প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আপনাদেরকে আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাগত জানাই। করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষাব্যবস্থা আজকে ধ্বংসের মুখে। তারপরও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে আমাদের এই বিশ্ব। আস্তে আস্তে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে শিক্ষার অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার দিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। তাই তাদেরকে পিছিয়ে পড়া থেকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের এই ওয়েবসাইট কাজ করে যাচ্ছে। এখানে মূলত শিক্ষার ওপরই বিভিন্ন তথ্যমূলক বিষয়ের আলোচনা করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শ্রেণীর সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত বিষয় গুলোকে প্রাধান্য সহকারে দেখা হয়।
আজ আমরা বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ভাব-সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করবো। আর আজকে যে ভাব সম্প্রসারণটি নিয়ে আলোচনা করব সেটি মূলত নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় উপযোগী একটি ভাব সম্প্রসারণ।
ভাব সম্প্রসারণ: উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে, তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে
মূলভাব: উত্তম আর অধম পরস্পর এর বিপরীতে অবস্থান নিলেও তিনি মধ্যম তিনি উত্তম আর অধমের বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় সাধন করে জীবন চলার পথে অগ্রসর হতে চান।
সম্প্রসারিত ভাব: উত্তম কখনো অধম দ্বারা প্রভাবিত হয় না তাই অধমের পাশাপাশি চলতে তার সমস্যা নেই। কিন্তু অধম এর অভাবে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে মধ্যমের। সেজন্য তাকে সব সময় সচেতন ভাবে অধম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হয়। উত্তম স্বভাবতই দৃঢ় চিত্তে অধিকারী। তিনি একই সাথে সজ্জন ও মর্যাদাবান। যে অধম সে তার কর্মের জন্যই ছিল এবং ঘৃণার পাত্র। তার চরিত্রের কোন সন্দেহ নেই। কাজকর্মে সে সকলেরই অবজ্ঞা আর অবহেলার পাত্র।
অন্যদিকে, মধ্যম শ্রেণীর লোকজন দৃঢ় চিত্তের অধিকারী হন না। তাঁদের মধ্যে যেমন কিছু ভালো গুন থাকে, তেমনই থাকে কিছু মন্দ বৈশিষ্ট্য। তাঁরা সবসময় শংকিত থাকেন। উত্তম চরিত্রের মানুষকে দেখে তারা হীনমন্যতা এবং অপরাধবোধে ভোগেন। অধমের কাছ থেকে তাঁরা দূরে দূরে থাকেন। তাদের মধ্যে এই ভাবনা কাজ করে যে অধমের সংস্পর্শে এলে তারা হয়তো অধম হয়ে যেতে পারেন। এজন্য তাঁরা উত্তম এবং অধম উভয় শ্রেণীর লোককেই এড়িয়ে যান।
পৃথিবী অজস্র মানুষের সমারোহে প্রাণচঞ্চল। এ সব মানুষের ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস, অভ্যাস পৃথক। কিন্তু চাল-চলন, আচার ব্যবহারে সমগ্র মানবসমাজকে তিনটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা যায় উত্তম, মধ্যম, অধম। এদের শ্রেণি চরিত্র ভিন্নতর অভিধায় চিহ্নিত। উত্তম সকল ক্ষেত্রেই উৎকৃষ্ট। সকলের উপর তার অবস্থান।
অধম সকল ক্ষেত্রেই নিকৃষ্ট। সকলের নিচে তার অবস্থান। এই দুই শ্রেণি সম্পর্কে সমাজে স্পষ্ট ধারণা পোষণ করে। এই দুয়ের মধ্যবর্তী মধ্যম শ্রেণিকে নিয়েই সমস্যা। মানুষ এ শ্রেণিকে নিয়েই ভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। তাই সমাজ, তাদের ব্যাপারে সদা সতর্ক। কিন্তু যিনি উত্তম তাকে নিয়ে কারো কোনো ভয় বা শঙ্কা নেই। কারণ তার দ্বারা কোনো অকল্যাণ সাধিত হয় না।
অন্যদিকে যিনি উত্তম তিনি অধমের সাথে মিশতে ভয় পায় না। কারণ পাপীর পাপ তাকে স্পর্শ ও কলঙ্কিত করতে পারে না। যারা উত্তম তাদের মন ভোলানো ও অটল। হৃদয় বলে তারা বলিয়ান ধর্মবোধের তারা উজ্জীবিত তাদের স্পর্শ করতে পারে না।
পাপ-পঙ্কিলতা তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। চরিত্রগুণে সে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করে। তাই সব শ্রেণী- পেশার মানুষের সঙ্গে তাঁর সহজ অবস্থান লক্ষণীয়। সমাজ তাঁর ব্যাপারে শঙ্কামুক্ত। অধমের ক্ষেত্রেও মানুষ একইভাবে শঙ্কামুক্ত। কারণ সমাজ তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করে না। তার অসৎ চরিত্র, খারাপ মনোবাসনা, মন্দ কাজ সম্পর্কে সকলেই জ্ঞাত। তার কাছে প্রতারিত হবার ভয়ে সবাই সচেতন। কিন্তু মধ্যম শ্রেণি নিয়ে সবাই সব সময় সংশয়াপন্ন। মধ্যম নিজ শ্রেণি থেকে অধমে রূপান্তরিত হয় না, আবার উত্তমে ও উত্তরণ ঘটাতে অক্ষম।
শ্রেণিচ্যুতির আশঙ্কায় সতর্ক পদক্ষেপে তার অভিযাত্রা। দুর্বল মানসিকতা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, এ অভিযাত্রার সঙ্গী। প্রয়োজনে সে নিকৃষ্ট কাজ করে। আবার প্রয়োজনে কখনো কখনো ভালো কাজেও তার সরব উপস্থিতি। প্রকৃত পক্ষে এ শ্রেণি সুবিধাবাদী হবার ফলে জনসাধারণের প্রতারিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। বিশ্ব সমাজে ছদ্মবেশধারীর মতোই তার আচরণ। এ ধরণের শ্রেণি চরিত্রের কারণে অধম থেকে সে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে, উত্তমের সঙ্গেও প্রাণখুলে হাসতে, মেলামেশা করতে পারে না।
মন্তব্য: উত্তম ব্যক্তি সবদিক থেকেই উত্তম। তিনি তাই মধ্যম আর অধমের সাথে নিজ সহজে মিশতে পারেন। কারণ অবস্থান বিচ্যুতির ভয় তার নেই। কিন্তু মধ্যম কে উত্তম আর অধমের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয় নিজের চরিত্রের দোলাচল বৈশিষ্ট্যের জন্য।
Leave a Reply