
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সৌন্দর্যময় শহর হচ্ছে সিলেট। সিলেটকে বাংলাদেশের অন্যতম আধ্যাত্মিক কেন্দ্র এবং সাংস্কৃতিক বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের রয়েছে মাজার রয়েছে এখানে; তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শাহজালাল (রঃ), হযরত শাহপরান (রঃ) এবং আরো অনেকের। সিলেট এন এম এ জি’র মত বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের জন্মস্থান।
এটি বাংলাদেশের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শহর। প্রকৃতি সিলেটকে আরও একটি বিশেষ অনুগ্রহ দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন, তা হল এখানকার প্রকৃতি। দেশ এবং বিদেশ থেকে বহু পর্যটক এখানে সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বেড়াতে আসেন। আপনি যদি সিলেট যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য সর্বোত্তম স্থান গুলোর বর্ণনা তুলে ধরছি।
মানুষ যখন তাদের ব্যস্ত সময় থেকে বিরতি নিয়ে প্রকৃতির সাথে নিবিড় ভাবে সময় কাটিয়ে অবসাদ দূর করতে চায়, তখন অনেকেই পর্যটন স্থান হিসেবে সিলেটকে বেছে নেয়। আপনি যদি সিলেট ভ্রমন করতে চান, তাহলে আমাদের দেওয়া পর্যটন কেন্দ্রগুলো আপনার চেকলিস্ট রাখতে পারেন। ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানের সাহায্যে সিলেট যেতে পারেন। সিলেটে পর্যটন স্থান এর অভাব নেই এইজন্য এই রচনাটি কে ক্রমান্বয়ে বিভক্ত করা হলো যাতে আপনারা আপনাদের ভ্রমণ সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে জেনে নিতে পারেন।
চা বাগান
সিলেটে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত চা বাগান রয়েছে। সিলেটে শহরে চল্লিশটির ও বেশি চা বাগান রয়েছে। যেহেতু চা বাগান উচু টিলা এবং নিয়মিত বৃষ্টি ছাড়া টিকে থাকতে পারে না, এই জন্য বোঝা যায় যে সিলেতে অনেক ছোট টিলা এবং পাহাড় রয়েছে। টিলাগুলো চা বাগান দিয়ে আচ্ছাদিত এবং পাহাড় গুলো অরণ্যে ভরপুর। তাছাড়াও সিলেটে পাহাড়, আনারস বাগান, লেবু বাগান, রাবার বাগান এবং ঘন জঙ্গল দিয়ে পরিপূর্ণ।
বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত হচ্ছে শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গল পর্যটকদের মনে গভীর ছাপ তৈরি করে এবং মানুষকে বার বার ফিরিয়ে নিয়ে আসে। ঢাকা থেকে ১৯০ কিলোমিটার দূরে সিলেট এবং সিলেট থেকে ৮৩ কিলোমিটার দূরত্ব শ্রীমঙ্গল। আপনি বাস, ট্রেন, ভাড়া করা জিপ বা গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল। শীত এবং বর্ষা হল শ্রীমঙ্গল দেখার ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময়।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য হল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এর প্রধান এবং প্রথম আকর্ষণ। প্রায় ৪৫০ এর বেশী প্রজাতির বিরল গাছপালা এবং অনেক বন্য প্রাণী আছে এখানে। এর মধ্যে রয়েছে হরিণ, বানর, অজগর, বিভিন্ন ধরনের পাখি, ঘুঘু এবং পাহাড়ি পতঙ্গ । উপযুক্ত গাইডের মাধ্যমে আপনি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে বনসমুহ ঘুরে দেখতে পারেন। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে পার্কটি মাত্র 8 কিমি দূরে এবং সহজে যাওয়া যায়। নীলকণ্ঠ টি কেবিন তার সাত রঙের চায়ের জন্য বিখ্যাত। এই অনন্য চায়ের প্রতিটি স্তরে আলাদা রঙ এবং স্বতন্ত্র স্বাদ রয়েছে। শ্রীমঙ্গল থেকে কালীঘাট রোড পর্যন্ত রিকশা ভাড়া পাওয়া যায়।
