আজকে আমরা যে ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব সেটি এস,এসে,সি, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপযোগী একটি ভাব সম্প্রসারণ।
ভাব সম্প্রসারণ: স্বার্থমগ্ন যে জন বিমুখ, বৃহৎ জগৎ হতে সে কখনো শেখেনি বাঁচিতে
মূলভাব: সকলের সঙ্গে মিলেমিশে জীবন ধারণ এবং সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে এসে দাঁড়ানোর মধ্যেই জীবনের যথার্থ সার্থকতা নিহিত। মানুষের সামনে রয়েছে দুটি জগৎ। একটি তার স্বার্থের ক্ষুদ্র পৃথিবী, অন্যটি সমগ্র মানব সমাজকে নিয়ে তার বৃহৎ বিশ্ব। এ দুই পৃথিবীর দোলাচলে মানুষের মন কেবলি স্বার্থের অভিমুখী হয়ে পড়ে। কিন্তু জীবনের ক্ষুদ্র স্বার্থপরতার মধ্যে বেঁচে থাকার কোন সার্থকতা নেই।
সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের বাঁচার অর্থ শুধু তার শারীরিক অস্তিত্ব রক্ষা নয়। তার যথার্থ পরিচয় মনুষ্যত্বের বিকাশের মধ্যে। মানুষ যতই দেশ ও দশের জন্য আপন স্বার্থকে বিসর্জন দেয় ততই সে অন্যের হৃদয়ে অধিকার লাভ করে। একমাত্র এ পথেই মানুষের জীবন গৌরবান্বিত হয়ে উঠতে পারে। একক আত্মপ্রীতির যে জগৎ, মানুষ সেখানে অতি ক্ষুদ্র। মহাজীবনের সমগ্রতা থেকে বিচ্যুত হয়ে, সে তখন এক ভগ্নাংশ মাত্র। মানুষ যদি শুধু তার নিজের জন্য বাঁচত, যদি নিজের স্বার্থই তার কাছে একমাত্র সত্য হতো তবে পৃথিবীর আজকের সভ্যতা গড়ে উঠত না।
পৃথিবীর সভ্যতার মূলে আছে সংখ্যাতীত মানুষের আত্মত্যাগ এবং কর্মপ্রচেষ্টা। মানুষ শুধু নিজের জন্য বাঁচে না, অনেকের জন্য তাকে বাঁচতে হয়। এই বৃহৎ জগৎ এর মধ্যেই তার বাঁচার সার্থকতা। মানুষ যতই স্বার্থ ত্যাগ করে, ততই সে অপরের মধ্যে নিজের সত্তাকে প্রতিষ্ঠা করে তুলতে পারে। অন্যের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্যেই জীবন গৌরবান্বিত হয়ে ওঠে এবং বেঁচে থাকার সার্থকতা মন্ডিত হয়।
মানুষ সামাজিক জীব। সে কখনোই একা বাস করতে পারে না। সকলকে নিয়েই তার জীবন। কারণ মানুষ পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। মানুষের যথার্থ পরিচয় সবার মধ্যে সবার সঙ্গে বাঁচার মধ্যে। পরোপকারের মাধ্যমেই মানুষ আনন্দ লাভ করে। আর তখন সমাজ জীবন হয়ে ওঠে সুন্দর। কিন্তু সমাজের এক শ্রেণীর হীনমন্য মানুষ বাস করে যারা পরোপকারের চেয়ে নিজের স্বার্থের ব্যাপারে বেশি তৎপর। তারা নিজের স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে এবং পরের কল্যাণ সাধনের ব্যাপারে বিমুখ। স্বার্থমগ্ন মনুষ্যত্বের পরিপন্থী। স্বার্থপর ব্যক্তিগত জীবন থেকে স্বেচ্ছানির্বাসিত। পৃথিবীর ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, মঙ্গল-অমঙ্গল তার হৃদয় স্পর্শ করে না।
মানুষ যদি মানুষের উপকারে না আসে তবে তার জীবন ব্যর্থ। সে-জন্যে সত্যিকারের ভালো মানুষ বলতে তাকে বোঝায়, যে নিজের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে পরোপকারে নিয়োজিত থাকে। সে জানে স্বার্থসুখ সত্যিকারের সুখ নয়। জানে, পরের কারণে মরণেও সুখ। নিঃস্বার্থ মন নিয়ে পরের জন্য জীবন উৎসর্গ করে। সীমাহীন ভালবাসায় তার বুক ভরে ওঠে। সেই মহৎ মানুষ নিজের জন্য নয়, সে বিশ্ব মানবের জন্য নিবেদিত।
মন্তব্য: স্বার্থসর্বস্ব মানুষের স্থান এ পৃথিবীতে নেই। কারণ তারা নিজের স্বার্থের চিন্তায় বিভোর থেকে জগত সংসারের কথা ভুলে যায়। তাই এসব আত্মকেন্দ্রিক মানুষ সমাজের বোঝা, দেশ ও জাতির কলঙ্ক। বাঁচার মত বাঁচতে শিখেনি বলে এরা মৃতের সমতুল্য। পরিশেষে আমরা আরো বলতে পারি যে, পরার্থে জীবন উৎসর্গ করাই তো জীবনের চরম তৃপ্তি। নিজের দুঃখকে তুচ্ছ মনে করে অপরের কল্যাণে নিজকে নিয়োজিত করতে পারলেই জীবন সুখময় ও আনন্দময় হয়ে ওঠে।
উপরে আজকে যে ভাব সম্প্রসারণ কি নিয়ে আমরা আলোচনা করলাম তা আপনারা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের এই ওয়েবসাইটে শিক্ষা বিষয়ক সকল তথ্য গুলো কে সুন্দর এবং সাবলীল ভাষায় উপস্থাপনা করার যাতে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই বুঝতে পারে।
আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা বেশি বেশি করে আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন এবং আপনাদের সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য মতামত আমাদের এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানাবেন যাতে আমাদের ভুল ত্রুটিগুলো আগামীতে সুধরে আরো ভালো হবে আমাদের বিষয়বস্তুগুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি।
Leave a Reply