
জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে, সে জাতির নাম মানুষ জাতি;
একই পৃথিবীর স্তন্যে লালিত, একই রবি-শশী মোদের সাথী
অথবা
সকল জাতই সৃষ্টি যে তার এ বিশ্বমায়ের বিশ্বময়, মায়ের ছেলে সবাই সমান তার কাছে নাই আত্মপর।
মূলভাব: মানুষের কোন জাতি ভেদ নেই, মানুষের কোন জাতিভেদ থাকতে পারে না। পৃথিবীর যেকোনো দেশের আদিবাসী হোক, মানুষের একমাত্র পরিচয় হলো সে মানুষ।
সম্প্রসারিত ভাব: পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষ “আশরাফুল মাখলুকাত” অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা। অন্যদিকে, বাইবেলে আছে, “God made man after His own image.” প্রতিটি ধর্মেই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। স্রষ্টার সৃষ্টিতে জাতি, ধর্ম, বর্ণের কোনো ভেদাভেদ নেই। কিন্তু মানুষ রচনা করেছে মানুষে মানুষের কৃত্তিম জাতি, সৃষ্টি করেছে ঘৃণ্য জাতিভেদ। ভেদবুদ্ধি- প্রণোদিত স্বার্থপর মানুষ সৃষ্টি করেছে মানুষ মানুষের বিভেদের দুর্ভেদ্য প্রাচীর; এবং জগতে যত দ্বন্দ্ব-সংঘাত যত কলঙ্কময় রক্তপাত তার মূলে আছে এই অবাঞ্চিত মানসিক ভেদ-বৈষম্য।
মহান সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক মানুষকেই মেধা, মনন ও হৃদয় এর সমন্বয়ে অনন্য সাধারণ করে সৃষ্টি করেছেন। সভ্যতার শুরু থেকে এ পর্যন্ত মানুষ প্রতিটি পর্যায়ে তার এই শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়ে আসছে। মূলত মানবগোষ্ঠীর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আলাদা আলাদা কোনো পরিচয় নেই। প্রকৃতপক্ষে, মানুষের একমাত্র পরিচয় হলো সে মানুষ। সে পৃথিবীর যেকোনো দেশের অধিবাসী হোক, যেকোনো ধর্মাবলম্বী হোক, সাদা-কালো-তামাটে যে বর্ণের হোক, ধনী-গরীব যে শ্রেণীরই হোক, নারী হোক কিংবা পুরুষ এগুলো তার প্রকৃত পরিচয় নয়।
তার সত্যিকার পরিচয় হচ্ছে মানব পরিচয়। বৈষ্ণব কবি চন্ডীদাস তাই যথার্থই বলেছেন- “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই।” কিন্তু নিচু মনের অধিকারী মানুষেরা এই সত্যকে মানতে চায় না। পৃথিবীতে আমরা যত সংঘাত, দ্বন্দ্ব, রক্তপাত যা কিছুই দেখছি এগুলো সবই মানুষই সৃষ্টি করেছে। মানুষ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ জাতি। সকল মানুষের একইভাবে জীবন যাপনের অধিকার আছে, কিন্তু মানুষ নিজেরাই ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ তৈরি করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অপমান করছে। তারা নিজেদের স্বার্থে পৃথিবীতে জাতভেদ, বর্ণবৈষম্য, শ্রেণিবৈষম্য প্রভৃতি কুপ্রথা তৈরি করেছে।
এ ধরণের স্বার্থপর মানুষেরা নিজেদের অর্থ-বিত্তের দম্ভে দরিদ্র, অসহায় মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সমাজে কৃত্রিম শ্রেণিবৈষম্য তৈরি করতে সচেষ্ট। সকল মানুষ একই পৃথিবী হতে উৎপন্ন খাদ্য গ্রহণ করে, একই চন্দ্র, সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়। তাই প্রকৃতপক্ষে মানুষের আলাদা কোনো জাতি, ধর্ম, বর্ণ পরিচয় নেই; মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এটিই তার সর্বশ্রেষ্ঠ এবং একমাত্র পরিচয়।
মন্তব্য: সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে যে সমগ্র পৃথিবীতে, সর্বকালে সব মানুষের একটি মাত্র জাতি, যার নাম মানুষ জাতি। ধর্ম বর্ণের পার্থক্য করা উচিত নয়।
উপরোক্ত যে ভাব সম্প্রসারণ টি নিয়ে আলোচনা করা হল নিশ্চয়ই আপনাদের ভাল লেগেছে। আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটের যতটুকু পেরেছি সুন্দর সহজ এবং ভাবে উপস্থাপনা চেষ্টা করেছি। আপনারা বেশি বেশি করে এই ওয়েবসাইট পেজে ভিজিট করুন এবং অন্যান্যদের ভিজিট করতে বলুন। আমরা বাংলা ব্যাকরণ এর আরো অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিশদ আকারে এই ওয়েবসাইট পেজে আলোচনা করব।
আমাদের এই ওয়েবসাইট আপনাদের রেগুলার পাঠ্যপুস্তক এর পাশাপাশি সহায়ক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা বিভিন্ন অনলাইনের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি অবশ্যই আপনাদের নির্ধারীত পাঠ্যপুস্তক পড়বেন। আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত থাকলে অবশ্যই আমাদের এই ওয়েবসাইটে জানাবেন।
Leave a Reply