রচনা: সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার অথবা সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার

রচনা: সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার অথবা সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার

আজকে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আজকে আমাদের এই ওয়েবসাইটের যে রচনাটি নিয়ে আমরা আলোচনা করব, সেটি আপনারা আপনাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রায়ই এর সম্মুখীন হন। বলতে পারেন আজকের রচনাটি একটি জনসচেতনামূলক রচনা। সেইসাথে আজকের রচনাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে আজকের রচনা টা নিয়ে আলোচনা করা যাক:

সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার
অথবা সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার

প্রবন্ধ সংকেত: ভূমিকা সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকার উপসংহার।

ভূমিকা: বর্তমান সমাজে ঘর থেকে বের হলেই প্রত্যেক মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনা নামক আতংক তাড়া করে বেড়ায়। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে। যার ক্ষয়ক্ষতি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। জনসচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় সরকারি বেসরকারি পদক্ষেপই এই মহামারীকে রুখে দিতে পারে।

সড়ক দুর্ঘটনার রুপচিত্র: সড়ক দুর্ঘটনার কোন সময় পরিধি নেই, যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে এই অঘটন ঘটতে পারে। প্রতিনিয়ত অজস্র মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। কেউ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে গাড়ি চাপা পড়ে ধ্বংস হচ্ছে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ জীবনের নিশ্চয়তা ব্যাহত হচ্ছে প্রতি পদে গাড়ি চাপা পড়ে তার জীবনের সমস্ত সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ: বাংলাদেশ নানা রকম মেয়ে কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে নিম্নে সেগুলোর উপর আলোকপাত করা হলো:

অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট: আমাদের দেশের অধিকাংশ রাস্তাঘাট অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেছে এগুলোর অধিকাংশ ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য উপযুক্ত নয় তাছাড়া অধিকাংশ রাস্তায় শোরুম ও জনাকীর্ণ তদুপরি মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করায় অহরহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।

ট্রাফিক আইনের লংঘন: আমাদের দেশে অধিকাংশ চালক ট্রাফিক আইন মেনে চলে না। তারা গতিসীমা রোড সাইন এগুলোর কোনোটি তোয়াক্কা করে না ফলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে।

অদক্ষ চালনা: বাংলাদেশ অধিকাংশ চালকের প্রশিক্ষণ নেই। দুর্নীতির মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগাড় করে অনেকে রাতারাতি চালক হয়ে যায় এদের হাতে যানবাহন ও যাত্রী উভয়ই ঝুঁকির মুখে পড়ে।

ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন: বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে চলাচলকারি অধিকাংশ যানবহন যান্ত্রিকভাবে ত্রুটিযুক্ত। অধিকাংশ জানের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ কর্তৃক প্রদত্ত ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। ফলে ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।

ওভার লোডিংঃ ওভার লোড মানে ধারণক্ষমতার বেশি মাল বহন করা। ফলে চালকরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়।

অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং: সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে গাড়িগুলোর অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং কে দায়ী করা হয়। পুলিশ রিপোর্টেও বলা হয় অতিরিক্ত গতি ও চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া গাড়ি দ্রুতবেগে ব্রিজে ওঠার সময় দুর্ঘটনা ঘটার ইতিহাস অনেক রয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকার: সড়কপথে দুর্ঘটনা একেবারে নির্মূল করা কিছুতেই সম্ভব নয়। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশের স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য করণীয়-

১. বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিং নিষিদ্ধকরণ। আর এ জন্য গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেয়া উচিত।
২. ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

৩. লাইসেন্স প্রদানে জালিয়াতি প্রতিরোধ করতে হবে।

৪. লাইসেন্স প্রদানের আগে চালকের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করতে হবে।

৫. ফিটনেস, সার্টিফিকেটবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো প্রতিরোধ করতে হবে।

৬. পথচারীকে সতর্কভাবে চলাফেরা করা।

৭. অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন বন্ধ করা।

৮. মহাসড়কের পাশে হাট-বাজার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা।

৯. সড়ক দুর্ঘটনার শাস্তি অর্থাৎ সিআরপিসির ৩০৪ বি ধারায় শাস্তির মেয়াদ ৩ বছর থেকে ১০ বছর করা।

১০. সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আইনের ভূমিকা আরো বেশি সক্রিয় করা।

১১. প্রতিমাসে মহাসড়কে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যানবাহনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করা।

১২. প্রতিটি গাড়ির চালককে স্মরণ রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

১৩. সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, গাড়ি চালক সমিতি এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

উপসংহার: প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ কারোই কাম্য নয়। প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। আমরা সবাই চাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। সড়ক দুর্ঘটনা যতো বড় সমস্যা হোক না কেনো সকলের সামগ্রিক চেষ্টা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। যাতে আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়। সচেতন হতে হবে আমাদের সবাইকে। তাই আজ আমাদের স্লোগান হোক ‘নিরাপদ সড়ক চাই।’

About শাহরিয়ার হোসেন 4780 Articles
Shahriar1.com ওয়েবসাইটে আপনার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় যা কিছু দরকার সবকিছুই পাবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*