পৃথিবীতে অসংখ্য জীব রয়েছে। এই জীব গুলির মধ্যে কোনোটি উদ্ভিদ আবার কোনটি প্রাণী। আবার উদ্ভিদ প্রাণীর মাঝামাঝিও কোন জীব রয়েছে যাদেরকে আমরা অণুজীব বলে থাকি। তাই এই অসংখ্য জীব বা প্রাণীদেরকে সহজে মনে রাখার জন্য শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বা জীবজগৎ কে সহজে আয়ত্ত করার নিমিত্তে একটি সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করার তাগিদেই জীব জগতের শ্রেণীবিন্যাসের উৎপত্তি হয়। আরেকটি দিক থেকেও শ্রেণীবিন্যাস করা হয় সেগুলি হচ্ছে প্রত্যেকটি প্রাণী অথবা উদ্ভিদেরই একেক দেশে বা একেক অঞ্চলে একেক ধরনের নাম হয়ে থাকে কিন্তু পৃথিবীর সকল জায়গা থেকেই একটি নামে যদি চেনা যায় তাদেরকে তাহলে বিজ্ঞানীদের জন্য গবেষণা কাজে অনেক সহজ হয়ে থাকে ।
এই ধরনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই জীববিজ্ঞানে শ্রেণীবিন্যাসের উদ্ভব হয়েছে। অল্প কথায় বলতে গেলে বলতে হয় শ্রেণীবিন্যাস বিদ্যান বিজ্ঞানের এই একটি শাখা। এই শাখাতে জীবজগতের বিভিন্ন ধরনের সদস্যদের সনাক্তকরণ ও নামকরণ করা হয়ে থাকে। শ্রেণীবিন্যাসের এই নামকরণকে বলা হয় দ্বিপদ নামকরণ আজ পর্যন্ত বিভিন্ন উদ্ভিদের প্রায় চার লক্ষ এবং প্রাণীর প্রায় ১৩ লক্ষ প্রজাতির নামকরণ ও বর্ণনা করা হয়েছে।
তবে এর সংখ্যা চূড়ান্ত নয় কেননা প্রায় প্রতিদিনই আরো নতুন নতুন প্রজাতির বর্ণনা সংযুক্ত হচ্ছে। অনুমান করা হয় ভবিষ্যতে সব জীবের বর্ণনা শেষ হলে যদি সত্যি কখনো শেষ করা যায় তখন একথা ভাবা যাবে এর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় এক কোটিতে। জানা বোঝা এবং শিক্ষার সুবিধার জন্য এই অসংখ্য জীবকে সুষ্ঠুভাবে বিন্যাস করা বা সাজানোর প্রয়োজন বলে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীগণ বা প্রাণিবিজ্ঞানীগণ মনে করেন।
সেই প্রয়োজনে তাগিদেই জীববিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা গড়ে উঠেছে যার নাম ট্যাক্সোনমি বা শ্রেণীবিন্যাস বিদ্যা। শ্রেণীবিন্যাসে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন সুইডিশ প্রকৃতি বিদ্যারলাস লিনিয়াস। তিনি ১৭৩৫ সালে পাঠশালা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রি লাভের পর তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমির অধ্যাপকের নিযুক্ত হন। তিনি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ বিশেষ করে ফুল সংগ্রহ করে জীবের শ্রেণীবিন্যাসে তার অনেক আগ্রহ ছিল।
সেই থেকে তিনিই প্রথম জীবের পূর্ণ শ্রেণীবিন্যাস এর এবং নামকরণের ভিত্তি প্রবর্তন করেন। শ্রেণীবিন্যাসের উদ্দেশ্য হলো প্রতিটি জীবের দল ও উপদল সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করা। জীবজগতের ভিন্নতার দিকে আলোকপাত করে আপহরিত জ্ঞানকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানকে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা এবং প্রতিটি জীবকে সনাক্ত করে তার নামকরণের ব্যবস্থা করা সর্বোপরি জীবজগৎ এবং মানব কল্যাণে প্রয়োজনীয় জীবগুলোকে সনাক্ত করে তাদের সংরক্ষণে সচেতন হওয়ায় শ্রেণীবিন্যাসের উদ্দেশ্য।
কেরোলাস লিনিয়াসের সময়কাল থেকেই শুরু করে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত জীবজগৎকে উদ্ভিদগত এবং প্রাণী জগত হিসেবে বিবেচনা করে দুইটি রাজ্যের শ্রেণিবিন্যাস করা হতো। বর্তমানে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় কোষের ডিএনএ এবং আরএনএ এর প্রকারভেদ জীবদেহে কোষের বৈশিষ্ট্য কোষের সংখ্যা ও খাদ্যাভাসের তথ্য উপাত্যের উপর ভিত্তি করে আর এইচ হুইটেকার ১৯৬৯ সালের জীবজগৎ কে পাঁচটি রাজ্য বা ফাইভ কিংডমে ভাগ করার প্রস্তাব দেন।
এরপরে মারকুলিস 1974 সালের হুইটেকার এর শ্রেণীবিন্যাসের পরিবর্তিত ও বিস্তারিত রুপ দেন। তিনি সমস্ত জীবজগৎকে দুইটি সুপার কিংডমে ভাগ করেন এবং পাঁচটি রাজ্যকে এই দুটি সুপার কিংডমের আওতাভুক্ত করেন বলে জানা যায়। শ্রেণীবিন্যাসের প্রতিটি ধাপে তার আগের ধাপের বৈশিষ্ট্য গুলোর সাথে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়। যত উপরের ধাপ তার অন্তর্ভুক্ত বৈশিষ্ট্যের সংখ্যা তত কম এবং অন্তর্ভুক্ত জীবের সংখ্যা তত বেশি আবার যত নিচের ধাপ তার অন্তর্ভুক্ত বৈশিষ্ট্যের সংখ্যা তত বেশি এবং অন্তর্ভুক্ত জীবের সংখ্যা তত কম।
বিজ্ঞানীগণ একটি জীবকে প্রজাতি পর্যায়ে শ্রেণীবিন্যাসের মূলত আন্তর্জাতিক কোড চিহ্নিত সাতটি ধাপ আছে। এই ধাপ গুলি হল রাজ্য পর্ব ও শ্রেণীবর্গ গোত্র গন এবং প্রজাতি। তাহলে চলুন এখন দেখা যাক শ্রেণীবিন্যাসের জনক কে।
শ্রেণীবিন্যাসের জনক: ক্যারোলাস লিনিয়াস।
শ্রেণীবিন্যাসে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ক্যারোলাস লিনিয়াস কেই শ্রেণী বিন্যাস এর জনক বলে অভিহিত করা হয়।
Leave a Reply