উপরে উল্লেখিত যে ভাব সম্প্রসারণ তিনি আমরা আলোচনা করব, সেটি বিশেষ করে অষ্টম, নবম, দশম শ্রেণির উপযোগী ভাব-সমপ্রসারণ। আপনারা ইচ্ছা করলেই এরকম আরো অনেক সম্প্রসারণ আমাদের এই ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন।
সুসময়ে অনেকেই বন্ধু বটে হয়/ অসময়ে হায় হায় কেউ কারো নয়।
মূলভাব: হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা কিংবা সুখ-দুঃখে ভরা মানুষের জীবন। কিন্তু এসবের কোনটাই কখনও স্থায়ী হয় না। তাই কান্না বা দুঃখের পর সুখের দিন আসে। সুখময় দিনগুলো যখন মানুষ শুধু নিজে ভোগ করতে পারে কিংবা সবাইকে নিয়ে উপভোগ করে ঠিক তেমনি দুঃখের দিনেও মানুষ অন্যকে কাছে চায় বা তার সাহায্য কামনা করে। সময়ই প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় পাওয়া যায়। সুখের দিনে যারা বন্ধুত্বের হাত বাড়াই তারা প্রকৃত বন্ধু কিনা তা দুঃখের মুহূর্তে স্পষ্ট হয়ে যায়।
সম্প্রসারিত ভাব: সুসময়ে মানুষের বন্ধুর অভাব হয় না। সুসময়ে এমন অনেক লোক বন্ধু হিসেবে হাজির হয়, যাদেরকে আগে কখনো দেখা যেত না। বন্ধুর সুসময়ে এরা সর্বক্ষণ কাছে কাছে থাকে এবং প্রতিনিয়ত তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে। তাই জগতের সচ্ছল ও সম্পদশালী মানুষের বন্ধুর অভাব হয় না।
আমাদের এ বিচিত্র জীবনে মানুষ অন্যের সঙ্গে আনন্দের অংশীদার হতে চায় কিন্তু দুঃখের বা কষ্টের সময় তারা ঐ মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করে। তাই এই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই স্বার্থপর ও সুযোগ সন্ধানী। স্বার্থ সিদ্ধির আশায় বন্ধুর মুখোশ এঁটে সুসময়ের সঙ্গী হয়। স্বার্থ হাসিলের আশায় বন্ধু সেজে অনেকেই তোষামোদকারী ও চাটুকারের ভূমিকায় অভিনয় করে। কিন্তু দুঃসময় আসলেই এই বন্ধুই আবার দূরে চলে যায়।
পুষ্প থেকে মধু আহরণ শেষে মধুমক্ষিকা যেমন উড়ে যায়, তেমনি স্বার্থ হাসিলের পর অনেক বন্ধু বন্ধুত্বের কৃত্রিম সম্পর্ক ছিন্ন করে দূরে সরে যায়।
প্রকৃতিতে যখন ফুলের মেলা বসে, গাছে গাছে যখন সবুজ পাতার ছড়াছড়ি তখনই কোকিল আসে। শীতের মাঝে এই কোকিলকে আর পাওয়া যায় না। এদেরকে বলে বসন্তের কোকিল। ঠিক এমন সুসময়ের বন্ধু যারা তারাও বসন্তের কোকিলের মতোই সুযোগ সন্ধানী।
স্বার্থপর লোকেরা আনন্দময় দিনের ভাগ নিতে আসে কিন্তু দুঃখের দিনে বিদায় নেয়। এ শ্রেণীর বন্ধুরা প্রকৃত বন্ধু নয়। এরা স্বার্থপর ও কপট। এরা শত্রুর চেয়েও বিপজ্জনক।
বন্ধুকে বিপদে ফেলে যখন এরা চলে যায় তখন তাদের প্রকৃত রূপ ধরা পড়ে। প্রকৃত বন্ধুরা কখনো বিপদকালে সুসময়ে যার সাথে ছিলো তাকে ত্যাগ করে না। বরং বিপদেই বন্ধুর সাহায্যার্থে পাশে এসে দাঁড়ায়। সত্যিকার বন্ধুর সুসময় বলে কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। সে সব সময়ই বন্ধুর পাশে বন্ধুত্বের মহিমায় চির অম্লান।
ভ্রমরের মতো ফুলের মধু শেষ হলেই এর কাজ শেষ হয়ে যায় না। কৃত্রিম বন্ধুত্বের বন্ধনে নিজেকে শুধু স্বার্থ উদ্ধারের আশায় জড়িয়ে রাখে না। বন্ধুর বিপদে নিজের বিপদ মনে করেই তার পাশে থাকে সবসময় এবং সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এরাই প্রকৃত বন্ধু অসময়ে বা অভাবের সময় বন্ধুর কাছে থাকে। সুসময়ে বা প্রাচুর্যের সময় যারা ভীড় জমায় তারা কেউ প্রকৃত বন্ধু নয়।
মন্তব্য: দুঃখের সময় প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় স্পষ্ট হয়।একজন ভাল বন্ধু মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেক বন্ধুর উচিত বিপদের সময় বন্ধুর পাশে থেকে তাকে সাহায্য করা। এটাই হল সত্যিকার বন্ধুর যথার্থ পরিচয়।
শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে চেষ্টা করি প্রতিটি ভাব-সম্প্রসারণ সহজ সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করার। আজ উপরে যে ভাব সম্প্রসারণ নীতি নিয়ে আলোচনা করা হলো, তা আপনাদের নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। আমরা চেষ্টা করেছি এই ভাব-সম্প্রসারণ টি সহজ এবং সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করতে। আপনারা বেশি বেশি করে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং শিক্ষা বিষয়ক যে কোন তথ্য অল্প সময়ে খুব সহজেই খুজে পাবেন। আজ এই পর্যন্তই সবার সুন্দর ও আগামী পথচলা শুভ হোক এই কামনায়।
Leave a Reply