মাধবকুন্ড জলপ্রপাত
মাধবকুন্ড জলপ্রপাত জলপ্রপাত প্রেমীদের জন্য সিলেট অঞ্চলের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। বিশাল জলের স্রোত, বড় বড় পাথর এবং চারপাশের সবুজ বন মাধবকুণ্ডকে সত্যিই অনন্য করে তুলেছে। পর্যটকরা শান্ত জলে লাউঞ্জ বা সাঁতার কাটতে পারেন। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত বর্ষাকালে সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা লাভ করে।
লাউয়াছড়া জাতীয় পার্ক এর অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হল নীলকন্ঠ টি কেবিন এখানে সাতটি স্তর যুক্ত চা পাওয়া যায় অনেক মানুষ নতুনত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে এখানে আসেন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য সিলেটের অন্যতম প্রধান ভ্রমণ গন্তব্য মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের নিম্ন স্তর বড় বড় পাথর দিয়ে তৈরি এবং এর বিশাল জন স্রোত মাধবকুণ্ড সৌন্দর্যকে অতুলনীয় গড়ে তোলা পর্যটকরা চাইলে শান্ত জলে স্নান করতে বা সাঁতার কাটতে পারবেন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত উপভোগ করার সর্বোত্তম সময় হল বর্ষাকাল মাধবপুর লেক মাধবকুন্ড লেক অবস্থান চারিদিকে চা বাগান বেষ্টিত
এজন্য ই লিকে অভ্যন্তরীণ মাটির সাথে তুলনা করা যায় তাছাড়াও আশেপাশের পাহাড় দেখে পাহাড়ে উঠে দেখতে পরিবেশ দেখতে ভ্রমণকারীরা পছন্দ করেন শ্রীমঙ্গলে সবচাইতে ভালো খাবার রেস্তোরা হলো তাছাড়া আরও অনেক উন্নত মানের রেস্তোরাঁ পাবেন পুরো সিলেট জুড়ে তাছাড়াও থাকার জন্য বিলাসবহুল হোটেল বা মডেল বা রিসোর্ট পাওয়া যায় যেখানে আপনি বিভিন্ন রাজ্যের রেঞ্জার ভাড়া দিয়ে আপনার পর্যটন উপভোগ করতে পারবেন।
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট
লাউয়াছড়ার কাছে গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্টে পাঁচ তারকা মানের পরিষেবা রয়েছে। সুবিধার মধ্যে রয়েছে সুইমিং পুল, একটি গল্ফ ক্লাব এবং বিভিন্ন বিনোদন। লাউয়াছড়ায় আপনি যদি পাঁচ তারকা মানের হোটেল পরিষেবা চান তাহলে গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট হতে পারে আপনার পছন্দের আবাসন স্থান এখানে একটি গল্প ক্লাব, সুইমিং পুল এবং আরো অনেক বিনোদনের ব্যবস্থা পাবেন, গ্র্যান্ড সুলতান টি স্টোর রিসোর্টের একটি অংশ হচ্ছে মিউজিয়াম। এটি বাংলাদেশ চা বোর্ডের দ্বারা পরিচালিত একটি মিউজিয়াম।
এখানে অনেক ধরনের এবং বিভিন্ন মানের কটেজ রয়েছে। প্রত্যেকটি কটেজে চার থেকে আট জন মানুষ এর বিলাসবহুল আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে।
নভেম ইকো রিসোর্ট
শ্রীমঙ্গলের রাধানগরে অবস্থিত নভেম ইকো রিসোর্ট। এখানে থেকে অত্যাধুনিক আবাসন সুবিধা, মনোরম পরিবেশ, অভাবনীয় আতিথেয়তা এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এইগুলো কাঠের তৈরি অথবা পারিবারিক ধরনের কটেজ তাছাড়াও চাইলে তাবুতে থাকার ব্যবস্থা করা যায় এই এলাকায় রিসোর্টে সুইমিং পুল রেস্তোরাঁ এবং ব্যবসায়িক এলাকা রয়েছে।
রাতারগুল
