রচনা: শীতের সকাল অথবা একটি শীতের সকাল অথবা শীতকাল

রচনা: শীতের সকাল অথবা একটি শীতের সকাল অথবা শীতকাল

প্রবন্ধ সংকেত: ভূমিকা-সূর্যোদয়ের পূর্বে শীতের সকাল-শীতের সকালের রুপ- শীতের সকালের বৈরাগ্য মূর্তি- রুপ বদল- গ্রামীণ জীবনে শীতকাল -নগরজীবনের শীতকাল – উপসংহার।

ভূমিকা: ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রত্যেকেরই রয়েছে আলাদা আলাদা রূপ বৈচিত্র, আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। তবে শীতকালের বৈশিষ্ট্যাবলী অন্যান্য ঋতুর থেকে একেবারে পৃথক। শীতের সকালের আবির্ভাব কুয়াশাচ্ছন্ন অনন্য সাধারণ রূপ নিয়ে। বাংলাদেশের ঋতুচক্রে পৌষ এবং মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। শীতের সকালে জীবনের চাঞ্চল্য তেমন চোখে পড়ে না। শীত আড়ষ্ট করে তোলে জনজীবন।

সূর্যোদয়ের পূর্বে শীতের সকাল: লেপের তলা থেকে উঠি উঠি করেও উঠতে ইচ্ছে হয় না। শিয়রে শীত যেন কেশর ফুলিয়ে থাবা পেতে বসে আছে। গরম বিছানা ছেড়ে উঠতে গেলে কেমন এক অপ্রতিরোধ্য আলসেমি সমস্ত চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। কর্মের আহ্বান সত্ত্বেও কেমন এক মধুর জড়তায় মানুষ আরামের শয্যায় পড়ে থাকে। উঠিতেছে করে উঠা হয় না বিছানা থেকে।

শীতের সকালের রূপ: পূর্ব দিকে ধীরে ধীরে আলো ফুটতে থাকে। উত্তর দিক থেকে ঠাণ্ডা বাতাস এক দীর্ঘশ্বাসের মতো হঠাৎ শিরশির করে বনের গাছগুলোর পাতার ফাঁক দিয়ে বয়ে যায়। পাতাগুলো সহসা কেঁপে ওঠে। টুপ টুপ করে শিশির ঝরে পড়ে। টিনের চালে এবং ঘাসে ঘাসে শিশির বিন্দু জমে ভোরের আলোয় ঝলমল করতে থাকে।

দূরে কোথাও খেজুর রস জ্বাল দেওয়া হচ্ছে বাতাসে তার লোভনীয় মিষ্টি গন্ধ ভেশে আশে। গ্রামের কৃষকরা বলদ হাঁকিয়ে মাঠের দিকে চলছে। দূরে কোন মাদ্রাসায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মধুর সুরে কোরআন তেলাওয়াত করছে। এখন বিছানায় পড়ে পড়ে গভীর আলস্যে তন্দ্রা সুখ উপভোগ করা অনুচিত। তাই অজ্ঞতা গা এলিয়ে বিছানা থেকে বের হওয়ার জন্য সচেষ্ট হতে হয়।

শীতের সকালের বৈরাগ্য মূর্তি: ততক্ষণে বাইরের পৃথিবীর ঘুম ভেঙেছে। দিকে দিকে কর্মের মুখরতাই শীতের সকাল কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। পূর্ব দিগন্তে আলো ছড়িয়ে সূর্যের আকাশ পরিক্রমায় বের হয়ে পড়েছে । একটি নীলকন্ঠ পাখি রিক্ত পত্র বাবলার ডালে বসে রোদ পোহাচ্ছে। একজোড়া নাম না জানা পাখি ডানাই বাতাস তুলে কুয়াশার ভেতর দিয়ে কোন অজানার পানে ছুটছে। শীতের সকাল যেন এক প্রৌঢ়া কলবধূ। তার মুখ খানি দিগন্ত বিস্তৃত কুয়াশায় অবগুন্ঠনে ঢাকা।

