আমরা আজকে যে ভাব সম্প্রসারণ টি নিয়ে আলোচনা করব সেটি একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপযোগী একটি ভাব সম্প্রসারণ। ভাব-সম্প্রসারণ টিনিয়ে নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
ভাব সম্প্রসারণ:
সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা
আশা তার একমাত্র ভেলা
মূলভাব: মানব সংসারে কান পাতলেই শুনতে পাওয়া যায় বিক্ষুব্ধ সমুদ্রসম দুঃখ দৈন্যের আহাজারি। বিপদ সিন্ধু আমাদের চতুর্দিকে সর্বদাই প্রবহমান। আশায় বুক বেঁধে সে পাড়ি দিতে চায় সংসার-সমুদ্র। বৈচিত্র্যময় সমস্যাসংকুল পৃথিবীতে মানুষ জন্মগতভাবেই সমস্যায় জর্জরিত। জন্মের পরই সে প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে নিত্য-পরিচিতি লাভ করে। আর উন্মাদের মতো সুখ নামের সোনার হরিণের পেছনে ছোটে। প্রকৃত সুখ তার ভাগ্যে না জুটলেও আশায় তবুও বুক বাঁধে।
সম্প্রসারিত ভাব: এই পৃথিবীতে সকলেই একটি সুখী জীবনের প্রত্যাশা করে। আর এজন্য মানুষের প্রাণান্তকর প্রয়াস চিরদিনের। একই সাথে সবসময় মানুষ দুঃখ কে এড়িয়ে চলতে চায়। অথচ সুখ ও দুঃখ যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তরঙ্গহীন সাগর যেমন অকল্পনীয় । তেমনি দুঃখ ব্যতীত জীবন ও কল্পনা করা যায় না। সুখের আবেশ কাটতে না কাটতেই মানব জীবনের দুঃখের ঝাপটা লাগে। সাগরের উত্তাল ঢেউ কে উপেক্ষা করেই নাবিককে পাড়ি জমাতে হয় সমুদ্রপানে, তেমনি পৃথিবীর মুখ থুবরে পড়ে থাকলে চলে না। তাকে দুঃখকে জয় করে সুখের সন্ধান পেতে হয়।
মানুষের জীবনের চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। সে পথ নানা বাধাবিঘ্নে ভরা। তাতে আছে রোগশোক, অভাব-অনটন, দুঃখ-যন্ত্রণা। সংসাররূপ দুঃখ-সাগরে এ ধরনের অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা মানুষকে গ্রাস করতে চায়। এ পৃথিবী গদ্যময় অর্থাৎ দুঃখে পরিপূর্ণ। সর্বকালব্যাপী মানুষ সুখী হতে পারে না। পৃথিবীর দুঃখের তরঙ্গমালা মানুষকে বিপদগ্রস্ত করতে চায়। সেই উত্তাল দুঃখের সাগর মানুষ পাড়ি দেয় আশার তরণী ভাসিয়ে। মানুষ যেমন করে ভেলা ভাসিয়ে উত্তাল তরঙ্গ পাড়ি দেয়, তেমনি সংসার-সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের অবলম্বন আশার ভেলা। বাস্তবতা মেনে নিলে দুঃখের অমানিশা কেটে একদিন সুখের সোনালি সকাল জীবনে আসবেই_এ আশাতেই মানুষ স্বপ্ন দেখে।
দুঃখের দিনে আশাই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিসরে মানুষ জানে না, কখন তার দুঃখের অন্ধকার রাত পোহাবে। জানে না বলেই আশায় আশায় তার জীবন কেটে যায়। একসময় উপস্থিত হয় সে জীবন সায়াহ্নে। সারাটা জীবন তার দুঃখ, দৈন্য আর আশা-ভঙ্গের হতাশায় সমাচ্ছন্ন হয়ে যায়। তবুও আশার প্রদীপ জ্বলে নিরবচ্ছিন্ন। সুখের পায়রাগুলো ওড়াউড়ি করে আকাশজুড়ে। নতুন প্রত্যয়ে সে উদ্দীপ্ত হয়। সুখ ভোগের সব বাধা অতিক্রম করে সে এগিয়ে যেতে চায়।
সংসাররূপী সাগরে দুঃখের তরঙ্গমালার মারমুখী আক্রোশের মুখোমুখি আশা যেন ভেলার মতো আশ্রয় হিসেবে মানুষের জীবনে প্রতিজ্ঞাত। সহস্র প্রতিকূলতার আর দুঃখ-বেদনার বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাঁড়ায়। বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে আশার ভেলায় ভর করে। বাধাবিপত্তি ও তরঙ্গ অভিঘাতময় আমাদের জীবনের আশা যদি ভেলা হয়ে অকূল পারাপার পাড়ি দিতে সাহস না জোগাত, যদি আলোকরশ্মির ইঙ্গিত না দিত, তাহলে আমরা জীবনযুদ্ধে পরাজিত হতোদ্যম মানুষে পরিণত হতাম।
তাই আশায় বুক বাঁধা মানুষ অবশেষে খুঁজে পায় সুখ আর অনাবিল আনন্দ। তাই কবি বলেছেন_ ‘দুঃখের মন্থন বেজে উঠবে এই অমৃত শঙ্কা হতে রক্ষা পাবে যার মৃত্যুতীত’ সংসার-সমুদ্রে মানুষ অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছিনিয়ে নেয় জয়মাল্য। আশাই তাদের জীবনের একমাত্র হাতিয়ার। ফলে সে নির্ভয়ে বিপদ-সিন্ধু অতিক্রম করে জীবনকে সুষমামণ্ডিত করে তোলে।
মন্তব্য: সংসার সমুদ্রে মানুষ অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছিনিয়ে নেয় জয়মাল্য। আশায় তাদের জীবনের একমাত্র হাতিয়ার। মানুষ যখন চাওয়া-পাওয়া হতাশার দ্বন্দ্বে দোদুল্যমান ঠিক তখনই আশা মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায় সম্মুখ পানে। এমনই ভাবে নির্ভয় সে বিপদে সিন্ধু অতিক্রম করে জীবনকে সুষমামণ্ডিত করে তোলে।
Leave a Reply