বাংলাদেশের বর্তমান একমাত্র মিঠাপানির জলাভূমি হলো রাতারগুল। নিকট অতীতে রাতারগুল বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থাকলেও বর্তমানে জলাভূমি এবং অরণ্য মিলিয়ে সর্বমোট 2 বর্গ কিলোমিটার জায়গা রয়েছে। বনভুমি’র বেশিরভাগ স্থান কোরচ এবং হিজল গাছ দিয়ে আচ্ছাদিত। তাছাড়া রাতারগুল বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সাপ, বানর, এবং অনেক অন্যান্য সরীসৃপের অভয়ারণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
রাতারগুলের আসতে চলেছে আশ পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে তিনটি নদী। নদী তিনটির নাম হচ্ছে চোঙ্গার খাল, কাফনা এবং গুয়াইনঘাট। একসময় রাতুল রাতারগুল বর্ষায় তিনটি নদীর সাথে মিলিত হতো কিন্তু বর্তমানে স্থানটি সংকুচিত হয়ে এসেছে। নদীগুলোর পানি সংশ্লিষ্ট বনে প্রবেশ করে এবং বর্ষাকালে এই পানি ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতা লাভ করে। এখানকার পানি স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ যা পর্যটকদের অনাবিল আনন্দ দেয় এবং জলের উপর মেঘের ছায়া পর্যটক দের বার বার এখানে টেনে আনে।
বর্ষাকালে খুব ভোরে বা সন্ধ্যার দিকে রাতারগুল তার সেরা সাজ- সজ্জা পড়ে। তখন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং অন্যান্য প্রাণী দেখা যায় এবং এই দৃশ্য মনমুগ্ধকর। বর্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, পানি কমতে থাকে এবং তা ঘোলা হতে থাকে। শীতকালে যে কেও এখানে পায়ে হেঁটে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে পারে। রাতারগুল অবস্থিত হচ্ছে গোয়াইনঘাট উপজেলায়। তবে সিলেট শহর থেকে গোয়াইনঘাট যাবার রাস্তা খুবই সুবিধাজনক। সিলেট- কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়কের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে পৌঁছে যেতে পারেন রাতারগুল।
অনেক পর্যটকরা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাতারগুলের বিভিন্ন এলাকায় প্রকৃতি দেখতে যান। প্রত্যেকটি গ্রুপের কাছে সাধারণত একটি নৌকা থাকে। এই নৌকাতে চড়ে একই সাথে জলাভূমি এবং আশপাশের বন দেখে পর্যটকরা তাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। তাছাড়া পাশে রয়েছে অতিথি পরায়ন গ্রামবাসী। তাদের সরলতা সব মানুষকে কাছে টানে। ভ্রমণের নৌকাগুলো সাধারণত এক থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়, তবে কয়েকজন মিলে একটা নৌকা ভাড়া নিলে তুলনামূলকভাবে কম খরচে রাতারগুল ঘুরে আসা যায়। রাতারগুল যেতে চাইলে আপনার জন্য সুবিধা হবে হাতে সময় রেখে যাওয়া; তাহলে আপনি আপনার চারপাশের প্রকৃতি সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করে আসতে পারবেন।
আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক দর্শনীয় স্থান গুলো কি কি
সিলেটে রয়েছে অনেক আধ্যাত্মিক পীরের মাজার এবং ধর্মীয় সংস্কৃতির উচ্চস্তরের ব্যাক্তিবর্গের মাজার। হযরত শাহজালাল (র) এর মাজার হচ্ছে সিলেটের মাজারগুলোর মধ্যে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব বহনকারী। এটির অবস্থান সিলেটের দরগাগেটে এবং এটি জিন্দা বাজার থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে। এরপর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মজার হিসেবে স্থান পায় হযরত শাহপরান রহমাতুল্লাহ (র) এর মাজার। সিলেটের শাহাপরান বাজারের নিকটে এটি অবস্থিত এবং সিলেট থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটারের পথ। সিলেটে সুরমা নদী’র বিভিন্ন বাঁক এবং কূলসমূহ দর্শনীয় এবং ভ্রমণের উপযুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে চাঁদনীঘাট, শেখঘাট, কালীঘাট, কাজির বাজার ইত্যাদি।
