রচনা: টেলিভিশন অথবা টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা অথবা জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের গুরুত্ব

রচনা: টেলিভিশন অথবা টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা অথবা জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের গুরুত্ব

টেলিভিশন
অথবা টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা
অথবা জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের গুরুত্ব

প্রবন্ধ সংকেত: ভূমিকা- আবিষ্কার ও ব্যবহার- টেলিভিশনের উপযোগিতা বা গুরুত্ব- জ্ঞান বিস্তারে তথা জাতি গঠনে টেলিভিশনের ভূমিকা- টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষাদান- টেলিভিশনের অপকারিতা- বাংলাদেশ ও টেলিভিশন- উপসংহার।

ভূমিকা: আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে টেলিভিশন এক অনন্য আবিষ্কার। যে যন্ত্রের মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসে একই সাথে দূর-দূরান্তের কোনো তথ্য বা ঘটনার কথা শ্রবণ ও ছবি দর্শন করতে পারে তারই নাম টেলিভিশন। বর্তমানের বিজ্ঞানের আবিষ্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে টেলিভিশন। জাতীয় জীবনে টেলিভিশনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আবিষ্কার ও ব্যবহার: বিজ্ঞানীদের বহু বছরের সাধনা ও গবেষণার পথ ধরে ১৯২৫ সালে ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী বেয়ার্ড টেলিভিশন আবিষ্কার করেন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে যুগান্তকারী আবিষ্কারের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করে। প্রথমে সাদাকালো টেলিভিশন চালু হয়। পরে চালু হয় রঙ্গিন টেলিভিশন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ব্যবহার শুরু হয় ষাটের দশকে।

টেলিভিশনের উপযোগিতা বা গুরুত্ব: টেলিভিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে তাৎক্ষণিক অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। এর মাধ্যমে আমরা সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর খবর ও ছবি সহ তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে পাই। সাধারণত টেলিভিশনকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ধরা হলেও শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞান, দেশ বিদেশের খবরা খবর, দেশের নানা সমস্যার সমাধান, সমাজ ও অর্থনীতির উন্নয়ন বিষয়ক, নানা প্রকার আলোচনা-সমালোচনা, প্রতিবেদন ইত্যাদি অনুষ্ঠান টেলিভিশনে নিয়মিত প্রচার করা হয়।

জ্ঞান বিস্তার তথা জাতি গঠনে টেলিভিশনের ভূমিকা: বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ অশিক্ষিত। টেলিভিশন শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করে জাতিকে একটি স্বাক্ষর জনগোষ্ঠীতে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন স্তর অনুযায়ী আদর্শ পাঠ দান পদ্ধতি চালু করে টেলিভিশন শিক্ষা ক্ষেত্রে এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও কল্পনা শক্তির বিকাশ সাধন এর উদ্দেশ্যে টেলিভিশন দেশ ও জাতির সমকালীন সমস্যাবলীর উপর বিতর্ক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণের স্পৃহাকে জাগ্রত করার অন্যতম সহায়ক উপকরণ টেলিভিশন। একটি জাতি গঠনে নানা বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে ধীরে ধীরে উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে টেলিভিশনের সমকক্ষ আর কিছু নেই।

টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষাদান: টেলিভিশনে প্রদর্শিত অনুষ্ঠানমালায় তরুণ ও কিশোর সম্প্রদায়ই সর্বাধিক আকৃষ্ট হয়ে থাকে। টেলিভিশনের মাধ্যমে স্কুল- কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী দের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা দানের সম্পূরক হিসেবে ও টেলিভিশন ব্যবহৃত হতে পারে। দেশ-বিদেশের জ্ঞান- বিজ্ঞানের সাথে পরিচয় করানো ছাড়াও টেলিভিশন দেশের ও বিদেশের বিদ্যমান নানা সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে তথ্য পূর্ণ জ্ঞান দান করতে পারে। বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হচ্ছে।

টেলিভিশন এর অপকারিতা: সবকিছুরই একটি খারাপ দিক থাকে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদ হলেও টেলিভিশন অনেক ক্ষেত্রে অভিশাপ হিসেবেও চিহ্নিত হতে পারে। টেলিভিশনের কারণে ছেলে মেয়েরা অনেক সময় পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। টেলিভিশনে প্রদর্শিত কুরুচিপূর্ণ মারদাঙ্গা দৃশ্য সমাজে সন্ত্রাস ডেকে আনে। অনেক ক্ষেত্রে টেলিভিশনের মাধ্যমে অপসংস্কৃতির প্রসার ঘটানো হয়। অনেক অনুষ্ঠান যুব সমাজের নৈতিক মূল্যবোধ নষ্ট করে।

বাংলাদেশ ও টেলিভিশন: বাংলাদেশ টেলিভিশনের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর রামপুরায় আধুনিক টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপিত হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম ও খুলনায় দু’টি টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্রও খোলা হয়েছে।১৯৮১ সাল থেকে বাংলাদেশের রঙ্গিন টেলিভিশন চালু হয়। বাংলাদেশের সরকারি টেলিভিশন এর পাশাপাশি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, বাংলাভিশন, ইটিভি, বৈশাখী, এন টিভি, দুরন্ত টিভি ইত্যাদি অনেক চ্যানেল রয়েছে।

উপসংহার: টেলিভিশন একটি শক্তিশালী প্রচার মাধ্যম। টেলিভিশনের মাধ্যমে একটি জাতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞান লাভ করতে পারে। অতএব দেশ গঠনে জ্ঞানের প্রসারে শিক্ষার উন্নয়নে টেলিভিশন বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। তবে একে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে না পারলে জনগণ বিশেষত যুব সমাজের নৈতিক অধঃপতনও অনিবার্য হয়ে দেখা দিতে পারে।

About শাহরিয়ার হোসেন 4780 Articles
Shahriar1.com ওয়েবসাইটে আপনার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় যা কিছু দরকার সবকিছুই পাবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*