রুপ বদল: ধীরে ধীরে বেলা বাড়তে থাকে। শীতের সূর্য পূর্ব দিগন্তের কুয়াশার জাল ছিন্ন ভিন্ন করে এক গভীর আলস্যে উপরে উঠতে থাকে। তার কিরণ বানে কমতে থাকে শীতের তীব্রতা। সোনালী রোদে চারিদিক ভেসে যায়।

গ্রামীণ জীবনে শীতকাল: গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পেশাগত দিক থেকে কৃষির সাথে জড়িত। তাই শীতের সকালে ও তাদের শীতের আরাম ও আনন্দকে উপভোগ করার সময় থাকেনা। শীতের কুয়াশা ভেদ করে লাঙ্গল নিয়ে তারা ছুটে ফসলের মাঠে। শীতকালে ইরি ধান রোপনের প্রধান সময়।

অন্যদিকে কৃষাণী বন্ধুরাও সবজি খেতে শুরু করে পরিচর্যা, আবার কেউ কেউ তোলে শাকসবজি। শীতের কনকনে ঠাণ্ডা বার্ধক্য পীড়িতদের খানিকটা বেশি চেপে ধরে। তাই ভোর হলেই খরকুটোর আগুন জ্বালিয়ে তারা উষ্ণ করে দেয় তাদের শরীর। এসময় শিশুরা এসে যোগ দেয় আগুন পোহাতে। ওদিকে পিঠে বানানোর ধুম পড়ে যায় রান্নাঘরে। গরম গরম পিঠা আর মিঠে রোদ সব মিলিয়ে যেন অভূতপূর্ব আনন্দ আয়োজন।

নগরজীবনে শীতকাল: নগর জীবনে সাধারণত শীতকে উপভোগ করার সুযোগ কম। নগরের উঁচুতলার মানুষেরা গরম কম্বল জড়িয়ে ঘুমিয়ে কাটায় শীতের প্রভাত। ফলে তাদের পক্ষে সকালের কুয়াশাচ্ছন্ন সুন্দর রূপ অবলোকন সম্ভব হয় না। অন্যদিকে চাকুরীজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষ অফিসের কাজে বেরিয়ে পড়ে। নগরীর পথে পথে কুয়াশা ভেদ করে ছুটে চলে তারা নিজ নিজ গন্তব্যে। জীবনের ব্যস্ততা চোখে পড়ে নিয়ত। এখানে শিশিরে পা ভেজে না, পিঠার গন্ধে বাতাস ব্যাতিক্রম হয়ে ওঠেনা। নগরে ভাসমান মানুষ হয় শীতের নির্মম শিকার।

উপসংহার: শহরে ও গ্রামে শীতের সকাল দু রকম ভাবে উপস্থাপিত হয়। শহরের ইট-কাঠ-পাথরের নিদারুণ চাপে শীতের সকাল তার নিজস্ব মূর্তিতে প্রকাশিত হতে পারে না। এখানে কুয়াশায় ঢাকা গ্রামের স্নিগ্ধ জৌলুস নেই। তার পরিবর্তে আছে কুয়াশা উপেক্ষা করে বিচিত্র সব গরম পোশাকে শরীর ঢেকে জীবিকার সন্ধানে মানুষের ছুটে চলা। শহরের রাজপথে শীতের গান হলেও গরম চা ও পরোটার গন্ধে তাকেস অন গোপনে আত্মপ্রকাশ করতে দেখা যায়। কিন্তু শীতের সকালের প্রধান আকর্ষণ খেজুরের রস পায়েস ভাপা পিঠা পুলি পিঠা ইত্যাদির মন মাতানো গান শহরে বিরল।

About শাহরিয়ার হোসেন 4780 Articles
Shahriar1.com ওয়েবসাইটে আপনার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় যা কিছু দরকার সবকিছুই পাবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*