সিলেট শহরে থাকলে আপনি দেখে আসতে পারেন আলি আমজাদ ক্লক টাওয়ার; এটিও জিন্দা বাজার থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সিলেট শহরের চারপাশে পাবেন বিভিন্ন চা বাগান, এই চা বাগানগুলো- এখানকার প্রক্রিয়াকরণ ও পরিবেশ দেখতে বিভিন্ন মানুষ এখানে আসেন। তাছাড়া শিশুদের জন্য রয়েছে ওসমানী শিশু উদ্যান যার অবস্থান সিলেটের ধোপাদীঘির পাশাপাশি যার কাছেই রয়েছে ওসমানী জাদুঘর। যদি আপনি কৃত্রিম রাইডের আনন্দ এবং ওয়াটার পার্ক এর মজা পেতে চান তাহলে ড্রিমল্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট এবং ওয়াটার পার্কে যেতে পারেন। এজন্য আপনাকে মাত্র সিলেট থেকে আধা ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হবে। সিলেটের বাকি স্থানগুলো এবং তাতে পর্যটন স্থানসমূহ নিচে দেয়া হল।
লালখাল
বাংলাদেশের প্রাচীনতম চা বাগান গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সিলেটের লালখাল চা বাগান। এটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর চা বাগান হিসেবেও খ্যাত। মেঘালয় পর্বতমালার নিকটবর্তী অবস্থিত এই চা বাগান বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্য হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এর স্ফটিক স্বচ্ছ জল উপভোগ করতে হাজারো দর্শক লালখাল ভিড় জমান। লাল দেখার সবচাইতে উপযুক্ত সময় হচ্ছে শীতকাল। শীতকালে এখানে জলের প্রবাহ খুব ধীর গতির হবার জন্য, পানি পরিষ্কার থাকে। তাছাড়া হাজার অতিথি পাখি শীতের সময় এখানে আশ্রয় নেয়।
পর্যটকরা অতিথি পাখি এবং শীতকালীন পাখি দেখতেও এখানে আসেন। লালখান থেকে সিলেট যেতে এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগে। আপনি যদি কম বাজেটে লালখাল যেতে চান, তবে সিলেট থেকে বাস বা লেগুনা নিতে পারেন। তাছাড়া কার বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে লালখান পৌঁছে যেতে পারেন। এসব ছারাও অনেক দর্শক জলপথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন এবং একই সাথে নিকটবর্তী পাহাড়ি সৌন্দর্য ও বন সমূহ উপভোগ করতে পছন্দ করেন। এজন্য অনেক দর্শকই স্পিডবোট নৌকায় করে লাল খাল যান। নৌকা গুলো সাধারণত ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার বিনিময়ে এবং স্পিডবোট গুলো ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে ভাড়া পাওয়া যায়।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা হলো লালখাল। এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বিখ্যাত শাড়ি গোয়াইন নদী। অসংখ্য বাঁক এবং অসংখ্য কুল নিয়ে নদীটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। নদীর কিনারা জুড়ে রয়েছে পাহাড়ি বন, অসংখ্য প্রজাতির বৃক্ষরাজি এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত চা বাগান সমূহ। ভারতের চেরাপুঞ্জির পানির ধারা থেকে নেমে আসা জল প্রবাহ দিয়ে উৎপন্ন সারি নদী। মূলত চেরাপুঞ্জির পানি এবং জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে আসা প্রবহমান খনিজ পদার্থসমূহ, সারি নদীর তলদেশকে পাথর দ্বারা পূর্ণ করে।
