালের ১৭ই এপ্রিল সাবেক ফরিদপুর বর্তমান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন আমাদের জাতির জনক। তাঁর পিতা হলেন শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুন । দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি হলেন পিতা–মাতা তৃতীয় সন্তান। আদর করে তার পিতা–মাতা তার নাম রাখেন খোকা।
হাজার ১৯২৭ সালে তার বয়স যখন সাত তখন তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় স্থানীয় গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নয় বছর বয়সে তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জের মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ সাল থেকে চার বছর বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেননি। কারণ তাঁর চোখের জটিল রোগের কারণে সার্জারি করতে হয়েছিল এবং তা সেরে উঠতে সময় লেগেছিল। গোপালগঞ্জের মিশনারীদের তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি কলকাতা কলেজ থেকে আইএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই।
১৯৪৮ সালে খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানালে তিনি তার প্রতিবাদ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অগ্রহণীয়। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা তার নেতৃত্বে পাস করা হয় যা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত এর জন্য তিনি গ্রেফতার হন তবুও তিনি থামেননি।
১৯৭০ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে। ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। বলেন,
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম“ তার এই ভাষণটি আন্তর্জাতিকভাবে চিরস্মরণীয়। এভাবেই তাঁর রাজনৈতিক ভাবে বেড়ে ওঠা এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন করার দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ।
বঙ্গবন্ধু ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি: বঙ্গবন্ধু যে আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রতিনিধিত্ব করতেন তার ব্যক্তিত্বের বিশালত্ব চরিত্রের দৃঢ়তা নেতৃত্তের সম্মোহনী ক্ষমতা ব্যবহারের অমায়িকতা কূটনৈতিক প্রজ্ঞা আত্মবিশ্বাস ও আদর্শিক আপোষহীনতা তাকে সবার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করত বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নৈপুণ্য স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বৈশ্বিক অংশগ্রহণের দ্বার উন্মোচন করে।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে বাংলাদেশ কমনওয়েলথের সদস্য পদ লাভ করে। ১৯৭৩ সালের আগস্টে অটোয়ায় কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন। বঙ্গবন্ধুর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল হাজার ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ জাতি হিসেবে আমাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উচ্চতর স্থানে অধিষ্ঠিত করেছিল। সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারের রক্তের তুলিতে আঁকা বাংলা বর্ণমালা সেদিন পেয়েছিল বিশ্বজনীন স্বীকৃতি তা কেবল জাতির জনকের অগাধ দেশপ্রিয় আত্মপ্রত্যয়ী বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য সম্ভবপর হয়।
বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দৃষ্টিতে তাকে মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রতীক রূপে অভিহিত করা হয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞানী দার্শনিক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের ভাষায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন “ঐশ্বরিক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ এবং নিজেই তিনি সে আগুনে ডানাযুক্ত করতে পেরেছিলেন।“
কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেন, “আমি হিমালয় দেখিনি তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি ছিলেন হিমালয় সমতুল্য।” বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেন, “শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের মানুষ হারালো তাদের একজন মহান নেতাকে আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।“
ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর মূল্যায়নে বলেন, “শেখ মুজিব একজন মহান নেতা ছিলেন। তাঁর অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল“।
আমেরিকার মিশনারি লকারবি বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন, “বাঙালি জাতির ভ্রাতা“। বিবিসি কর্তৃক পরিচালিত জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় শীর্ষ ব্যক্তির নাম হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ কে কিংবদন্তি নেতৃত্বের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বিশ্ব দরবারে সমুজ্জ্বল করেছিলেন। বিশ্ববরেণ্য ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই স্বীকৃতি অত্যুক্তি নয়, কেননা তিনি বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার সমার্থক নাম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিকভাবে স্মরণীয় একজন ব্যক্তি। বাঙালির ক্ষেত্রে কবি বলেছেন যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
উপরের যে রচনাটি নিয়ে আমরা আলোচনা করলাম আসলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লিখতে গেলে লেখার কোন শেষ হয় না। আমাদের রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি আমরা চেষ্টা করেছি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা সেটা নিয়ে আলোচনা করার পরবর্তী রচনায় আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করব বিস্তারিতভাবে।
Leave a Reply