এই কারণে সারি নদীর নিম্নভাগ বা তট পাথর দিয়ে পরিপূর্ণ থাকে। বিভিন্ন রঙের পাথর এবং খনিজ পদার্থ পানিতে মিশে থাকার জন্য নদীর পানির রং পরিবর্তনশীল। যদিও বর্তমানে বিপুল পরিমাণ পাথর উত্তোলন এবং বন থেকে গাছ সংগ্রহ করার ফলে এখানকার প্রকৃতি এবং সৌন্দর্যের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। একই সাথে প্রকৃতির সাথে এরূপ বৈরি আচরণ করার জন্য নদীর পানির জলজ মান কমে যাচ্ছে এবং স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের রোগ ব্যাধির প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
লাল খেলা যদি আপনি রাত কাটাতে চান; তাহলে রিভার কুইন রেস্তোরাঁ আপনার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ গন্তব্য স্থান হতে পারে। তাছাড়া আপনি যদি অতি উন্নত মানের আতিথেয়তা এবং আপ্যায়ন পেতে চান তাহলে নজিমগড় উইল্ডার্নেস হচ্ছে আপনার জন্য উপযুক্ত রিসোর্ট। যদিও এই রিসোর্টের ভাড়া অনেক বেশি এবং এখানে রাত কাটানোর জন্য আপনাকে পূর্বে বুকিং করতে হবে।
জাফলং
জাফলং হলো সিলেটের একটি পাহাড়ি স্টেশন। এ অঞ্চলটি পাহাড় দিয়ে ঘেরা এবং সাথে রয়েছে অনেক চা বাগান, জলপ্রপাত এবং নদী সমূহ। জাফলং- এ খাসিয়া উপজাতির মানুষ বসবাস করে। জাফলং এর গ্রীষ্মকালীন পরিবেশ এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানকার নদী গুলোর মধ্যে রয়েছে পিয়াইন নদী। এই নদীটি বাংলাদেশ এবং ভারতে’র মধ্যে দিয়ে গমন করে। নদীর উপর থেকে দর্শকরা নদীর নিচে পাথর এবং মাছের চলাচল লক্ষ্য করতে পারে। মেঘালয় পাহাড়ের ঝরনা এই পথ দিয়ে নেমে আসে এবং এর চলন পথে ডাউকি নামে একটি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। ১৯৩২ সালে ইংরেজদের দ্বারা নির্মিত এই ঝুলন্ত সেতু’র এক অংশে রয়েছে ভারত এবং একাংশ রয়েছে বাংলাদেশের জাফলং এ।
এর সর্বাধিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে জাফলং আসতে হবে শীতকালে। এখানকার নদীগুলোর মূল আকর্ষণ হলো নদীর তলা পাথর দিয়ে বিস্তীর্ণ। পাথরগুল নানা রঙের, নানা আকারের এবং নানা ধরনের খনিজ পদার্থ দিয়ে তৈরি। পর্যটকরা এখানে পানির চকমকে স্বচ্ছতা উপভোগ করতে, গোসল করতে, সাঁতার কাটতে এবং বালিতে বিশ্রাম নিতে উপভোগ করেন। জাফলং এর খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন রকমের বৈচিত্র্যময় মনোহারি সামগ্রী বিক্রয় করে।
আপনার ভ্রমণের টোকন হিসেবে এগুলো আপনি সংগ্রহ করতে পারেন, যা পরবর্তীতে আপনাকে জাফলং এর স্মৃতির মনে করিয়ে দিবে। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে হেঁটে মাত্র দশ পনের মিনিটে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন। সোনাগ্রাম পুঞ্জি বা সোনাগ্রাম জলপ্রপাতে ঝরনা হিসেবে পরিচিত একটি জলপ্রপাত রয়েছে মাত্র ১০- ১৫ মিনিট দূরত্বে। এটি পর্যটকদের আনন্দ করার জন্য খুবই উপযুক্ত এবং পর্যটকদের চেকলিস্টে উপরের দিকে স্থান করে নেওয়া স্পটগুলোর একটি। পর্যটকরা সাধারণত শীতকালে জাফলং বেশি ভ্রমণ করেন তবে বৃষ্টির অভাবে এই সময় জলপ্রপাত গুলো পূর্ণ প্রবাহে থাকেনা। সিলেট হতে এক থেকে দেড় ঘণ্টার পথ হচ্ছে জাফলং। খুব অল্প খরচে মিনিবাসের মাধ্যমে জাফলংয়ে পৌঁছে যেতে পারবেন, তাছাড়াও ভাড়ায় পাবেন গাড়ি বা জিপ।
বিছানাকান্দি
ভারত এবং বাংলাদেশের মাঝেমাঝি অবস্থিত সিলেটের বিছানাকান্দি উপজেলা। এখানকার পর্বতমালা থেকে প্রবাহিত হচ্ছে স্বচ্ছ জলপ্রপাত, আছে পাহাড় ঘেরা সবুজ বৃক্ষ। দর্শনার্থীরা বনে হাইকিং করে, ঘুরে বেরিয়ে এবং পাথরের উপর শুয়ে থেকে বিশ্রাম নীয়ে দূর করতে পারেন ক্লান্তি। তাছাড়াও জলপ্রপাত এবং নদী সমূহ সাঁতার কাটতে পারেন। বিছানাকান্দিতে রয়েছে বর্ডার হাট নামে একটি বাজার। বাজারটি সবসময় খোলা পাওয়া যায় না, তবে যদি আপনি খোলা পান তবে সেখান থেকে খাসিয়াদের বিক্রি করা কাপড়, পাহাড়ি ফল ও প্রসাধনী কিনে আনতে পারেন।
সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত হল বিছানাকান্দি এলাকা ভ্রমণ এর জন্য সেরা সময়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এখানে প্রচুর পানি প্রবাহিত হয়, এজন্য এই সময় বিছানাকান্দি ভ্রমণ কষ্টকর এবং কিছুটা হলেও কম নিরাপদ। তবে সারাবছর আপনি নৌকায় ভ্রমণ করতে পারেন এবং পানি ও আশেপাশের সবুজ মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। সিলেট থেকে বিছানাকান্দি প্রায় এক ঘণ্টার পথ যা ৪০ কিলোমিটার দূরে। যাতায়াতের জন্য সিএনজি, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, নৌকা এবং মোটর বাইক পাওয়া যায়। বিভিন্ন বাজেটের মধ্যে যাতায়াতের জন্য আপনার উপযুক্ত ভ্রমণের বাহন খুঁজে নিতে পারেন। নতুন পর্যটকদের জন্য সতর্কতাঃ হলো যে, বর্ষাকালে জলে নামা’র সময় সতর্ক থাকা। কারণ প্রচুর স্রোত থাকায়, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান
সিলেটের হযরত শাহপরান মাজার থেকে খুব কাছেই অবস্থিত খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান। প্রায় ১৭০০ একর জায়গা জুড়ে এটি একটি বৃত্তাকার পাহাড় এবং প্রাকৃতিক বনভূমি। খাদিমনগর উদ্যানকে ২০০৪ সালে বাংলাদেশের একটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখানে বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণী লক্ষ্য করা যায়। এজন্য এই অঞ্চলকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংশোধনী বিধিমালার অন্তর্গত করা হয়। অন্যতম প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বনমানুষ, ভালুক, বন বিড়াল, প্যারাকিট, এবং অজগর। এখানকার জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ ইউএসএআইডি সমন্বিতভাবে সরকার এর সাথে কাজ করে থাকে।
এই পার্ক ভালভাবে ঘুরে দেখতে হলে আপনাকে অন্তত ৪ ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে আসতে হবে। এই পার্কে পর্যটকরা লম্বা সময় হাইকিং এ যেতে পারেন এবং একই সাথে ট্রাক রাইডিং এর মজাও নিতে পারেন। তবে সাথে একজন স্থানীয় গাইড নিয়ে ঘুরলে আপনার অনেক সুবিধা হবে। তাছাড়াও সাথে একটি ট্রেইল ম্যাপ ম্যাপ নিতে পারেন। অন্যান্য বিনোদনের জন্য রয়েছে দড়ি দিয়ে তৈরি কোর্স এবং জিপ লাইন রাইডিং।
লাইন রাইডিং দুটি গাছের সমন্বয়ে তৈরি করা ট্র্যাক। খাদিমনগর দেখার আদর্শ সময় হচ্ছে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস। শীতকালে এই এলাকার জলবায়ু উষ্ণ ও ভেজা থাকে, এজন্য এখানে ভ্রমণ এর সেরা সময় হল শীতকাল। এখানে খাবার ব্যবস্থা হিসেবে বেশকিছু সুন্দর রেস্তোরা রয়েছে; যেমন পানসী, স্পাইসি, বাগানবাড়ি, পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট, ইত্যাদি। এখানে আপনি তাবু ভাড়া করে বা তাবু খাটিয়ে রাত কাটাবার বাবস্থা করতে পারেন। তবে কাছেই নাজিমগড় গার্ডেন রিসোর্ট পার্ক এ রয়েছে উন্নত থাকার এবং খাবার ব্যবস্থা।
Leave a Reply